শায়েস্তা খাঁর স্মৃতিবিজড়িত হামিদিয়া তাজ মসজিদ
চট্টগ্রামের অনন্য স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী চন্দনপুরা হামিদিয়া তাজ মসজিদ। এটাকে মসজিদ-ই-সিরাজ উদদৌলাও বলা হয়, তবে এটি চন্দনপুরা মসজিদ হিসেবে বেশি পরিচিত।
মোগল স্থাপত্য নকশায় নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের খ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ডের নবাব সিরাজ উদ-দৌলা সড়কের চন্দনপুরা অংশে মসজিদটি অবস্থিত।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, ১৬৬৬ সালে শায়েস্তা খানের সেনাবাহিনী আরাকান মগরাজাদের কবল থেকে চট্টগ্রামকে মুক্ত করলে এখানে মোগল শাসন কায়েম হয়। তখন শাহি ফরমান বলে বিজিত অঞ্চলে অনেকগুলো মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যার মধ্যে হামিদিয়া তাজ মসজিদ একটি।
পরবর্তীতে ১৮৭০ এবং ১৯৫০ সালে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। মসজিদটির প্রতিটি অংশে সবুজ, নীল, হলুদ, সাদা ও গোলাপিসহ হরেক রকম রং ব্যবহার করা হয়েছে। লতাপাতার নকশা আর নানা কারুকাজে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সুনিপুণ হাতে। মসজিদের এমন নয়নাভিরাম রূপ-সৌন্দর্য যে কাউকেই মুগ্ধ করে তোলে।
বাহারী রঙে সাজানো অনন্য ডিজাইনের মসজিদটি এখনও ধারণ করে আছে মুসলমানদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ও গাম্ভীর্য। মসজিদের অজুখানা, সিঁড়ির হাতল, কার্নিশ ও দেয়ালসহ সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে নিখুঁত কারুকার্য। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পুরোনো এসব ডিজাইনগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে নানান রঙের বর্ণাচ্ছটায়।
মসজিদটিতে রয়েছে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১৫টি গম্বুজ। জানা যায়, মসজিদের বড় গম্বুজটি নির্মাণে তৎকালীন সময়ে প্রায় ৪ লাখ টাকার ১৫ মণ রুপা ও পিতলের প্রয়োজন হয়; যা সংগ্রহ করা হয় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। গম্বুজের চারপাশে লেখা আছে রাসুল (সা.)-এর পরিবার ও দুনিয়ায় জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া ১০ সাহাবির নাম।
সকালের প্রথম রৌদ্র এসে রাঙিয়ে দেয় মসজিদটিকে। তারপর সারাদিন তার অসাধারণ রূপ-সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ করে দর্শক ও মুসল্লিদের। প্রতি পাঁচ বছর পর পর নতুনভাবে মসজিদটিকে রঙ করা হয়।
মসজিদের কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, সূক্ষ্ম কাজের কারিগরের অভাবে এখন আর সংস্কারকাজ সঠিকভাবে করা যায় না। তাছাড়া বৈরী আবহাওয়ায় এসব জিনিস যেমন নষ্ট হয়েছে, তেমনি সংস্কারের সময়ও হারিয়ে গেছে এর অনেক কিছুই। পাশে আরও মসজিদ রয়েছে। তবুও স্থানীয় মানুষদের নিকট প্রাচীন এই মসজিদটির গুরুত্ব অপরিসীম। শুক্রবারে মসজিদে জায়গা সংকুলান না হলে রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে অসংখ্য মানুষ নামাজ আদায় করেন। আশা করা যায়, যথাযথ পরিচর্যা হলে আরও দীর্ঘদিন কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের এই সুন্দর মসজিদটি।