উত্তম আচরণ মানুষকে সম্মানিত করে

  • মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

উত্তম আচরণ মানুষকে সম্মানিত করে, ছবি: সংগৃহীত

উত্তম আচরণ মানুষকে সম্মানিত করে, ছবি: সংগৃহীত

মানুষ তার উত্তম ব্যবহার ও চরিত্র দ্বারা পরিবারসহ সমাজকে আলোকিত করে থাকে। এমন নৈতিক শক্তির কার্যকারিতা সুদূর প্রসারী। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিত্রে তার বাস্তব প্রমাণ মেলে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন জ্যোতিষ্মান প্রদীপ বিশেষ। তার প্রশংসা করতে গিয়ে জনৈক আরব কবি বলেন, ‘হে জ্যোতির্ময়! হে মানব শ্রেষ্ঠ! তোমার পূত চেহারার দীপ্তি থেকেই চাঁদ আলোকপ্রাপ্ত হয়েছে।’

যার হৃদয় যত পবিত্র ও কলুষমুক্ত, তিনি তত কোমল ব্যবহারের অধিকারী হন, তিনি হন সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারার অধিকারী। পৃথিবীতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে পবিত্র মন, আকর্ষণীয় আচরণের অধিকারী আর কোনো ব্যক্তির আগমন ঘটেনি এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে না। নবী করিম (সা.) সবসময় হাসিমুখে থাকতেন। সঙ্গী-সাথীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ামাত্র হাসিমুখে অভ্যর্থনা করতেন, কিন্তু জীবনে কেউ কোনো দিন তাকে অট্টহাসি হাসতে দেখেনি। প্রবল হাসির উদ্রেক হলে কখনও কখনও বিদ্যুৎচমকের মতো একফালি দাঁতের ঔজ্জ্বল্য ফুটে বের হতো।

বিজ্ঞাপন

হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, জীবনে যতবার আমি রাসূলে কারিম (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, প্রত্যেকবারই তিনি আমাকে হাসিমুখে সম্ভাষণ করেছেন। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আমার কথা শুনেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রা.) বলেন, নবী (সা.) মৃদুহাসি ব্যতীত কখনও উচ্চহাস্য করতেন না।

আমরা জানি, চারিত্রিক সৌন্দর্য দ্বারা মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান অর্জন করা যায়। গোমড়ামুখী হওয়া কোনো তাকওয়ার পরিচয় বহন করে না। ব্যক্তিগত জীবনে দেখা যায় অনেক সৎচরিত্রের অধিকারীদের চরিত্রে কোমলতা কম থাকে, মেজাজ থাকে কিছুটা কর্কশ। মুমিনের এমন চরিত্র হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কিয়ামতের দিন এমন লোককেও আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে, যার আমলনামার মধ্যে নামাজ, রোজা, জাকাত প্রভৃতি নেক আমল থাকবে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি তার মন্দ আচরণের জন্য আল্লাহর কাছে নালিশ করবে। তাই মিষ্টি হাসি, মধুর আচরণ ও কোমল চিত্তের অধিকারী হওয়া পরিবারপ্রধান ও সমাজসংস্কারকদের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য।

বিজ্ঞাপন

আমরা জানি, মানুষের সৎ আচরণের মধ্যে সততা অন্যতম গুণ। সততা রক্ষা করা এবং সততা অর্জন করা একজন মোমিনের জন্য শ্রেষ্ঠতম কাজ। মানুষের সৎ স্বভাব বা সৎ আচরণ কিংবা সত্যবাদিতার মধ্যেই সততা নিহিত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা সত্যনিষ্ঠ ও বাস্তবপরায়ণ লোকদের সম্পর্কে তাদের সত্যনিষ্ঠা ও বাস্তবতা তথা সততা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। সততার গুণে মানুষ বিভূষিত হন এবং সমাজের উচ্চস্থান লাভ করেন।

ইসলামের নির্দেশ হলো- জীবনের সর্বক্ষেত্রে সততা রক্ষা করে চলা। সহিহ বোখারি শরিফের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে স্বভাব-চরিত্র ও সততায় উত্তম, সে আমার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয়।’

সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকা এবং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা ঈমানের অংশ। আর যারা মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে তাদেরকে সবাই পছন্দ করে। উত্তম আচরণ ও অমায়িক ব্যবহার কেবল মানসিক প্রশান্তিই দেয় না, এর মাধ্যমে জীবনে সাফল্যও লাভ করা যায়। এ কারণে মানুষ যেমন সফলতার মুখ দেখে, তেমনি তার মাধ্যমে বেহেশত লাভ করাও সহজ হয়। তাই সবার সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, এক মুসলমানের সঙ্গে আরেক মুসলমানের সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ বস্তুত একজন মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের সম্পর্ক এমনই হতে হবে। যে সম্পর্কের কথা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেছেন।

সুন্দর আচরণ আর ভালো কথা এমন একটি শিল্প যার কোনো ক্ষয় নেই। এখন সময় এসেছে মুসলমানদের এই শিল্পকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার। আল্লাহতায়ালা সবাইকে তওফিক দান করুন। আমিন।