মুমিনের নয় গুণ
যারা আল্লাহতায়ালার দেওয়া বিধানমতো জীবন পরিচালনা করেন তারাই- তার পছন্দের মানুষ ও খাঁটি মুমিন। তার পরও খাঁটি মুমিনের গুণ সম্পর্কে কোরআনে কারিমের সূরা ফুরকানের কয়েকটি আয়াতে বিস্তারিত বলা হয়েছে। গুণগুলো হলো-
১. সব কাজকর্ম আল্লাহর মর্জি অনুযায়ী করেন
খাঁটি মুমিনের প্রথম গুণ হলো তার বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, ইচ্ছা-আকাঙ্খা এবং আচার-আচরণ সবই আল্লাহতায়ালার মর্জি মোতাবেক হয়। যে সব কাজে আল্লাহতায়ালা রাজি নন সে সব কাজ তারা আদৌ করে না।
২. জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করেন
খাঁটি মুমিনের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, চোখ, কান, হাত, পা ইত্যাদি আল্লাহর সামনে হীন ও অক্ষম হয়ে থাকে। আল্লাহ ভীতির কারণে তারা বিনম্র হয়ে ও দুর্বলভাবে চলাফেরা করে। ইরশাদ হচ্ছে, আল্লাহর বান্দা তারাই যারা জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করে। -সূরা ফুরকান: ৬৩
৩. অজ্ঞ লোকের কথার জবাব কটু কথা দিয়ে দেয় না
খাঁটি মুমিন তারা যারা মুর্খদের জবাবে নিরাপত্তার কথাবার্তা বলে, যাতে অন্যেরা কষ্ট না পায় এবং নিজেরা গোনাহগার না হয়। বলা হয়েছে, যখন অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে সম্বোধন করে (কটু কথা) বলে, তারা এর প্রতিবাদ করে না বরং প্রশান্তিমূলক কথাবার্তা বলে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘মন্দের জবাবে তাই বলুন যা উত্তম। -সূরা মুমিনুন: ৯৫
৪. নামাজে রাত কাটিয়ে দেয়
আল্লাহতায়ালার প্রিয় বান্দাদের অন্যতম গুণ হলো- তারা দিনরাত আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে। দিবাভাগে শিক্ষাদান, দ্বীনি দাওয়াত, জিহাদ ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত থাকে এবং রাতে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকে। সাহাবায়ে কেরামের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল, দিনে সৈনিক, রাত্রে দরবেশ। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা রাত্রিযাপন করে তাদের পালনকর্তার সামনে সিজদা করা অবস্থায় ও (নামাজে) দণ্ডায়মান অবস্থায়।’ -সূরা ফুরকান: ৬৪
রাতের নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ অন্যতম। নবী করিম (সা.) বলেছেন, নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়। কেননা, এটা তোমাদের পূর্ববর্তী সব নেক বান্দার অভ্যাস ছিল। এটা তোমাদেরকে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য দানকারী, মন্দকাজের কাফফারা এবং পাপাচার থেকে নিবৃত্তকারী। -মাজহারি
৫. সদা জাহান্নামের ভয়ে ভীত থাকে
আল্লাহর প্রিয় বান্দারা শুধু দিনরাতে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থেকেই নিশ্চিন্ত হয় না; বরং সদা আল্লাহর আজাবের ভয়ে ভীত থাকে। আর আজাব থেকে বাঁচার জন্য তার কাছে কড়জোরে প্রার্থনা করে। আল্লাহর বাণী, খাঁটি বান্দা তারা যারা বলে, হে আমাদের রব! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। -সূরা ফুরকান: ৬৫
৬. অযথা ব্যয় করে না
খাঁটি মুমিন অযথা এবং না হক পথে ব্যয় করে না। আর ব্যয় করার ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন ও কৃপণতা উভয়ই পরিহার করে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, খাঁটি মুমিন হলো তারা যারা অযথা ব্যয় করে না এবং কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী। -সূরা ফুরকান: ৬৭
৭. ইবাদতে শিরক করে না
শিরক হলো কবিরা গোনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ। শিরক দু’প্রকার। ক. আকিদাগত শিরক তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা এবং তার ইবাদত করা, খ. লোক দেখানো ইবাদত। ইবাদত করতে হবে সম্পূর্ণ একনিষ্ঠতার সঙ্গে এবং লৌকিকতামুক্ত ভাবে। লোক দেখানো ইবাদত শিরক। সব ধরনের শিরকই হারাম। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘খাঁটি মুমিন হলো তারা যারা আল্লাহতায়ালার সঙ্গে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না।’ –সূরা ফুরকান: ৬৮
৮. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে না
খাঁটি মুমিনের অন্যতম গুণ হলো, সে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে না। আল্লাহর বাণী, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না। -সূরা ফুরকান: ৬৮
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, যে কেউ প্রাণের বিনিময় ছাড়া কাউকে হত্যা করলো অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করার জন্য কাউকে হত্যা করলো সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করলো। আর যে কারও জীবন রক্ষা করলো সে যেন সবার জীবন রক্ষা করলো। -সূরা মায়েদা: ৩২
৯. ব্যভিচার করে না
খাঁটি মুমিন স্বীয় জীবনকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র রাখে। ব্যভিচার করা তো দূরের কথা, এর নিকটেও যায় না। কারণ, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। অবশ্যই তা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। -সূরা বণি ইসরাঈল: ৩২
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, খাঁটি মুমিন ব্যভিচার করে না। -সূরা ফুরকান: ৬৮