রমজান পরবর্তী জীবন যেভাবে কাটাবেন

  • মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আত্মশুদ্ধির মাস রমজান আমাদের বিভিন্ন আঙ্গিকে উত্তম মানুষ হতে অনুপ্রাণিত করে ও কিছু দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেয়। রমজান মাসে দানশীলতা, মহানুভবতা ও আত্মসংযমে আমাদের মনোযোগ নিবদ্ধ করি, আর এটাই যৌক্তিক বিষয়। কিন্তু এই বিষয়গুলোকে ঈদ পরবর্তী জীবনেও মেনে চলা উচিত। এটা শুধু একটা মাসের বিষয় নয়। বরং এক মাস পরে আমরা কেমন মানুষ হয়ে উঠি সেটাই বিবেচ্য। এখানে রমজান পরবর্তী জীবনে করণীয় নির্ধারণে সহায়ক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো-

শিশুদের পৃষ্ঠপোষকতা

বিজ্ঞাপন

একজন এতিম, দরিদ্র কিংবা সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে পৃষ্ঠপোষকতার অর্থ হচ্ছে- আর্থিকভাবে তার শিক্ষাগত এবং কখনো কখনো জীবনযাপনের অন্যান্য খরচের দায়ভার গ্রহণ করা। বার্ষিক, অর্ধ-বার্ষিক কিংবা স্বল্প পরিমাণের মাসিক কিস্তিতে তাকে এ টাকা প্রদান করা যেতে পারে।

আত্মসংযম

রমজান মাস আমাদের আত্মসংযম এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেয়। জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে এই নিয়ন্ত্রণকে অনুশীলন করে চলার সংকল্প করুন। খাদ্য এবং অর্থের ব্যাপারে আকাক্সক্ষার চেয়ে প্রয়োজনীয়তাকে অগ্রাধিকার দান করুন। এই সংযম আপনাকে মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণে যাদের পর্যাপ্ত সামর্থ্য নেই, তাদের তুলনায় আপনি কতটা সৌভাগ্যবান তা বুঝতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে নিজের এবং নিজের জীবনের ওপর কীভাবে আরও ভালো নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে পারেন, সে ব্যাপারেও সহযোগিতা করে।

দানশীলতা

কথায় আছে- দান শুরু হয় আপন ঘর থেকে। এটা শুধু এক মাসের জন্য নয় বরং পুরো বছরই ধরে রাখার বিষয়। এটা এমনও নয় যে, শুধুমাত্র যখন আপনার কাছে অতিরিক্ত আছে তখনই দান করবেন। বরং এটা সমস্ত মানবজাতির প্রতি আমাদের এক দায়িত্ব। দান, তা যত ক্ষুদ্রই হোক, নিম্নবিত্তের মানুষকে সাহায্য করার এক বিরাট সুযোগ। রমজান আপনাকে শুধু একটা মাসের জন্য নয়, বরং সারাজীবন ব্যাপী সদয় এবং দানশীল হতে শেখায়।

দায়িত্ব পালন

রমজানের লক্ষ্য হচ্ছে, সবচেয়ে উত্তমভাবে রোজাদারকে পরিণত করা, সেটি কর্মক্ষেত্রে হোক কিংবা নিজের ঘরে হোক। ঈদের পরেও নিজের সেরা হয়ে ওঠার এই সংকল্প জারি রাখুন। যখন রোজা শেষ হয়ে যায়, তখন নিজেকে গঠনমূলক কাজে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার সঙ্গে নিমজ্জিত রাখুন। নিজের কর্মের এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্বের ব্যাপারে শতভাগ অঙ্গীকারাবদ্ধ হোন।

মাসে একদিন রোজা

প্রতিমাসে অন্তত একটি দিন রোজা রাখার মাধ্যমে রমজানের চেতনাকে জাগ্রত রাখুন। এটি আপনার শরীর ও মন উভয়কে সতেজ করবে। যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবান অবস্থায় রোজা শেষ করুন। নির্জনে ধ্যান করুন। ইতিবাচক অন্তদর্শনে সময় ব্যয় করুন এবং স্থিরতার সঙ্গে দিন অতিবাহিত করুন। এতে আপনার অন্তর সজীব থাকবে এবং শরীর ও মনের ওপর থেকে চাপ কমে যাবে।

সহনশীলতা

রমজানের আধ্যাত্মিকতা আমাদের সব কাজের মধ্যেই এক ধরনের ইতিবাচকতার অনুভূতি অল্প অল্প করে ছড়িয়ে দেয়। এমনকি যারা রোজা রাখে না তারাও ইতিবাচক, নমনীয় এবং সহনশীল হয়ে ওঠার একটি প্রচেষ্টা নিজের মধ্যে অনুভব করে। এই প্রচেষ্টাকে ঈদ পরবর্তী সময়েও জারি রাখুন। আপনার চারপাশের ঘটনাপ্রবাহ এবং মানুষজনের প্রতি আরও বিবেচক এবং সহনশীল হয়ে উঠুন।

যত বেশি পারেন, শুনতে ও শিখতে প্রস্তুত থাকুন। যেকোনো চিন্তার ব্যাপারে উদার হোন, এমনকি প্রথম দৃষ্টিতে তা আপনার কাছে কোনো কাজের মনে না হলেও। সহনশীলতা শুধুমাত্র উপলব্ধি এবং নতুন বা ভিন্ন কিছুকে গ্রহণ করার মানসিকতা থাকার মধ্য দিয়েই আসতে পারে।

স্বেচ্ছাসেবা

প্রতি মাসে একবার হলেও স্বেচ্ছাসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করুন। আপনার হৃদয়ে যে কাজটি ভালো লাগে তেমন কাজেই অগ্রসর হোন। কীসে আপনি উদ্যমী অনুভব করেন সেই কারণ খুঁজে বের করুন। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার আগে সেই সংগঠন সম্পর্কে পর্যাপ্ত খোঁজ খবর নিন।

পরিবার

শুধু রমজান পরবর্তী সময়ে ঈদপালনের জন্য পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার রেওয়াজ পরিত্যাগ করুন। পিতামাতা এবং পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। সিদ্ধান্ত নিন প্রতি মাসে পরিবারের সঙ্গে নিবিঘ্ন এবং নিয়মিত সময় কাটানোর। এটি আপনার অন্তরে এই অনুভূতি এনে দেবে যে, পরিবারই একান্ত নিজের এবং সবচেয়ে কাছের। একইসঙ্গে নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা দেবে, পারিবারিক সম্পর্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার মানসিক চাপ এবং প্রতিকূলতাগুলো সহজ হয়ে ওঠে যখন আপনার চারপাশে সহযোগী এবং ভালোবাসার মানুষজন থাকে।