হারাম কারবারিদের এখনই রুখতে হবে

  • শাহীন হাসনাত
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অনলাইন জুয়ায় অংশ নিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে অনেকে, ছবি: সংগৃহীত

অনলাইন জুয়ায় অংশ নিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে অনেকে, ছবি: সংগৃহীত

অনলাইনে জুয়া মারাত্মক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত সর্বত্র এই জুয়া ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণত খেলা, বিশেষ করে ক্রিকেট ও ফুটবলকে কেন্দ্র করে জুয়ার রমরমা কারবার গড়ে উঠেছে। অর্থ কিংবা পণ্যের বিনিময়ে প্রতিযোগিতা, লটারি, যেকোনো আর্থিক ঝুঁকিপূর্ণ খেলা ইত্যাদি এ জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।

সহযোগী কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, অনলাইনে শত শত জুয়ার সাইট রয়েছে। অনলাইনে জুয়ায় যারা আকৃষ্ট, তাদের মধ্যে শিশু-কিশোর ও তরুণরাই প্রধান। এই অপরাধ ও অপকর্মে তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জুয়ার সাইটগুলোতে জুয়ায় আকৃষ্ট করার জন্য আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশের কিছু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং সামাজিক মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদিতে বিজ্ঞাপন প্রচারিত হতে দেখা যাচ্ছে। নন্দিত ক্রীড়াবিদ, ক্রিকেটার, বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিজ্ঞাপনে অংশ দিতে দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আমরা জানি, ক্রীড়া ও রূপালিজগতের মানুষেরা নানাভাবে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও তরুণদের আকৃষ্ট ও প্রভাবিত করে। এ জন্য পণ্যাদির মতো জুয়ার বিজ্ঞাপনেও তাদের ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের বিজ্ঞাপন যারা তৈরি করে, প্রচার করে তাদেরও সাবধান হওয়া দরকার। তারা যে একটা গুরুতর অপরাধে সহযোগীর ভূমিকা পালন করছেন, সেটা তাদের উপলব্ধি করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি আমলে নিতে হবে। যেকোনো মাধ্যম- তা টিভি চ্যানেলই হোক বা সামাজিক মাধ্যমই হোক জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে হবে। যারা এর সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত হবে বা থাকবে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

অনলাইন জুয়ায় অংশ নিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে অনেকে। জুয়ার অর্থ যোগাড় করতে গিয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধে জড়িয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়। অর্থাভাব, পারিবারিক অশান্তি, মারামারি, হানাহানি এমন কি প্রাণহানির ঘটনাও বিরল নয়। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের শিশু-কিশোর ও তরুণরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যারা জাতির আগামীর কাণ্ডারি হিসাবে পরিগণিত, তারা যদি মাদক কিংবা জুয়ায় ডুবে যায়, তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ও অন্ধকারময় হতে বাধ্য।

উল্লেখ করা আবশ্যক, দেশময় মাদকের আগ্রাসনে সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থায় পতিত হয়েছে শিশু-কিশোর ও তরুণরা। এদের মাদক ও জুয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের দেশে যেকোনো ধরনের জুয়া আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও গোপনে-প্রকাশ্যে নানা ধরনের জুয়ার প্রচলন রয়েছে। এখন জুয়ার ক্ষেত্র ও মাধ্যম পরিবর্তিত হয়ে অনলাইনে ভর করেছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়, এটা বন্ধ করা অতীব জরুরি। তাদের দৌরাত্ম্য এখনই রুখতে হবে।

আরেকটি কথা, দেশে ই-কমার্সের বিকাশ ঘটছে। বর্তমানে ই-কমার্স মার্কেটের আকার ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২০২৬ সাল নাগাদ তা ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে। দ্রুত সম্প্রসারণমুখী এ খাতের কতিপয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও প্রতারণার কথাও সবারই জানা। ই-ভ্যালি, আলেশা মার্ট প্রভৃতি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, প্রতারণা করা ও বিদেশে অর্থপাচার করার অভিযোগ উঠেছে। কাউকে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ই-কমার্স মার্কেটের বিস্তার ও বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযোগ ও উদাহরণ নিশ্চিতভাবেই হুমকিস্বরূপ। অনলাইনে ব্যবসার নামে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ কিংবা অনলাইনে জুয়ার সাইট খুলে অর্থ লোপাট একই ধরনের অপরাধ। এ অপরাধ রোধ করতে যেমন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তেমনি অপরাধীদের উচিত শাস্তিও হওয়া দরকার।

জুয়া নিষিদ্ধ। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে জুয়াকে অন্যতম ঘৃণ্য ও শয়তানের কাজ বলে ঘোষণা করেছেন। সুতরাং জুয়ার পক্ষে বলার কিছু নেই। ই-কমার্সে গ্রাহক ঠকানোর কোনো এখতিয়ারও কারো নেই। এজন্য উপযুক্ত আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগের বিকল্প হতে পারে না।

অনলাইনে জুয়া বন্ধের ব্যাপারে উপযুক্ত আইন নেই বলে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বলে থাকে। প্রশ্ন হলো, যেকোনো ধরনের জুয়া যেহেতু আইনে নিষিদ্ধ, কাজেই অনলাইন জুয়াও নিষিদ্ধ। সাধারণ জুয়ার আইনেই অনলাইন জুয়ার বিচার হতে পারে। অনলাইন জুয়ার হোতা ও জুয়াড়িদের গ্রেফতার ও বিচারে ‘আইন নেই’, এই অজুহাতে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী পুলিশ নানা সময় বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারে যে ধরনের ‘দায়িত্ববোধ ও পারঙ্গমতা’র পরিচয় দিয়ে থাকে, অনলাইন জুয়ার সঙ্গে যুক্তদের পাকড়াও করতে সেই দায়িত্ববোধ ও পারঙ্গমতা কোথায় থাকে? এ ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট কথা, অনলাইনে জুয়া বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজন হলে আইন আরো কঠোর বা আলাদা আইন করতে হবে।

জুয়া থেকে এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে। জুয়া বা প্রতারণার ফাঁদে পড়ার একটা বড় কারণ লোভ। অস্বাভাবিক অর্থ লোভের ফলেই একজন ব্যক্তি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বা জুয়ার সাইটের কবলে পতিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত, প্রতারিত ও বঞ্চিত হয়। অতএব, যেকোনো ব্যক্তিকে লোভ সংবরণ করতে হবে।

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়টি আমাদের সামনে স্পষ্ট করেছেন এভাবে, ‘আদম সন্তানের যদি দুই উপত্যকা পরিমাণ স্বর্ণ থাকে, তাহলে সে কামনা করে- তার যদি আরেকটি উপত্যকা পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো! মাটি ছাড়া (মৃত্যু) কোনো কিছুই তার মুখ পূর্ণ করতে পারবে না!’ -জামে তিরমিজি : ২৩৩৭

লেখক : শিক্ষক ও কলাম লেখক।