ভালো ও মন্দ কাজের প্রতিদান

  • মাওলানা আবদুল কাহহার, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে’

‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে’

হজরত আবু সিরমাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করে আল্লাহ তা দিয়েই তার ক্ষতি করেন। আর যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাকেও কষ্ট দেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৩৬৩৫

ইসলামি স্কলারদের মতে, বর্ণিত হাদিস শরিয়তের দু’টি মূলনীতিকে প্রমাণ করে। তা হলো- এক. মানুষের কাজের ওপর তার ভালো ও মন্দ প্রতিদান নির্ভরশীল। দুই. অন্যের ক্ষতি করা ও নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। প্রতিদান মানুষের কাজের অনুরূপ হওয়া মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা ও ন্যায়বিচারের নীতির অনুরূপ।

বিজ্ঞাপন

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে মানুষের প্রতিদান তার কাজের অনুরূপ হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করলে সেও তা দেখবে।’ -সুরা জিলজাল : ৭-৮

অর্থাৎ পরকালে মানুষের সব কাজ দৃশ্যমান হবে এবং তার কাজের অনুরূপ প্রতিদান দেওয়া হবে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পছন্দনীয় কাজ করে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ করে আল্লাহ তার ওপর ক্ষুব্ধ হন।’

বিজ্ঞাপন

একইভাবে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি মুসলমানের প্রতি সহজ আচরণ করবে, আল্লাহ তার জন্য দুনিয়া ও আখেরাত সহজ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়ার একটি কষ্ট দূর করে দেয়, আল্লাহ তার কেয়ামতের কষ্ট দূর করে দেবেন।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার যাবতীয় সংকট নিরসন করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য করে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে।’ -সহিহ মুসলিম

অন্যের ক্ষতি দুই প্রকার। ক. যা শান্তি ও স্বস্তি নষ্ট করে, খ. যা কোনো প্রকার অপকার করে। কোনো মুমিনের জন্য মানুষের ক্ষতি করা ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর কাজ করা বৈধ নয়; এমন কাজ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।

ইসলামের দৃষ্টিতে বহু বিষয় ক্ষতিকর জিনিসের আওতাভুক্ত। যেমন- লেনদেনে ধোঁকা দেওয়া, প্রতারণা করা, পণ্যের ত্রুটি গোপন করা, ষড়যন্ত্র করা, প্রবঞ্চনা, অস্বাভাবিক বা দ্বিগুণ লাভ করা, মুসলিম ভাইয়ের বেচাকেনার ওপর বেচাকেনা করা ইত্যাদি।

এসব বিষয়ের কিছু শরিয়ত কর্তৃক সরাসরি নিষিদ্ধ আর কিছু কাজের ব্যাপারে ইসলাম নিরুৎসাহ করেছে। এমনকি অসৎ উদ্দেশ্যে বৈধ কোনো কাজ করতেও ইসলাম নিষেধ করে। যেমন- ওয়ারিশদের মধ্যে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য অসিয়ত করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এটা যা অসিয়ত করা হয় তা দেওয়ার এবং ঋণ পরিশোধের পর- যদি কারও জন্য ক্ষতিকর না হয়।’ -সুরা আন নিসা : ১২

ইসলামের শাস্তি ও প্রতিদানের বিধান শুধু পার্থিব জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়; বরং পরকালেও তা প্রতিফলিত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয় এমন কিছুর জন্য যা তারা করেনি; তারা অপবাদের ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।’ -সুরা আল আহজাব : ৫৮