সেবার ব্রত নিয়ে রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান

  • মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, ছবি: বার্তা২৪.কম

রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, ছবি: বার্তা২৪.কম

ঘূর্ণিঝড় রিমালে ইতোমধ্যে ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯০০ ঘরবাড়ি।

সোমবার (২৭ মে) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান এসব তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালে এ পর্যন্ত ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।’

বিজ্ঞাপন

ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের, বিধ্বস্ত হয়েছে বাড়িঘর। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বেশ কিছু উপজেলা। এ পরিস্থিতিতে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের চরম জনদুর্ভোগ সহজেই অনুমেয়।

এমতাবস্থায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুর্নবাসনে যদি উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তাহলে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে। এমন কোনো পরিস্থিতি হয়তো আমরা কেউই দেখতে চাই না।

এর আগে আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে করোনা পরিস্থিতিতে মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছি। সিলেটের বন্যার সময় এদেশের মানুষ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটাই সত্য দেশের দূর্যোগ আর ক্রান্তিলগ্নে এ দেশের মানুষের, সরকারের এগিয়ে আসার রেকর্ড রয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ও একটি দূর্যোগ। এ দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে, তাদের পরিবারকে রক্ষা করতে হবে। সাহায্যের হাত নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিত্তবান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই তাদের পক্ষে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।

ইসলাম মানবতার ধর্ম। মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবতার মুক্তির জন্য সারা জীবন ব্যয় করেছেন। পৃথিবীর যেখানেই মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, অসহায় মানবতার আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়েছে, সেখানেই সেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে গেছে ইসলামপ্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা।

অসহায়, ক্ষুধার্তদের হক আদায়ের ব্যাপারে ইসলাম স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পেট পুরে খায়, আর পাশেই প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটায় সে প্রকৃত মুমিন নয়।’

অপর হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করো, তাহলে আসমানের অধিবাসীও তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন।’

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘সমগ্র সৃষ্টিজীবই আল্লাহর পরিবারের মতো, আর সর্বোত্তম হলো- ওই ব্যক্তি যে তার পরিবারের প্রতি সদাচরণ করে।’

ইসলাম বা মুসলমানরা শুধু থিওরি বা দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করে না। বরং তারা নিজেরাই আর্তমানবতার সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইসলামের ইতিহাস তার প্রমাণ বহন করে যুগে যুগে ইসলাম ও মুসলমানরা প্রমাণ করেছে, ইসলাম মানবতার ধর্ম। আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীর দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাবো তিনি কীভাবে আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের শিক্ষা দিয়েছেন।

তাই তো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। হিজরতের পরবর্তী সময়ে মক্কার আনসাররা কীভাবে মুহাজির ভাইদের প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছেন। শুধু এতটুকুই নয়, নিজেরা ক্ষুধার্ত, অসহায়, দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও খাবার ও থাকার মূল অংশ অপর ভাইয়ের জন্য দিয়ে দিয়েছেন। নিজেরা মুমূর্ষু, প্রচণ্ড পিপাসার্ত হওয়ার পরও নিজের খাদ্য ও পানীয় অপর ভাইয়ের জন্য বিলিয়ে দেওয়ার যে নজির স্থাপন করেছেন, তার নমুনা ইতিহাসের পাতায় বিরল।

আমরাও রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামদের অনুসরণ করে ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত ভাই-বোনদের সেবায় আত্মনিয়োগ করি। সাধ্যানুযায়ী তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করি। যারা অর্থ দিয়ে সহায়তা করতে পারি, তারা যেন এগিয়ে আসি।

আসুন, একে অপরের পাশে দাঁড়াই। মহান আল্লাহ তার রহমত ও বরকতে আমাদের এই ক্ষতিপূরণ পুষিয়ে নেওয়ার তওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক।