কুসংস্কারে বিশ্বাস করা পাপ

  • মাওলানা আবদুস সাত্তার, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কুসংস্কারে বিশ্বাস করা পাপ, ছবি: সংগৃহীত

কুসংস্কারে বিশ্বাস করা পাপ, ছবি: সংগৃহীত

আমাদের সমাজ জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কুসংস্কারজনিত অন্ধ বিশ্বাস সংক্রামক ব্যাধির ন্যায় ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু ইসলামে কুসংস্কারের কোনো স্থান নেই। এই কুসংস্কারের জন্য আল্লাহর ওপর আস্থা, ধর্মবিশ্বাস এবং আল্লাহর প্রতি পরম নির্ভরতা বা তাওয়াক্কুল বহুলাংশে লোপ পায়।

কুসংস্কার হলো ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে একটি প্রচলিত নিয়মবিধি। যার প্রতি মানুষ অন্ধবিশ্বাস স্থাপন করে এবং জীবনের কর্মক্ষেত্রে এ বিশ্বাসকে আশ্রয় করে ধাবিত হয়। সাধারণত গ্রামীণ লোকাচারে এ ধরনের বিশ্বাসজাত কুসংস্কার বেশি দেখা যায়। আমাদের বিবিধ আচার অনুষ্ঠানেও দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে এই কুসংস্কার তথা কুপ্রথার প্রচলন রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

যেমন- যাত্রাকালীন সময়ে শুভ-অশুভ মেনে চলা, পশু-পাখির ডাক, সৌর জগতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং হস্তরেখা নির্ণয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করা ইসলামে গর্হিত কাজ ও কুসংস্কারের আওতাভুক্ত।

আল্লাহতায়ালা ও নবী করীম (সা.) এই কুসংস্কারজনিত বিশ্বাসকে হারাম বলে অভিহিত করেছেন। এটি শিরক ও পৌত্তলিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সকল মঙ্গল-অমঙ্গলের শক্তি ও ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহতায়ালা। এই ঈমান ও বিশ্বাস প্রতিটি মুমিন মুসলমানের অন্তরে সুদৃঢ় থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শুভাশুভ লক্ষণ ও দিনক্ষণ ঠিক করা এবং কুসংস্কারজনিত অন্ধ বিশ্বাসকে আঁকড়ে থাকা বা বিচার করা শিরিকি পৌত্তলিকতার পর্যায়ভুক্ত। -মিশকাত

যাত্রাকালীন সময়ে টিকটিকির ডাক, কাকের ডাক, পশু পাখির ডাক, গ্রহ-নক্ষত্র-চন্দ্র-সূর্যের প্রতি অলীক বিশ্বাস এবং খালি কলসি দেখে রওয়ানা হওয়া, ডিম খেয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া, যাত্রাকালে হোঁচট খাওয়া, রাশিফল নির্ণয় করে প্রতিদিনের কর্মক্ষেত্রে গমন করা এসবও কুসংস্কারের বহিঃপ্রকাশ। শুধু তাই নয়, আমাদের মুসলিম সমাজের অনেক বিয়ে-শাদিতে ধান-দুব্বা দিয়ে বহু রঙা কুলোয় বর-কনেকে বরণ করা বা গোসল করানো, ইসলাম ও শরিয়তের পরিপন্থি কবরে বাতি জ্বালানো, ফুল ছড়ানো, মহররম ও শবে বরাতে আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর মতো কুসংস্কার আমাদের সমাজ ও ব্যক্তি জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।

আবু দাউদ শরিফের এক হাদিসে উল্লেখ আছে, অশুভ লক্ষণ মানা শিরক। রাসূলুল্লাহ (সা.) একথা তিনবার উচ্চারণ করেছেন।

মেশকাত শরিফে একটি ঘটনা উল্লেখ আছে, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)! আমরা এক বাড়িতে অবস্থান করতাম। সেখানে আমাদের সন্তান-সন্তুতি ও ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছিল, অতঃপর আর এক বাড়িতে গেলাম, সেখানে আমাদের সন্তান-সন্তুতি ও ধন-সম্পদ হ্রাস পেল। রাসূলুল্লাহ (সা.) একে অস্বস্তিকর জায়গা বলে অভিহিত করেন।

কুসংস্কারে বিশ্বাস স্থাপন, কোনো কিছুর প্রতি কুলক্ষণ ভেবে মন-মানসিকতা তৈরি করা বা তার প্রতি আস্থাশীল হওয়া পাপ। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে উল্লেখ আছে যে, গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট লোক আল্লাহর রহমত হতে অনেক দূরে অবস্থান করবে। কারণ তারা আল্লাহ-রাসূলের নীতি আদর্শ বিরোধী অলীক ধ্যান-ধারণায় গ্রেফতার হয়ে আছে।

কুসংস্কারের প্রভাবে পড়ে যারা এহেন অলীক কল্পনাপ্রসূত কুরীতিগুলো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে আসছে, পবিত্র কোরআন ও হাদিসের মতাদর্শ বহির্ভূত নতুন নতুন ভ্রান্ত ধারণাকে সৃষ্টি ও প্রচলন রাখার জন্যে সচেষ্ট রয়েছে, তাদের সম্পর্কে তিরমিজি ও আবু দাউদে উল্লেখ আছে যে, এ ধরনের নব নব পন্থা উদ্ভাবন করা কিংবা নতুন কিছু সৃষ্টি বা প্রচলন করা গোমরাহি। এ ধরনের পথভ্রষ্টদের পরিণামে দোজখে শাস্তিভোগ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে, যারা স্বেচ্ছায় পাপের পথের প্রতি আসক্ত হয়, নিশ্চয়ই যাক্কুম বৃক্ষ তাদের আহার্য হবে, গলিত তামার ন্যায় এবং চামড়া গদ্ধকারী ফোটানো পানির ন্যায়, যা তাদের পেটের ভেতরে ফুটতে থাকবে।