ফজরের নামাজের গুরুত্ব
নামাজ ফরজ ইবাদত। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজের গুরুত্ব অত্যাধিক। ফজরের নামাজ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নামাজ কায়েম করো সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত এবং কায়েম করো ফজরের নামাজ। নিশ্চয়ই ফজরের নামাজ উপস্থিতির সময়।’ –সূরা বনি ইসরাঈল: ৭৮
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেছেন, আলোচ্য আয়াতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে এখানে আলাদাভাবে ফজরের নামাজের কথা বলা হয়েছে। আয়াতে নামাজ বোঝানোর জন্য ‘কোরআন’ শব্দ আনা হয়েছে। এর পাশাপাশি ‘ফজর’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘কোরআন’ অর্থ পড়া বা পাঠ করা। আর ‘ফজর’ শব্দের অর্থ ভোর হওয়া বা প্রভাতের উদয় হওয়। আয়াতে এই দু’টি শব্দ সম্বন্ধযুক্ত করে একসঙ্গে আনা হয়েছে। তাই শব্দ দু’টির অর্থ হলো- ফজরের কোরআন পাঠ।
নামাজ বোঝানোর জন্য কোরআন শব্দ আনার কারণ হলো, কোরআন তেলাওয়াত নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আয়াতে সেদিকেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বিশেষত ফজরের নামাজের সঙ্গে কোরআনের নিবিড় সম্পর্ক আছে। কেননা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজে সর্বাধিক দীর্ঘ কেরাত পাঠ করতে হয়। ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ জামাতে পড়ার সময় সূরা-কেরাত সশব্দে পড়া ওয়াজিব। ফজরের নামাজের সুন্নত পরিমাণ কেরাত হলো- তিওয়ালে মুফাসসাল। অর্থাৎ ফজরের ফরজ নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা হুজুরাত থেকে সূরা বুরুজ পর্যন্ত সূরা বা এর সমপরিমাণ আয়াতবিশিষ্ট সূরা পাঠ করা সুন্নত।
নামাজের মধ্যে যেমন ফজরের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব, তেমনি সময়ের মধ্যে ফজরের সময়ের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।
পবিত্র কোরআনে ‘ফজর’ নামে একটি সূরাও রয়েছে। ওই সূরার শুরুতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘শপথ ফজরের।’ –সূরা ফজর: ১
হাদিসে ফজরের নামাজের বিশেষ তাগিদ রয়েছে। হজরত জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়বে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে…। -সহিহ মুসলিম: ৬৫৭
অন্য হাদিসে ফজরের নামাজ আদায়কারীকে জান্নাতি মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হজরত আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দু’টি শীতল সময়ে নামাজ আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে ফজরের নামাজ রাতের সবচেয়ে শীতল অংশে এবং আসরের নামাজ মৃদুমন্দ ঠাণ্ডা পড়ার পর দিনের সবচেয়ে শীতল অংশে আদায় করা হয়।
আলোচ্য আয়াতের শেষাংশে ফজরের জন্য একটি গুণবাচক শব্দ আনা হয়েছে। সেটি হলো- ‘মাশহুদ।’ এর অর্থ উপস্থিত হওয়া। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, এ সময় দিন-রাতের উভয় দল ফেরেশতা দুনিয়ায় মিলিত হয়। তাই একে ‘মাশহুদ’ বলা হয়েছে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রাতের ফেরেশতা ও দিনের ফেরেশতারা ফজরের সময় উপস্থিত হয়।’ –সুনানে তিরমিজি: ৩১৩৫
অন্য হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জামাতের নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি। রাতের ফেরেশতা ও দিনের ফেরেশতারা ফজরের নামাজে একত্র হয়ে থাকে।’ –সহিহ বোখারি: ৬৪৮