জান্নাত-জাহান্নামে যাওয়ার প্রধান কারণ
সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে নেবে এমন কিছু সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ভয় ও সুন্দর চরিত্র।’ অতঃপর মানুষকে যা জাহান্নামে বেশি নেবে এমন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, ‘মুখ ও লজ্জাস্থান।’ –সুনানে তিরমিজি : ২০০৪
নৈতিকতা মানুষের অভ্যন্তরীণ গুণ। মানুষের বাহ্যিক কথাবার্তা, আচার-ব্যবহার, আলাপচারিতা, লেনদেন সর্বোপরি পুরো দৈনন্দিন জীবনযাপনে নৈতিকতার প্রভাব ফুটে ওঠে। আখলাকের আরবি প্রতিশব্দ। বিখ্যাত আরবি ভাষাবিদ আল্লামা আবদুল কাহির আল জুরজানি এর পরিচিতিতে বলেন, ‘অন্তরের প্রতিক্রিয়া যা বাহ্যিক আচার-ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো ধরনের চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ পায়। তার কর্ম ভালো হলে তা উত্তম চরিত্র বলে গণ্য হবে। আর কর্ম মন্দ হলে তা মন্দ চরিত্র হিসেবে গণ্য হবে। -আত তারিফাত : ১০১
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে নৈতিকতার মূল কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়বিচার, সদাচরণ ও আত্মীয়দের দানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও অবাধ্যতা থেকে নিষেধ করেছেন, তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো।’ -সুরা নাহাল : ৯০
নবী করিম (সা.) ছিলেন উত্তম চরিত্রের সব গুণাবলির আধার। তার সব গুণে মুগ্ধ ছিলেন পরিচিতজনরা। হজরত সাআদ বিন হিশাম (রা.) থেকে একটি দীর্ঘ হাদিসে বর্ণিত আছে, তিনি উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে উম্মুল মুমিনিন, আমাকে নবী করিম (সা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলুন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আপনি কি পবিত্র কোরআন পাঠ করেননি? তিনি বললেন, হ্যাঁ করেছি। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্র ছিল কোরআন সদৃশ।’ -সহিহ মুসলিম : ৭৪৬
আর তাই মহান আল্লাহ নবী করিম (সা.)-এর সুন্দর চরিত্রের কথা বর্ণনা করে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আল্লাহর অনুগ্রহে আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন, আপনি যদি রূঢ় ও কঠোর মনের হতেন তাহলে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৫৯
নবী করিম (সা.) সব ধরনে অনৈতিকতা ও পাপাচার পরিহারের নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আবু জর (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেন, ‘তুমি যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় করো। মন্দ কাজ করে ফেললে এরপর ভালো কাজ করো। তাহলে মন্দের কাজের গোনাহ মুছে দেবে। মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।’ –সুনানে তিরমিজি : ১৯৮৭
আল্লাহর কাছে মানুষের কর্ম গ্রহণযোগ্য। মানুষের দৈহিক গঠন, অর্থ-সম্পদ কিংবা সৌন্দর্য বিবেচ্য নয়। সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের অবয়ব দেখেন না। তোমাদের আকার-আকৃতিও দেখেন না। তবে তিনি তোমাদরে অন্তর ও কর্মগুলো দেখেন।’ -সহিহ মুসলিম : ২৫৬৪
নৈতিকতাবোধ মানুষের সফলতার চাবিকাঠি। আর সামাজিক জীব হিসেবে অন্তরের পরিশুদ্ধি জরুরি। আর তাই পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘সেই সফলকাম যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করবে। এবং সেই ব্যর্থ যে নিজেকে কলুষিত করবে।’ -সুরা শামস : ৯-১০
অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেই সফলকাম যে অন্তর পরিশুদ্ধ করল, তার রবের নাম স্মরণ করল। অতঃপর নামাজ আদায় করল।’ -সুরা আলা : ১৪-১৫
আল্লাহতায়ালা অন্য আয়াতে বলেন, ‘মহাকালের শপথ। মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয় যারা ঈমান আনে, ভালো কাজ করে, পরষ্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ -সুরা আসর : ১-৩