মনের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার উপায়

  • ফিরোজ আহমাদ, অতিথি লেখক, ইসলাম, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মনের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার উপায়, ছবি: সংগৃহীত

মনের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার উপায়, ছবি: সংগৃহীত

নফস সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহের অন্ত নেই। বিশেষ করে যারা আধ্যাত্মবাদ নিয়ে চর্চা করেন। তাদের কাছে নফসের আলোচনা খুবই গুরুত্ববহন করে। নফস এমন একটি সূক্ষ্ম জিনিস, যা কেবল পার্থিব ভোগবিলাস মায়ামোহের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করে।

কোরআন-হাদিসে মানুষের বিভিন্ন ধরনের নফসের বর্ণনা এসেছে। যেমন- নফসে আম্মারা, নফসে লাউয়ামা, নফসে মোলহেমা, নফসে মোতমায়িন্না, নফসে রাজিয়া, নফসে মর্জিয়া প্রভৃতি।

বিজ্ঞাপন

আমরা জানি, মানুষের মন সবসময় মন্দ কাজের দিকে ধাবিত হয়। জাগতিক সুখ-শান্তির ধোঁকায় পড়ে, মানুষ পরকালীন জীবনের অসীম ও অনন্ত সুখকে ইহকালে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়, খালি হাতে প্রভুর দিকে ধাবিত হয়।

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রবৃত্তি মন্দের দিকে ঝুঁকে থাকে, কিন্তু তার কথা আলাদা। যার প্রতি আমার প্রভু দয়া করেন।’ -সূরা ইউসূফ: ৫৩

বিজ্ঞাপন

নফসের কুপ্রবৃত্তির পথ হলো- আল্লাহতায়ালার লানত তথা শয়তানের পথ। অভিশপ্ত শয়তানের কাজ মানুষকে ধোঁকা দেওয়া বা বিপথগামী করা। শয়তান যতক্ষণ পর্যন্ত না একজন মুমিন বান্দাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে, সে ততক্ষণ পর্যন্ত পার্থিব সুখ-শান্তি ও রঙ-তামাশাকে মানুষের চোখের সামনে নানাভাবে তুলে ধরতে থাকে।

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পুরোপুরিভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং কোনো অবস্থায়ই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, কেননা শয়তান হচ্ছে তোমাদের প্রকাশ্যতম দুশমন!’ -সূরা বাকারা: ২০৮

শয়তানের কুমন্ত্রণা সম্পর্কে সজাগ না থাকলেই বিপদের সম্ভাবনা। শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হলো- আল্লাহতায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এবং অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকা।

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘কখনও যদি শয়তান কুমন্ত্রণায় আপনাকে প্ররোচিত করে, সঙ্গে সঙ্গে আপনি আল্লাহতায়ালার কাছে আশ্রয় চান।’ -সূরা আরাফ: ২০০

কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘আপনি বলুন, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের প্রভুর কাছে আশ্রয় চাই। তার সৃষ্টি করা অনিষ্ট থেকে। আমি আশ্রয় চাই রাতের অনিষ্ট থেকে, যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। গিরায় ফুঁক দিয়ে জাদু টোনাকারিণীদের অনিষ্ট থেকে। হিংসুক ব্যক্তির অনিষ্ট থেকেও যখন সে হিংসা করে।’ -সূরা ফালাক: ১-৫

কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হচ্ছে, ‘আপনি বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের সৃষ্টিকর্তার কাছে। মানুষের বাদশাহর কাছে। মানুষের মাবুদের কাছে। কুমন্ত্রণাদানকারী অনিষ্ট থেকে, যে গা ঢাকা দেয়। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জিনদের মধ্য থেকে মানুষের মধ্য থেকে হোক।’ -সূরা নাস: ১-৬

যেসব মানুষ সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে থেকে নিজেকে সব ধরনের মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখতে পারবে তাদের ওপর আল্লাহ রাজি খুশি থাকবেন। ওই সব বান্দাদের আল্লাহতায়ালা জান্নাতিদের দলে শামিল হওয়ার জন্য আহ্বান করতে থাকবেন।

কোরআনে কারিমে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে প্রশান্ত আত্মা। তুমি তোমার রবের দিকে ফিরে যাও সন্তুষ্টচিত্তে ও তার প্রিয়ভাজন হয়ে। অতঃপর তুমি আমার প্রিয় বান্দাদের দলে শামিল হয়ে যাও। প্রবেশ করো আমার জান্নাতে।’ -সূরা ফজর: ২৭-৩০

জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মাকে মুক্ত করতে চাইলে, অতীত জীবনের মন্দ কাজের বিষয় নিয়ে অনুতাপ করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। নিজেকে নিজের অতীত জীবনের মন্দ কাজগুলোর জন্য তিরস্কার করতে হবে।

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আরও আমি কসম করছি, সে নফসের, যে (ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য) নিজেকে ধিক্কার দেয়।’ -সূরা কিয়ামা: ২

আত্মশুদ্ধি অর্জনকারী ব্যক্তি ইনসানে কামেল তথা পরিপূর্ণ মানুষ। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে মানুষের মধ্যে সেই সফলকাম যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর যে তাকে কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।’ -সূরা শামস: ৯-১০

কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হযেছে, ‘যে ব্যক্তি তার মনের লোভ-লালসা থেকে বিরত রয়েছে তারাই সফলকাম হবে।’ -সূরা তাগাবুন: ১৬

আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক মুসলমানকে নফসের কুপ্রবৃত্তি থেকে বেঁচে আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য তওফিক দান করুক।