ইসলামের শিক্ষা সমালোচনা নয়, ভুল শুধরে দেওয়া

  • সাবরিনা ওবায়েদ আনিকা, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তোমরা অনুমান থেকে দূরে থাকো। কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ

তোমরা অনুমান থেকে দূরে থাকো। কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ

পরনিন্দা ও অন্যের সমালোচনা মানুষের নিকৃষ্টতম অভ্যাসের অন্যতম। কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষ বর্ণনা করাই হলো- পরনিন্দা কিংবা পরসমালোচনা। শরিয়তের পরিভাষায় এমন অনৈতিক চর্চাকে ‘গিবত’ বলা হয়।

যার দোষ বর্ণনা করা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে যদি সেই দোষ তার মধ্যে থাকে তাহলে গিবত হিসেবে ধর্তব্য হবে। আর যদি না থাকে, তাহলে তা অপবাদ হিসেবে গণ্য হবে। অপবাদ গিবতের চেয়েও নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত।

বিজ্ঞাপন

অপবাদ সামাজিক সুস্থতা বিনষ্ট করে। সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য হিসেবে তুলে ধরে। অপবাদ মানুষকে কোনো কারণ ছাড়াই অপরাধী সাব্যস্ত করে এবং সম্মান ও ব্যক্তিত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, হে নবী! বিশ্বাসী নারীরা যখন তোমার কাছে বায়াত (আনুগত্যের শপথ) করতে এসে ঘোষণা করে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদের হত্যা করবে না, সজ্ঞানে কোনো মিথ্যা অপবাদ রটাবে না এবং ঘোষিত ন্যায্য বিষয়ে তোমার নির্দেশ অমান্য করবে না, তখন তাদের বায়াত গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো, আল্লাহ তো অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সুরা মুমতাহিনা : ১২

গিবত শুধু মুখে বলার দ্বারা হয় তা নয়, বরং ইশারা-ইঙ্গিত ও অঙ্গভঙ্গির দ্বারাও হয়। গিবত শ্রবণ করা গিবত করার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। দুটোই সমান অপরাধ। জীবিত ও মৃত উভয় শ্রেণির মানুষের গিবত হারাম। গিবত শুধু জঘন্যতম গোনাহ নয়। এটি মানুষের ঈমান-আমল ধ্বংস করে দেয়। দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ করে দেয়। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা অনুমান ও ধারণা (করে কথা বলা) থেকে বেঁচে থাকো। কেননা অনুমান করে কথা বলা সবচেয়ে বড় মিথ্যা।’ -সহিহ বোখারি : ২২৮৭

বিজ্ঞাপন

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস।’ -সুরা হুমাজাহ : ১

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে সম্মানহানি করা থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা নিজের জন্য অপরিহার্য করে নেন।’ -আহমাদ

অন্যায়ভাবে অন্য মুসলমানের মান-ইজ্জত নষ্টকারী সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোনো মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে লাঞ্ছিত করে, যেখানে তার মানহানি ঘটে এবং সর্বদা খাটো করা হয়, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে লাঞ্ছিত করবেন, যেখানে তার সাহায্যপ্রাপ্তির আশা ছিল।’ -সুনানে আবু দাউদ

দোষারোপ ও দুর্নাম তো দূরের কথা, কারও সম্পর্কে কোনো প্রমাণ ছাড়া কথা বলা যাবে না। হাল সময়ে অহেতুক মানুষকে দোষারোপ করা এক সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনদের প্রতি তোমরা ভালো ধারণা পোষণ করবে। অনুমান করে কিছু বলা যাবে না। কারণ আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা অনুমান থেকে দূরে থাকো। কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ।’ -সুরা হুজুরাত : ১২

কিছু পাপের কোনো কাফফারা হয় না। কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া তেমন একটি পাপ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচটি পাপ এমন- যার কাফফারা নেই। এর তৃতীয়টি হলো- কোনো মুমিনকে অপবাদ দেওয়া।’ -আহমদ

তাই কথা বলার সময় সতর্ক থাকা দরকার। কম কথা বলা উত্তম। নবী করিম (সা.) জিহ্বাকে সংযত রাখতে বলেছেন। শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে, অন্যের কান কথায় প্ররোচিত হয়ে কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া জঘন্য অপরাধ। কারও সম্মানহানি করার অধিকার অন্যের নেই। ইসলামে মিথ্যা দোষারোপের সুযোগ নেই। এটা ঘৃণিত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা মিথ্যা কথন থেকে দূরে থাকো।’ -সুরা হজ : ২৩

অপবাদ দেওয়ার প্রবণতা পরস্পরের সুসম্পর্কে চিড় ধরায়। সামাজিক ও জাতীয় ঐক্যের জন্যও বিষয়টি প্রতিবন্ধক। যে কারণে ইসলামে অপবাদ দেওয়ার প্রবণতাকে ধিক্কার দেওয়া হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে অপর মুসলমানকে অপবাদ দেওয়া কবিরা গোনাহ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা বিনা অপরাধে বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ -সুরা আহজাব : ৫৮