কম টাকায় উমরার অফারে প্রতারণার আশঙ্কা
ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে উমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বেশ কয়েক বছর উমরা ভিসা নিয়ে জটিলতার পর গতবছর থেকে বাংলাদেশের মানুষ উমরার সুযোগ পাচ্ছেন। সাধারণত রমজান মাসে উমরার জন্য বেশি ভিড় থাকলেও বছরের অন্য সময়ও প্রচুর বাংলাদেশি উমরাপালনে সৌদি আরব গমন করেন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন হজ ও উমরা এজেন্সি উমরা পালনের প্যাকেজ ঘোষণা করে থাকেন। কিন্তু এসব প্যাকেজের মূল্য নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। এক এজেন্সির প্যাকেজের সঙ্গে অন্য এজেন্সির প্যাকেজের কোনো মিল নেই। এই সুযোগে অনেক অসাধু হজ এজেন্সি কম মূল্যে উমরার প্যাকেজ ঘোষণা করে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে। বিশেষ করে অল্প টাকায় উমরা পালনের সব বিষয়ের দায়িত্ব নেওয়ার চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ঠকানো হয় সাধারণ মানুষকে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আকর্ষণীয় এসব বিজ্ঞাপনে থাকে লোভনীয় সব অফার। কিন্তু উমরায় যেয়ে এসব অফারের কোনোটিই মেলে না। তাই এসব প্রতারক এজেন্সি থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন খোদ ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব (হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)।
তার পরও কম টাকায় পবিত্র উমরাযাত্রী সংগ্রহের অসম প্রতিযোগিতা চলছে দেশজুড়ে। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে সেবার মান। আর বিদেশে যেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উমরাযাত্রীদের, এতে করে বিদেশের মাটিতে দুর্নাম হচ্ছে দেশের।
১৫ দিনের শর্ট প্যাকেজ ঘোষণা করে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্ব্যভোগি দালাল উমরা পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাত্রী সংগ্রহে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সরকারি সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে এসব দালাল গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল উমরাযাত্রীদের কাছ থেকে মাত্র ৬০-৬৫ হাজার টাকায় উমরা পালনের জন্য পাসপোর্ট জমা নিচ্ছে। এতে উমরা ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উমরার প্যাকেজ (১০-১২ দিন) মক্কা-মদিনার হোটেল ভাড়া (কাছের হোটেল ও শেয়ার রুম), খাবার (২ বেলা), ভিসা খরচ ও বিমান ভাড়ার (সরাসরি বিমান) ওপর নির্ভর করে। এ ছাড়া সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত, দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন পরিদর্শন করানোর কথাও থাকে। এজেন্সি কর্তৃপক্ষ এসব হিসাব করে উমরা প্যাকেজ ঘোষণা করে থাকেন।
অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, ১০ দিনে এসব কিছুসহ উমরাযাত্রী প্রতি খরচ হয় ১ লাখ টাকার মতো। এর বাইরে কম খরচে উমরার প্রলোভনে যারা উমরা করতে যান, তাদেরকে দূরের হোটেলে রাখা হয়, খাবার খেতে হয় নিজ দায়িত্বে, মক্কা-মদিনার কোনো দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করানো হয় না, এমনকি ট্রানজিট বিমানে সৌদি আরব যেতে হয়। তাই সস্তা কোনো প্যাকেজে উমরায় না যাওয়াই শ্রেয়।
কিন্ত কতিপয় দালাল কম খরচে উমরা পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে উমরাযাত্রীদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করছে। এসব উমরাযাত্রী দালাল চক্রের প্রতারণার ফাঁদে পা দিতে যাচ্ছে। একাধিক এজেন্সি মালিক বার্তা২৪.কম এর কাছে এমনটিই দাবি করেছেন।
তারা বলছেন, কম টাকায় উমরা পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও প্রচারপত্র বিলি করে উমরাযাত্রী সংগ্রহ করছে অনেকই। এদের মাধ্যমে উমরা পালন করতে গেলে যাত্রীরা প্রতারণার শিকার হবেন। এসব দালাল উমরা ব্যবসাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এদের সঙ্গে উমরা পালন করতে গেলে পবিত্র মক্কার ৪/৫ কিলোমিটার দূরের বাসায় থাকতে হবে। খেতে হবে নিজ দায়িত্বে। কম টাকায় উমরায় গেলে মক্কা-মদিনায় গিয়ে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত হারাম শরিফে যেয়ে নামাজ পড়ার সুযোগ থাকে না বলেও জানান তারা।