নামাজ কেন পড়া হয়
কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই; সুতরাং আমার ইবাদত করো আর নামাজ কায়েম করো আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে।’ -সুরা ত্বহা : ১৪
মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী মানুষের মনে যতক্ষণ পর্যন্ত সৃষ্টিকর্তার স্মরণ, তার অপরিসীম দয়া ও অনুগ্রহের কথা এবং তার কাছে জবাবদিহিতার মনে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো বিশ্বাসী, খোদাভীরু ও কৃতজ্ঞচিত্ত বান্দার পক্ষে পাপ করা, অন্যায় করা সম্ভব হয় না।
আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে মানুষকে দিয়েছেন তার প্রতিনিধির মর্যাদা এবং সে অনুসারেই তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, দৈহিক অবকাঠামো, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, ভাষা, বিবেক ও ইচ্ছার স্বাধীনতা সব দিক থেকে তিনি মানুষকে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন, আকাশ ও পৃথিবীর সব সৃষ্টিকে তিনি মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করার পাশাপাশি তিনি সেগুলোকে মানুষের আয়ত্বাধীন করে দিয়েছেন। সর্বোপরি, মানুষেরা যাতে পৃথিবীতে শান্তি, শৃঙ্খলা, ন্যায়-ইনসাফ বজায় রেখে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান-মর্যাদা বজায় রাখতে পারে সেজন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে সঠিক পথনির্দেশ (আসমানি কিতাব) ও পথ প্রদর্শকও পাঠিয়েছেন।
এসব কিছু দিয়ে আল্লাহতায়ালা দেখতে চান তার কোন কোন বান্দা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তার বিবেকবান, কৃতজ্ঞ বান্দাদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে, ‘নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের আবর্তনের মধ্যে রয়েছে বহু নির্দশন বিবেকসম্পন্নদের জন্য।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৯০
কোরআন মাজিদে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দন্ডায়মান, উপবিষ্ট এবং শায়িত অবস্থায় এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টির ব্যাপারে চিন্তা করে (তারা বলে), হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করোনি, তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সুতরাং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করো।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৯১
মুমিন জীবনে আল্লাহকে স্মরণ ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং নামাজ দিনে কমপক্ষে পাঁচবার আল্লাহকে স্মরণ করার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
আল্লাহর জিকির বা স্মরণ শুধু স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরই উপায় নয়, এটি পাপ থেকে বেঁচে থাকারও বড় উপায়। আল্লাহতয়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা করো।’ -সুরা আল আনকাবুত : ৪৫
অন্যদিকে, যারা আল্লাহকে ভুলে থাকে তারা সহজেই শয়তানের খপ্পরে পড়ে নাফরমান হয়ে ওঠে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহও তাদেরকে আত্মভোলা বানিয়ে দিয়েছেন। এরা পাপিষ্ঠ লোক।’ -সুরা আল হাশর : ১৯
‘আর আপন রবকে স্মরণ করো সকাল-সন্ধ্যায় মনে মনে, অনুনয়-বিনয় ও ভীতি সহকারে এবং অনুচ্চ স্বরে। আর গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’ -সুরা আল আরাফ : ২০৫