নবী করিম সা.-এর খাদ্যাভাস অনুসরণ উত্তম ডায়েট

  • মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রাসুল (সা.) মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন, তবে সেগুলোও অনেক বেশি খেতেন এমন নয়

রাসুল (সা.) মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন, তবে সেগুলোও অনেক বেশি খেতেন এমন নয়

শরীরটা বেড়ে স্থূল হয়ে গেছে; কি করবেন- ঠিক করে উঠতে পারছেন না। এদিকে চিকিৎসক বিশাল এক তালিকা ধরিয়ে দিয়েছে- কি খাওয়া যাবে আর কি খাওয়া যাবে না। এ তালিকা মানতেও মন সায় দেয় না। আবার স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করলেও সা মেনে উপায় নেই। এমন দ্বিধাময় সময়ে সহজ সমাধান নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়াসাল্লামের খাদ্যাভাস অনুসরণ এবং তার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা। নবী করিম (সা.)-এর খাদ্যাভাসই পারে আপনাকে এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে।

ডায়টেশিয়ানরা তো কম খেতে বলে। নবী করিম (সা.) শুধু কমই খেতেন না, অনেক সময় তার ঘরে চুলায় আগুনও জ্বলতো না। নবী করিম (সা.) সপ্তাহে দুই দিন (সোম, বৃহস্পতিবার) রোজা রাখতেন। চিকিৎসকরা রোজা রাখতে বলেন। মাঝে-মধ্যে রোজা রাখলে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায়। নবী করিম (সা.) প্রচুর পরিশ্রম করতেন। তার জীবনে অলসতা বলতে কিছু ছিলো না। চিকিৎসকরাও বলেন পরিশ্রম করতে। নিদেনপক্ষে দৈনিক কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করতে।

বিজ্ঞাপন

পেট খালি রাখুন, পেট ভরে খাবেন না- এটা ডায়েটে অবশ্যই মানতে হয়। দেখুন, নবী করিম (সা.) এই ফর্মূলা অনেক আগেই দিয়ে গেছেন। পেটের এক ভাগ খাবার, এক ভাগ পানি, এক ভাগ খালি থাকবে। এই সুন্নত আমল করতে অসুবিধা কোথায়? ডায়েটে যা যা আজকাল করতে বলা হয়, তার সবটাই নবীজীর খাদ্যাভাসে বিদ্যমান। নবী করিম (সা.) কিছু খাবার খেতে পছন্দ করতেন। এর মানে এই নয় যে, ওই খাবারগুলো তিনি পেটভরে খেতেন। ওই খাবারগুলোকে প্রাধান্য দিতেন, কিন্তু কম খেতেন। নবী করিম (সা.) খেজুর খেতেন, খেজুর তার প্রিয় ছিলো। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি বলেন, আমি দেখলাম নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক টুকরা যবের রুটি নিয়ে তাতে একটি খেজুর রেখে বললেন, এই খেজুর এই রুটির তরকারী।’ –সুনানে আবু দাউদ : ৩৮৩০

অন্য হাদিসে আছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়িতে কোনো খাবার নেই।’ এমনকি নবী করিম (সা.) সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি মাকেও খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। খেজুর কিন্তু ডায়েটের উত্তম খাদ্য। খেজুর শক্তি যোগায়, ক্ষুধা মেটায়। খেজুরের মধ্যে উপকারি অনেক কিছু রয়েছে। খেজুর শুধু সুস্বাদু নয়, পুষ্টিকরও বটে৷ ডায়েটে উত্তম নাস্তা হলো- দু’চারটি খেজুর খেয়ে নেওয়া।

নবী করিম (সা.) দুধ খেতেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মেরাজের রাতে বায়তুল মোকাদ্দাসে আমি দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হলে হজরত জিবরাইল (আ.) আমার সামনে শরাব ও দুধের আলাদা দু’টি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, ‘আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন।’ –সহিহ বোখারি : ৩১৬৪

