মর্যাদা বৃদ্ধি ও আল্লাহর প্রিয় হওয়ার মাধ্যম
বিনয় সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহর দেওয়া বান্দার অন্যতম এক চারিত্রিক গুণ। এটা মানবজাতির প্রতি ইসলামের নির্দেশও বটে। আচার-আচরণে, উচ্চারণে নিজেকে অন্য যে কারো চেয়ে ক্ষুদ্র মনে করা বিনয়ী হওয়ার লক্ষণ। বিষয়টি মহান আল্লাহর কাছে অতি পছন্দনীয়। আর এটা প্রকাশ পেতে পারে মানুষের ওঠাবসা, চলাফেরা ও কথাবার্তায়। বিনয়ী হওয়ার প্রতি আহ্বান করে আয়াত নাজিল করেছেন আল্লাহতায়ালা। যা এই গুণটির গুরুত্ব ও আবশ্যক হওয়ার প্রমাণ বহন করে।
হজরত ইয়াজ ইবনে হিমার (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মহান আল্লাহ আমাকে প্রত্যাদেশ করেছেন যে, তোমরা পরস্পরের প্রতি নম্রতা ও বিনয় ভাব প্রদর্শন করো। যাতে কেউ যেন অন্যের প্রতি অত্যাচার না করতে পারে এবং কেউ কারো সামনে গর্ব প্রকাশ না করে।’ -সহিহ মুসলিম : ৭৩৮৯
মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দা রাসুলকে সম্বোধন করে বিনয়ী হতে বলেন, যেন মানবজাতি এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে যে, মানুষ যত বড়ই হোক না কেন কোনো অবস্থাতেই কারো সঙ্গে দম্ভ ও অহংকারমূলক আচরণ করা ঠিক নয়। বরং বিনয় ও আত্মবিলাপের আচরণ করবে। যেন কেউ কারো সামনে নিজের বড়ত্ব ও সম্মান জাহির না করে। কারণ দুনিয়াতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর থেকে কেউ সম্মানী ছিলেন না এবং সামনেও আসবে না। তাকেই যখন বিনয়ী হতে বলা হয়েছে, তখন অন্যদের কথা তো বলাই বাহুল্য।
বিনয় মুমিনের অন্যতম গুণ। তবে যদি কাফের-মুশরিক কখনো মুসলমানদের বিরুদ্ধাচরণ ও দুর্ব্যবহার করে তাহলে তাদের সঙ্গে বিনয় শোভা পায় না। কারণ তা হবে ঈমানি মর্যাদাবোধের পরিপন্থী। যা মুসলমানদের জন্য হারাম। এজন্য কোরআন মাজিদে শুধু মুমিনের সঙ্গে বিনয়ী হওয়ার প্রতি উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা বিনয়ী হওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে আরও বলেন, দয়াময় আল্লাহর খাঁটি বান্দা তারা, যারা অহংকারহীনভাবে পথ চলে। -সুরা ফুরকান : ২৫
অহংকার ও দম্ভ পরিহারের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে চলো না। তুমিতো পদাঘাতে জমিন চিড়ে ফেলতে পারবে না, আর উচ্চতায় পাহাড়কেউ অতিক্রম করতে পারবে না। -সুরা বনী ইসরাইল : ১৭
আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য বিনয়ী ও নিরহংকারী হওয়া আবশ্যক। এ সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ বলেন, কেউ যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিনয় অবলম্বন করে, তবে আল্লাহ তার মর্যাদাকে বাড়িয়ে দেন।’ -সহিহ মুসলিম : ২৫৮৮
অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ নিজে বিনয় অবলম্বনকারী, তিনি বিনয়কে ভালোবাসেন এবং বিনয়, নম্রতা অবলম্বনকারীকে এত বেশি দান করেন- যা কঠোরচিত্ত ব্যক্তিকে দান করেন না। -সহিহ বোখারি : ৬৯২৭