সব জ্ঞানের উৎস মহান আল্লাহ

  • মুফতি আবদুর রহমান, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সব জ্ঞানের উৎস মহান আল্লাহ

সব জ্ঞানের উৎস মহান আল্লাহ

সর্বশক্তির আধার যেমন আল্লাহতায়ালা, তেমনি সর্বজ্ঞানের উৎস ও স্বয়ং মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহ। অনন্ত জ্ঞান ভাণ্ডারের চাবি মহাজ্ঞানী আল্লাহর হাতেই। ‘তিনি (আল্লাহতায়ালা) যা ইচ্ছা করেন, তদ্ব্যতীত তার জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না।’ -সুরা আল বাকারা : ২৫৫

মহান স্রষ্টার সৃষ্টিতে জ্ঞানী-গুণী যারা গবেষণা করেন, আবিষ্কার করেন, সেসব গবেষণার উপাদানের স্রষ্টাও স্বয়ং আল্লাহ। আল্লাহতায়ালার সিফাতি বা গুণগত নাম হলো- ‘আলিম’ অর্থাৎ আল্লাহ মহা ইলমের অধিকারী। জ্ঞান আল্লাহর নূর। আর যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করল, সে নবীদের মিরাসের বড় একটি অংশ পেয়ে গেল। আল্লাহতায়ালার ঘোষণা, ‘তিনিই গায়েবের একমাত্র জ্ঞানী। তিনি তার গায়েবের জ্ঞান কারও কাছে প্রকাশ করেন না, তার মনোনীত কোনো রাসুল ব্যতিরেকে। তখন তিনি সেই রাসুলের অগ্রে ও পশ্চাতে রক্ষী নিযুক্ত করেন।’ -সুরা জিন : ২৬-২৭

বিজ্ঞাপন

আমি কিছুই জানি না
এই পৃথিবীর জ্ঞানীকে জ্ঞানের চূড়ান্তপর্যায়ে গিয়ে সৃষ্টি রহস্য ও বাস্তবস্বরূপ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী নিউটনের শেষ কথা ছিল, ‘আমি জ্ঞান সমুদ্রের বালুকণার বেলায় দাঁড়িয়ে শামুক-ঝিনুক নিয়ে খেলা করেছিলাম, অথৈ জ্ঞানসমুদ্র অজানাই রয়ে গেল।’

জগৎখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসও বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‘আমি একটি বিষয় জানি যে, আমি কিছুই জানি না।’ আসলে মহান আল্লাহ মানুষকে সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে অপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ পাক যতটুকু ইচ্ছে করেন, ততটুকুই মানুষ জ্ঞানার্জন করতে সক্ষম হয় এবং ততটুকুই তার পক্ষে জানা সম্ভব হয়।

বিজ্ঞাপন

আমরা জানি না
জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণেই এই পৃথিবীর জ্ঞানী, গুণী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জ্ঞান নিয়ে অহঙ্কার করা সাজে না। ‘আমরা জানি না’- সব জ্ঞানী-গুণী ও বৈজ্ঞানিকরা অকুণ্ঠচিত্তে এই কথাই বলছে। যার মধ্যে রয়েছে মানবীয় জ্ঞানের অপূর্ণতার সুর। জ্ঞান-বুদ্ধি-গবেষণা দিয়ে মানুষ চির অজ্ঞাত, চির অজেয়কে ধরতে পারছে না কখনও। যতই সামনে এগোচ্ছে, লক্ষ্যবস্তু ততই দূরে সরে যাচ্ছে। তাই তো এত শূন্যতা! তাইতো এত হাহাকার। তাই তো আল্লাহ তার কাছে জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা করতে বলেছেন, ‘হে আমার বর! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও।’ -সুরা ত্বহা : ১১৪

আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় মানুষের জ্ঞান
সহিহ বোখারি শরিফের হাদিসে উল্লেখ আছে, ‘মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী কে?’ এ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হজরত খিজির আলাইহিস সালামের মধ্যে কথোপকথনের সময় একটা পাখি এসে তার চঞ্চু দিয়ে সমুদ্র থেকে পানি পান করল। তা দেখে হজরত খিজির (আ.) বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় আমার ও আপনার জ্ঞান এই পাখিটির সাগর থেকে তার চঞ্চুতে যে পরিমাণ পানি উঠল, তার চেয়ে বেশি নয়।’ আল্লাহ পাকের মনোনীত বান্দাদের জ্ঞান যদি এই হয়, তাহলে আমরা যারা সাধারণ মানুষ, জ্ঞানের বড়াই করছি, আমরা কত সামান্য জ্ঞানের অধিকারী। আল্লাহতায়ালা তার সীমাহীন গায়েবি রহস্যের সংবাদের সামান্যই নবী-রাসুলদের জানিয়েছেন অহির মাধ্যমে। তাই বলে গায়েবের আলিম কাউকে করেননি। ‘পৃথিবীতে অমুসলিমদের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে কোরআন-হাদিস গবেষণা করা হচ্ছে। বড় বড় ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। তারা কোরআনের তাফসির ও হাদিস বিষয়ে অনেক জ্ঞান রাখে। দক্ষ আলেমরা তাদের কাছে নস্যি। কিন্তু ঈমানি দৌলত তাদের নেই।’ তাদের এ জ্ঞান হলো- জানা কিন্তু মানা নয়। অর্থাৎ কুফর ও গোনাহের অন্ধকার প্রকৃত ইলম বা জ্ঞান নয়।

যুগ যতই আধুনিক হোক
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগ যতই আধুনিক হোক, চিন্তা ও গবেষণা যতই ধারালো হোক, যুক্তি জ্ঞান ও গোঁড়ামি দিয়ে পরকালের মুক্তির জ্ঞানার্জন সম্ভব নয় এবং যুক্তিও সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন মহাজ্ঞান আল্লাহতায়ালার বিধি-বিধান, জ্ঞান-বিজ্ঞানের গাইড লাইন, আল কোরআন মেনে, রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে চলা। জ্ঞান তখন প্রত্যক্ষ অনুভূতির মধ্যে এসে পূর্ণ হবে। অন্তরে তখন চির আধুনিক ইসলামের জ্ঞানের আলো জ্বল জ্বল করে জ্বলে উঠবে। ঈমান ও একিনের মূল কথা এটাই আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই পাওয়া যাবে সিরাতুল মুসতাকিম বা জ্ঞানের সরল-সোজা পথ, যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে নয়।

কসমিক রেডিয়েশন, ইলেকট্রন-প্রোটন, অনু-পরমাণু শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের অঙ্গ-প্রত্যক্ষ, রূহ, মানবসৃষ্টি এবং বিশ্বজগতের পরতে পরতে প্রবেশ করুন, চিন্তা ও ফিকির করুন; দেখবেন বিশাল বিশ্ব প্রকৃতি অত্যাশ্চর্য মোজেজায় পরিপূর্ণ!

জ্ঞানের দরিয়ায় হাবুডুবু খাওয়া
জ্ঞান বা ইলম অর্জনই প্রকৃত জ্ঞানীদের কাজ। একজন জ্ঞানী (মৃত্যু পর্যন্ত) আজীবনই ছাত্র। বিশ্বজোড়া জ্ঞানের পাঠশালায় যে একজন গণ্য ছাত্রমাত্র। একটি ফুল, একটি বৃষ্টির ফোটা, একটি পাতা, থেকেও জ্ঞানার্জনের অনেক উপাদান রয়েছে। সৃষ্টির যে দিকে দৃষ্টি যাবে, যে বস্তুতে দৃষ্টি যাবে, সেখানকার থেকেই জ্ঞান আহরণ করা যাবে। জ্ঞানীর প্রতিটি দৃষ্টিই ইলম বা জ্ঞান অর্জনের দৃষ্টি। বিশ্বজগতের এই জ্ঞানের দরিয়ায় জ্ঞানীরা সর্বক্ষণ হাবুডুবু খাচ্ছেন।