অন্যের প্রতি সুধারণা পোষণের লাভ
মুসলিম জাতিকে আত্মকলহ, বিরোধ, বিদ্বেষ ও সংঘাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ ইসলামি শিক্ষার বিস্তার। কেননা ইসলাম মুসলিম উম্মাহকে সবচেয়ে দৃঢ় বন্ধনের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইসলাম মুসলিম জাতিকে এমন একটি সমাজে একতাবদ্ধ করেছে, যারা পরস্পরকে ভাই মনে করে, পরস্পরকে ভালোবাসে, পরস্পরের সহযোগী ও অভিভাবক। তাদের একজনের দ্বারা অন্যজন শক্তিশালী হয় এবং তারা কখনো পরস্পরকে শত্রু গণ্য করে না।
ইসলাম উম্মাহকে একতাবদ্ধ করেছে বিশ্বাস, ইবাদত, চারিত্রিক মূল্যবোধ ও সামাজিক শিষ্টাচারের মাধ্যমে। যা মুসলমানের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে। তাদের শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করে এবং তাদের রক্ষা করে এমন সব বিষয় থেকে, যা ভ্রাতৃত্বকে দুর্বল, আহত ও অর্থহীন করে তোলে।
ফলে প্রত্যেক মুসলমান এক আল্লাহ, পরকালীন পরিণতি, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব ও নবী-রাসুলের প্রতি অভিন্ন বিশ্বাস পোষণ করে। তাদের সবাই একই নিয়মে আল্লাহর জন্য নামাজ আদায় করে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার জামাতে অংশগ্রহণ করে, অসহায়, ঋণগ্রস্ত ও পথিকের জন্য জাকাতের অর্থ ব্যয় করে, এক মাস আল্লাহর জন্য রোজা রাখে, জীবনে অন্তত একবার হজব্রত পালন করে। তারা এসব ইবাদত পালন করে একই নিয়মে, একই সময়ে, একই রকম পোশাক পরিধান করে (ইহরাম উদ্দেশ্য), তাদের মুখে থাকে একই ধ্বনি হে আল্লাহ, আমি উপস্থিত, আমি উপস্থিত।
এরই ভিত্তিতে তারা বিশ্বাস করে, তারা সবাই আদি পিতা আদম (আ.)-এর সন্তান এবং পরস্পরের ভাই। তাই তারা তাদের ভাইকে ভালোবাসে। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’ -সহিহ বোখারি : ১৩
ঈমানের দাবি এই ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা মুসলমানকে অগ্রাধিকার দিতে শেখায়। ফলে মুমিন অন্য মুমিনের প্রতি হয় বিনম্র। তারা পরস্পরের ওপর অহংকার করে না। কেননা তা গুরুতর অপরাধ। মুমিন পরস্পরের প্রতি হিংসা পোষণ করে না। কেননা তা অন্তরের পাপ এবং আল্লাহ হিংসুকের নিন্দা করেছেন। একইভাবে তারা কোনো মুমিনকে উপহাস করে না, তার প্রতি দোষারোপ করে না এবং মন্দ নামে ডাকে না।
এমনকি মুমিন পরস্পরের প্রতি সুধারণা পোষণ করে, বিরূপ ধারণা পোষণ করে না, কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষচর্চা করে না। কেননা আল্লাহতায়ালার নির্দেশ হলো, ‘হে মুমিনরা, তোমরা বেশির ভাগ অনুমান থেকে দূরে থাকো। কেননা অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা পরস্পরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। আর পরস্পরের অনুপস্থিতিতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে? বস্তুত তোমরা তাকে ঘৃণ্যই মনে করো।’ -সুরা হুজরাত : ১২
যখন মুসলমানের পারস্পরিক সম্পর্কের রূপ এমন, তখন তাদের মধ্যে বিবাদ-সংঘাত কিভাবে হতে পারে। এই শিক্ষা, মূল্যবোধ ও শিষ্টাচার মুসলিমকে সব সময় অন্য মুসলিম থেকে সংযত করে!