ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত লোক কারা?

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ধ্বংস প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপাচারীর জন্য, ছবি: সংগৃহীত

ধ্বংস প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপাচারীর জন্য, ছবি: সংগৃহীত

এই দুনিয়ায় মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধনসম্পদ, পদমর্যাদা, চাকরি কিংবা প্রিয়জনকে হারিয়ে মানুষ সাময়িক ক্ষতির সম্মুখীন হন। মানুষের এসব ক্ষতি চিরস্থায়ী নয়, সাময়িক। মানুষের স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে পরকালীন ক্ষতি।

পরকালীন জীবনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিভিন্ন স্তর রয়েছে। কেউ তার ক্ষতির পরিণাম ফল ভোগ করবে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত, কেউ তার ক্ষতির পরিণাম ফল ভোগ করবে চিরকাল। চিরকাল ক্ষতিগ্রস্থ যারা তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত।

বিজ্ঞাপন

ধ্বংসপ্রাপ্তদের পরিচয় সম্পর্কে কোরআনে কারিমে অনেক আয়াত বর্ণিত হয়েছে। ওই সব আয়াতে ধ্বংসপ্রাপ্তদের পরিচয় সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন-
এক. ধ্বংস প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপাচারীর জন্য। -সূরা জাসিয়াহ: ৭
দুই. ধ্বংস তার, যে (মানুষের) পেছনে অপবাদ রটায়। -সূরা হুমাযাহ: ১
তিন. ধ্বংস তার, যে (মানুষকে) সামনে অপমানিত করে। -সূরা হুমাযাহ: ১
চার. ধ্বংস তার, যে সম্পদ জমা করে এবং তা গুনে গুনে রাখে। সূরা হুমাযাহ: ১-২

পাঁচ. ধ্বংস সে সব নামাজির, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন। -সূরা মাউন: ৪
ছয়. ধ্বংস তাদের, যারা পরিমাপে কম দেয়। -সূরা মুতাফফিন: ১
সাত. ধ্বংস ওই সব মিথ্যারোপকারীর, যারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে। -সূরা মুতাফফিন: ১০-১১
আট. ধ্বংস তাদের জন্য, যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং সামান্য মূল্য লাভের জন্য বলে এটা আল্লাহর নিকট হতে। -সূরা আল বাকারা: ৭৯

বিজ্ঞাপন

নয়. ধ্বংস ও কঠিন শাস্তি ওই সব কাফেরদের জন্য নির্দিষ্ট, যারা পরকালের তুলনায় দুনিয়াকে অগ্রাধিকার দেয় এবং আল্লাহর পথ হতে লোকদেরকে বাঁধা প্রদান করে। -সূরা ইবরাহিম: ২-৩
দশ. ধ্বংস তাদের, যারা মহান দিবসের উপস্থিতিকে অস্বীকার করে। -সূরা মারইয়াম: ৩৮

এগারো. ধ্বংস ওই সব লোকদের, যারা আল্লাহ সম্পর্কে অযথা মিথ্যা কথা বানায়। -সূরা আম্বিয়া: ১৮
বারো. ধ্বংস ওই সব কাফেরদের, যারা ধারণা করে আসমান, জমিন ও এর মাঝে যা কিছু আছে, আল্লাহ সেগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেছেন। -সূরা সাদ: ২৭

তেরো. ধ্বংস তাদের, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর হয়ে গেছে। -সূরা যুমার: ২২
চৌদ্দ. ধ্বংস তাদের, যারা আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে। -সূরা হামিম আস সাজদা: ৬

এই শ্রেণির লোক ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত। তারা চিরকালের জন্য জাহান্নামি হবে। আরেক শ্রেণির লোক আছে, যারা আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া এবং অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত। ওই সব লোক হলেন- যারা বিভিন্ন অন্যায়-অপরাধের মধ্যে ডুবে থাকে, অন্যের প্রতি জুলুম-অত্যাচার করে, আর ভাবে, অপরাধী ও জালেমদের যে ভয়াবহ পরিণতির কথা কোরআন ও হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে তা কোথায়? আমরা তো অনেক অন্যায়-অপরাধ ও জুলুম-অত্যাচার করে বেড়াচ্ছি, কিন্তু আমাদের তো কিছুই হচ্ছে না!

এ শ্রেণির লোকদের সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, তারা কি আল্লাহর পাকড়াওয়ের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে? বস্তুত আল্লাহর পাকড়াও থেকে তারাই নিশ্চিন্ত হয়, যাদের ধ্বংস ঘনিয়ে আসে। -সূরা আরাফ: ৯৯

আরেক শ্রেণির ক্ষতিগ্রস্ত লোক আছে, যারা ঈমান এনেছে বলে দাবি করে, সেই সঙ্গে তারা ইবাদত-বন্দেগিও করে। কিন্তু তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বের সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগি করে, যদি তাদের কোনো কল্যাণ অর্জিত হয়, তাহলে তারা ইবাদত-বন্দেগি করে, আর যদি তাদের কোনো বিপদ আক্রান্ত করে, তাহলে তারা দ্বীন ইসলামের সত্যতার ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়ে। তারা ভাবে, দ্বীন ইসলাম যদি সত্য হয়; তাহলে আমরা কেন এসব বিপদাপদে আক্রান্ত হচ্ছি? তাদের সম্পর্কে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করে। যদি তার কোনো কল্যাণ লাভ হয়, তাহলে সে ইবাদত-বন্দেগির ওপর কায়েম থাকে। আর যদি তাকে কোনো বিপদ আক্রান্ত করে, তাহলে সে পূর্বাবস্থায় (কুফরির দিকে) ফিরে যায়। সে ইহকালে ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি।’ -সূরা হজ: ১১