প্রবীণদের সম্মান সওয়াবের কাজ
একদল মানুষ যখন কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্রিত ও সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে তখন তাকে সমাজ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে গড়ে ওঠা জনসমষ্টিকে সমাজ বলে। পৃথিবীর বৈচিত্রতার অন্যতম একটি রুপরেখা হলো- সামাজিক বৈচিত্রতা। প্রত্যেক সমাজ তার নিজস্ব কিছু চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন এবং নীতিমালা সামনে রেখে পরিচালিত হয়। তবে প্রতিটি আদর্শ সমাজ ব্যবস্থায়ই কিছু অভিন্ন নীতি-ধারা পরিলক্ষিত হয়। যার উল্লেখযোগ্য কিছু নীতি হলো- ন্যায়পরায়ণতা, মানবিকতা ও অগ্রজদের প্রতি অনুজদের ভক্তি-শ্রদ্ধা ইত্যাদি।
প্রবীনদের প্রতি নবীনদের ভক্তি-শ্রদ্ধা, সম্মান প্রদর্শন এবং অনুকরণীয় মনোভাব একটি আদর্শ সমাজ ব্যবস্থার মৌলিক ধারা হিসেবে বিবেচিত। আর একইভাবে এর বিপরীতকে নিন্দার চোখে দেখা হয়। কেননা আদিকাল থেকেই যে সব সমাজে প্রবীনদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সম্মান পরিলক্ষিত হয় না, সে সব সমাজব্যবস্থাকে যুগে যুগে দার্শনিকগণ বর্বর কিংবা অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজ বলে অভিহিত করেছেন। স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে, পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকে এই পর্যন্ত প্রত্যেকটা জাতিই তাদের পূর্বসূরীদের মাধ্যমে ইতিহাস-ঐতিহ্যের মতো মূল্যবান সম্পদ লাভ করে থাকে। প্রবীণগণ ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে কাজ করে থাকেন। আর এই ধারাবাহিকতা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তাই ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রাপ্তির যোগ্য অধিকারী হিসেবে প্রবীণগণ সবদিক থেকেই বিবেচিত।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। প্রত্যেক ধর্ম তার অনুসারীদের প্রবীনদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর নির্দেশনা দিয়েছে। আর আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিষ্ঠিত একটি সুন্নত হলো- প্রবীণদের শ্রদ্ধা ও নবীনদের স্নেহ করা। যেমনিভাবে হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে লোক আমাদের শিশুদের আদর করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ –তিরমিজি : ১৯২০
সর্বোপরি, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবীণদের অবদান অপরিসীম। পরিবার গঠন, উন্নয়ন ও সমাজ কল্যাণে কর্মময় জীবনের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে একসময়ে তারা বার্ধক্যে উপনীত হন। তখন প্রবীণদের সার্বিক কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং তাদের প্রতি পর্যাপ্ত সম্মান ও ভক্তি প্রদর্শন করা সমাজের নবীনদের আবশ্যিক কর্তব্য। এটা ঈমাদের দাবি ও সওয়াবের কাজও বটে। এর মাধ্যমে নবী করিম (সা.)-এর সুন্নতের প্রতি আমল করা হয়।