হিজরি নববর্ষের সূচনা যেভাবে

  • এইচ এম মনিরুজ্জামান, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হিজরতের ঘটনাকে স্মারক বানিয়ে হিজরি সাল প্রবর্তিত হয়, ছবি: সংগৃহীত

হিজরতের ঘটনাকে স্মারক বানিয়ে হিজরি সাল প্রবর্তিত হয়, ছবি: সংগৃহীত

প্রাচীনকাল থেকেই সন গণনা প্রচলিত। আরবদের মধ্যে গোত্রগত বিভাজনের কারণে নানা ধরনের বর্ষ গণনা করা হতো। তবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো সাল বা বর্ষ ছিল না। বিভিন্ন প্রকারের এসব সনের মধ্যে হজরত নুহ (আ.)-এর বন্যা সন, ইয়েমেনের খ্রিস্টান বাদশাহ আবরাহা কর্তৃক কাবাঘর ধ্বংসের জন্য প্রেরিত হস্তিবাহিনীর নামে আমুল ফিল, আমুল ফুজ্জার, আমুল ফাতহ, হবুতি, লুই এবং খসরু সন উল্লেখযোগ্য।

এ ছাড়া আরবরা বণিক ছিল বিধায় আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে রোমান সনকে অনুসরণ করত। ব্যাবেলি সন চালু হয় সম্রাট বুখতে নসরের জন্ম তারিখ থেকে। মিসর ত্যাগ করে বনি ইসরাঈল যেদিন মুক্ত হয়, সে দিন থেকে তাদের সন গণনা শুরু হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মদিন থেকে খ্রিস্টাব্দ বা ইংরেজি সনের প্রচলন।

বিজ্ঞাপন

গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও উজ্জয়িনীর কিংবদন্তি রাজা বিক্রমাদিত্য খ্রিস্টপূর্ব ৫২ অব্দে ভারতবর্ষে বিক্রমাব্দ প্রচলন করেন। রোমীয়, ব্যাবেলীয়, ইংরেজি, ইরানি, হিন্দুস্তানি প্রত্যেকটি সনের সূচনাতে কোনো না কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা আছে।

হিজরতের ১৭ বছর পর ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়, তখন অনেক নতুন ভূখণ্ড ইসলামি খেলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়। রাষ্ট্রীয় কাগজপত্র ইত্যাদিতে সাল-তারিখ উল্লেখ না থাকায় অসুবিধা হতো। আর তখন কুফার গভর্নর ছিলেন হজরত আবু মুসা আল আশয়ারি (রা.)। তাই তিনি প্রশাসনিক কাজের অসুবিধার কথা জানিয়ে সন ও তারিখ নির্ধারণের আবেদন করেন। সে আবেদনকে গুরুত্ব দিয়ে এবং প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে হজরত ওমর (রা.) একটি পরামর্শ সভার আয়োজন করেন।

যেহেতু নবী কারিম (সা.)-এর হিজরতেই ইসলামের পূর্ণতা লাভ, কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র গঠন এবং মানব ইতিহাসে নবদিগন্তের সূচনা করে, তাই সে সভাতেই প্রিয় নবী (সা.)-এর হিজরতের বছরকে সন গণনার বছর হিসেবে নির্ধারণের জন্য হজরত আলী (রা.) পরামর্শ দেন। পবিত্র মহররম মাস থেকে ইসলামি বর্ষ হিজরি সালের শুরু করা এবং জিলহজ মাসকে সর্বশেষ মাস হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দেন হজরত উসমান (রা.)। সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়। আর তখন থেকেই ইসলামি বর্ষ বা হিজরি সন গণনার শুরু।

নবীজি (সা.)-এর মক্কা মোকাররমা থেকে মদিনা মোনাওয়ারায় হিজরতের ঘটনা মুসলমানদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হিজরত মানে ছেড়ে যাওয়া, পরিত্যাগ করা; দেশান্তর হওয়া ও দেশান্তরিত করা। পরিভাষায় হিজরত হলো ধর্মের জন্য এক স্থান ত্যাগ করে অন্য স্থানে চলে যাওয়া। সর্বোপরি মহান আল্লাহর আদেশ পেয়ে নবুওয়তের ত্রয়োদশ বর্ষে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা মোকাররমা থেকে মদিনা শরিফের উদ্দেশে হিজরত করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর মোতাবেক ৮ রবিউল আওয়াল মদিনা মোনাওয়ারার পার্শ্ববর্তী কোবায় পৌঁছান তিনি। ২৭ সেপ্টেম্বর মোতাবেক ১২ রবিউল আওয়াল জুমার দিনে নবী কারিম (সা.) মদিনা মোনাওয়ারায় প্রবেশ করেন। তিনি যখন মদিনা শরিফে প্রবেশ করেন, তখন তাকে বরণ করার জন্য তার উটের দড়ি নিয়ে আনসারি সাহাবিদের মাঝে টানাটানি শুরু হলো। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘উট ছেড়ে দাও। যেখানে সে বসবে, সেটাই হবে আমার বাসস্থান। তাকে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

উট বনু নাজ্জার গোত্রের এলাকায় গিয়ে দাঁড়াল, যা ছিল হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নানার বাড়ি। এই গোত্রের হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)-এর বাড়ির সামনে গিয়ে উট বসে পড়ল। এখানেই নবী কারিম (সা.)-এর বাসস্থান নির্ধারণ করা হলো। এখানেই গড়ে উঠেছে মসজিদে নববি ও মদিনাতুর রাসুল বা রাসুলের শহর। -আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া

মূলত, হিজরতের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ঘটনা স্মারক বানিয়ে হিজরি সাল প্রবর্তিত হয়।