নবী মুহাম্মদ (সা.) মধু খেতে পছন্দ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন।’ –সহিহ বোখারি : ৪৯১২

বোখারি শরিফের আরেক হাদিসে হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মধু হলো- উত্তম ওষুধ।’ –সহিহ বোখারি : ৫৩৫৯

মধুর উপকারিতা অনেক। পবিত্র কোরআনে নাহল (মৌমাছি) নামে একটি স্বতন্ত্র সুরা বর্ণিত হয়েছে। শুধু মধু খেলে যে উপকার তা নয়। মৌমাছির জীবনকাল নিয়ে পড়াশোনা করলে বিস্মিত হতে হবে। আল্লাহতায়ালার প্রতি ঈমান বৃদ্বি পাবে। তার শ্রেষ্ঠত্ব সর্ম্পকে কিছুটা হলেও ধারণা আসবে।

রাসুলুল্লাহ সা.-এর খাদ্য তালিকায় খেজুর, পানি ও দুধই বেশি থাকত 

 

লাউ বা কদু খেতে নবী করিম (সা.) পছন্দ করতেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক দর্জি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে খাবারের দাওয়াত করে। আমিও নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে সেই খাবারে অংশগ্রহণ করি। রাসুল (সা.)-এর সামনে বার্লির রুটি এবং গোশতের টুকরা ও কদু মেশানো ঝোল পরিবেশন করা হয়। আমি দেখেছি, রাসুল (সা.) খুঁজে খুঁজে কদু নিয়ে খাচ্ছেন। আর আমিও সেদিন থেকে কদুর প্রতি আসক্ত হয়ে উঠি।’ –সহিহ মুসলিম : ২০৬১

খাবার সামনে এলে আমাদের হুঁশ থাকে না। কে কার আগে সব খাবে, এমন প্রতিযোগিতা চলে। অথচ খাবার খাওয়ার কিছু আদব আছে। হেলান দিয়ে কোনো কিছু খাওয়া যাবে না। নবী করিম (সা.) হেলান দিয়ে খেতে নিষেধ করছেন। নবী করিম (সা.) বালিশে বিশ্রাম নেওয়া অবস্থায় খাবার খেতেন না। -সহিহ বোখারি

বিশ্রামরত অবস্থায় খাবার খাওয়া ঠিক নয়। চিকিৎসকরাও এভাবে খেতে নিষেধ করেন। দাঁড়িয়ে খেলে পাকস্থলির ওপর চাপ পড়ে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে পানির কোনো পুষ্টিগুণ শরীরে শোষণ হয় না। এতে পাকস্থলির ক্ষত ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়ে, কিডনির পানিশোষণ প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।’ –সহিহ মুসলিম : ৫০১৭

ধীরে-সুস্থে খাওয়া সুন্নত এবং স্বাস্থ্যসম্মত। তাতে খাবার ভালো করে চিবানো হয়। মুখের লালা খাদ্যের সঙ্গে ভালোভাবে মিশতে পারে, হজম সহজতর হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তিন আঙুলে খেতেন এবং খাওয়ার পর জিহ্বা দিয়ে আঙুল চেটে খেতেন। -সহিহ বোখারি

অর্থাৎ তিনি খুব ধীরে-সুস্থে খেতেন। একসঙ্গে বেশি খাবার মুখে দিতেন না। খাওয়ানোর মালিক শুধুই আল্লাহ। আল্লাহর সম্মতি ছাড়া রিজিক আসে না। তাই এক ঢোক পানি খেলেও আলহামদুল্লিাহ বলা দরকার। শোকরিয়া আদায়ে রিজিক বাড়ে। আল্লাহ খুশি হন। তাই খাওয়া শেষের দোয়া আছে। সেটা হলো- ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াসাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন।’ অর্থাৎ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের খাবার খাইয়েছেন, পানি পান করিয়েছেন এবং মুসলমান বানিয়ে জন্ম দিয়েছেন।’ –সুনানে আবু দাউদ : ৩৮৫১