যে আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, সে দোজখে যাবে না
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সর্বশেষ নবী। দুনিয়াতে যারা তার দেখানো পথে চলবে, পরকালে তারাই জান্নাতে যাবে। তারাই জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। আমরা তার উম্মত। আমরা তার দেখানো পথে চলি, সঠিক পথের জন্যে তিনি আমাদের কাছে দু’টি জিনিস রেখে গেছেন। একটি হলো- আল্লাহর কোরআন, অপরটি হলো- তার সুন্নত।
নবীর সুন্নত সম্পর্কে জানা যায় হাদিস থেকে। হাদিসের অনেকগুলো বড় বড় গ্রন্থ আছে। নবীর বাণীকে হাদিস বলে। নবীর কাজ-কর্ম এবং চরিত্রের বর্ণনাকেও হাদিস বলে। নবীর সমর্থন এবং আদেশ নিষেধের বর্ণনাকেও হাদিস বলে। ইসলামের সত্য ও সঠিক পথকে জানার জন্যে আমাদেরকে আল্লাহর বাণী কোরআনে কারিমকে বুঝতে হবে এবং মানতে হবে। ঠিক তেমনি আমাদেরকে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী হাদিস পড়তে হবে এবং সে অনুযায়ী চলতে হবে।
তবেই আল্লাহতায়ালা খুশি হবেন আমাদের প্রতি। আমরা হতে পারবো সত্যিকারের মুসলিম। আর এ লক্ষে আমরা এখানে সংকলন করেছি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু হাদিস।
ঈমান থাকার লক্ষণ
এক. তুমি মুমিন হবে তখন, যখন তোমার ভালো কাজ তোমাকে আনন্দ দেবে, আর মন্দ কাজ দেবে মনোকষ্ট। -আহমদ
ইসলাম
এক. সব কাজের আসল কাজ হলো-‘ইসলাম।’ -আহমদ
দুই. কোনো বান্দা ততোক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম হয় না, যতোক্ষণ তার মন ও জবান মুসলিম না হয়। -মিশকাত
পবিত্রতা
এক. পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। -সহিহ মুসলিম
দুই. যে পূত-পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পূত-পবিত্র রাখেন। -সহিহ বোখারি
জ্ঞানার্জন
এক. রাত্রে ঘন্টাখানেক জ্ঞান চর্চা করা সারারাত জেগে (ইবাদতে নিয়োজিত) থাকার চেয়ে উত্তম। -দারেমি
দুই. যে জ্ঞানের সন্ধানে বের হয়, সে আল্লাহর পথে বের হয়। -তিরমিজি
তিন. আমার পরে সবচেয়ে বড় দানশীল সে, যে কোনো বিষয়ে জ্ঞান লাভ করলো, অতপর তা ছড়িয়ে দিলো। -বায়হাকি
সর্বোত্তম জীবন পদ্ধতি
এক. সর্বোত্তম জীবন পদ্ধতি হচ্ছে নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রদর্শিত পদ্ধতি। -সহিহ মুসলিম
দুই. যে আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহর আনুগত্য করলো। -সহিহ বোখারি
তিন. যে আমাকে অমান্য করলো, সে আল্লাহকে অমান্য করলো। -সহিহ বোখারি
চার. যে আমার সুন্নতকে ভালোবাসলো, সে আমাকে ভালোবাসলো। -সহিহ মুসলিম
পাঁচ. যে আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হলো, সে আমার লোক নয়। -সহিহ মুসলিম
ছয়. আমি আল্লাহর কাছে শেষ নবী হিসেবে লিখিত আছি। -শরহে সুন্নাহ
নিয়্যত
এক. কাজ নির্ভর করে নিয়তের ওপর। -সহিহ বোখারি
নোট: নিয়ত মানে উদ্দেশ্য, সংকল্প, ইচ্ছা। কোনো নির্দিষ্ট কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া। ‘কাজ নির্ভর করে নিয়তের ওপর’ মানে কাজের পেছনে মানুষের যে উদ্দেশ্য, সংকল্প বা সিদ্ধান্ত থাকে, তার ভিত্তিতেই সে ফল ও পুরস্কার লাভ করবে।
দুই. প্রত্যেক ব্যক্তি তার কাজের সেই ফলই পাবে, যা সে নিয়ত করেছে। -সহিহ বোখারি
তিন. আল্লাহ তোমাদের চেহারা সুরত ও ধনসম্পদ দেখবেন না, তিনি দেখবেন তোমাদের অন্তর ও কাজ। -সহিহ মুসলিম
নোট: এখানে অন্তর মানে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বা নিয়ত।
এই তিনটি হাদিস থেকে আমরা মানব জীবনে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বা নিয়তের গুরুত্ব জানতে পারলাম। সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই যাবতীয় কাজ করা উচিত।
নৈতিক চরিত্র
এক. মহত চরিত্রের পূর্ণতা দানের জন্যে আমার আগমন। -মুআত্তায়ে ইমাম মালিক
হাদিসে বণির্ত শব্দ 'আখলাকুন' ও 'খুলুকুন' মানে হলো-নৈতিক চরিত্র, ব্যবহার, আচার-আচরণ।
দুই. উত্তম চরিত্রের চাইতে বড় মর্যাদা আর নেই। -ইবনে হিব্বান
তিন. ঈমানের পূর্ণতা লাভকারী মুমিন তারা, যাদের নৈতিক চরিত্র সর্বোত্তম।-মিশকাত
চার. তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানুষ তারা, যাদের আচার ব্যবহার সবচেয়ে ভালো। -সহিহ বোখারি
পাঁচ. আল্লাহর নবীর চরিত্র ছিলো ঠিক কোরআনের মতো। -সহিহ মুসলিম
দীন
এক. দীন খুব সহজ। -সহিহ বোখারি
ব্যাখ্যা: দীন মানে, জীবন-যাপন পদ্ধতি। এখানে দীন বলতে ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ইসলামের জীবন-যাপন পদ্ধতি খুব সহজ।
দুই. দীন হলো, কল্যাণ কামনা। -সহিহ মুসলিম
নোট : দীন ইসলামের মূল কথা হলো, নিজের এবং সব মানুষের দুনিয়াবী ও পরকালীন কল্যাণ চাওয়া।
তিন. আল্লাহ যার ভালো চান,তাকে দীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন। -সহিহ বোখারি
আল্লাহর ভয়
এক. জ্ঞানের মাথা হলো- আল্লাহকে ভয় করা। -মিশকাত
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভয় করে, সেই সবচেয়ে বড় জ্ঞানী।
দুই. আল্লাহকে ভয় করো, তাতেই সবচেয়ে বড় ইবাদতকারী হতে পারবে। -মিশকাত
তিন. একজনের ওপর আরেকজনের কোনো মর্যাদা নেই। তবে আছে আল্লাহভীতি ভিত্তির। -তিবরানি
চার. সে ব্যক্তি দোজখে প্রবেশ করবে না, যে আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। -তিরমিজি
শ্রেষ্ঠ আমল
এক. শ্রেষ্ঠ আমল হলো, আল্লাহতায়ালার জন্যে ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যে ঘৃণা করা। -আবু দাউদ