আবার মুখরিত মক্কা মোকাররমা

  • মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মসজিদে হারামে প্রবেশের অপেক্ষায় উমরা পালনকারীদের প্রথম দল, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে হারামে প্রবেশের অপেক্ষায় উমরা পালনকারীদের প্রথম দল, ছবি: সংগৃহীত

আলহামদুলিল্লাহ। ইহরাম পরিহিত ধর্মপ্রাণ মানুষের পদচারণায় আবার মুখরিত হয়ে উঠছে মক্কা মোকাররমার পথ-ঘাট। মসজিদে হারামের প্রাঙ্গণ থেকে ভেসে আসছে- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক..’ তালবিয়ার ধ্বনি।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার জন্য সাত মাস বন্ধ ছিল উমরা। অবশেষে রোববার থেকে শুরু হয় উমরা। কাবা চত্বরে ইহরাম পরিহিত আল্লাহপ্রেমীদের তাওয়াফ, সায়ী, নামাজ আর কান্নার আওয়াজে সৃষ্টি হচ্ছে আবেগময় দৃশ্য। দীর্ঘদিন পর উমরার সুযোগ পেয়ে, আল্লাহর ঘরকে কাছ থেকে দেখার আনন্দে সৃষ্টি হওয়া আবেগ পরিণত হয় কান্নায়। এ কান্না আনন্দের, এ কান্না মনিবের সকাশে হাজির হওয়ার।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৪ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় উমরা পালনকারীদের প্রথম দলটির জন্য মসজিদে হারাম খুলে দেওয়া হয় বলে আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

হাজার হাজার মুসল্লিকে মাস্ক পরা অবস্থায় কাবা শরীফ তাওয়াফ করতে দেখা গেছে। নিয়ম মেনে তারা সায়ীসহ উমরার যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করছেন। এর আগে মসজিদে হারামে প্রবেশের জন্য উমরা পালনকারীরা কুদাই বাসস্টেশনে জড়ো হন। সেখান থেকে তাদের মসজিদে হারামে নিয়ে যাওয়া হয়। উমরা পালনে আসা প্রথম দলটি মসজিদে হারামের ‘আজইয়াদ’ গেট দিয়ে প্রবেশ করেন। এখানে তাদের জমজমের পানি ইত্যাদি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

হারামাইন প্রেসিডেন্ট শায়খ সুদাইস উমরা পালনকারীদের মাঝে উপহার বিতরণ করছেন, ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত মার্চে উমরা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সৌদি আরব। মহামারির কারণে এবার মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ হজও সীমিত আকারে পালিত হয়েছে।

রোববার এশার নামাজের পর উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে হারামাইন প্রেসিডেন্ট ও মক্কার প্রধান খতিব শায়খ ড. আবদুর রহমান সুদাইস বলেন, ‘আজ আল্লাহ আমাদের জন্য হারাম শরিফের দরজা খুলে দিয়েছেন। এ থেকে আমরা সুসংবাদ ও আনন্দপ্রাপ্ত হয়েছি। এ থেকে সুধারণা নেব যে, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের জন্য এভাবে জান্নাতের দরজাগুলোও খুলে দেবেন।’ এ সময় তিনি উমরাপালনকারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে একাগ্রতার সঙ্গে উমরাসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশের আহ্বান জানান।

এর আগে তিনি উমরা পালনকারীদের মাঝে বিভিন্ন উপহার বিতরণ করেন ও উমরার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

উমরা শুরুর ঘোষণার সময় সৌদি আরবের হজবিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ বেনতেন দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানিয়েছিলেন, প্রথমপর্যায়ে খুবই সতর্কতার সঙ্গে এবং সুনির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে উমরা পালন করা হবে। উমরা পালনকারীদের কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত করা হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই উমরা পালনকারীদের পবিত্র কাবা তাওয়াফ করতে হবে। কাবা স্পর্শ ও হাজরে আসওয়াদ চুমো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

এমনিতে বছরের যেকোনো সময় মুসলমানরা উমরা করতে মক্কা ও মদিনায় যেতে পারেন। গতবছর সব মিলিয়ে এক কোটি ৯০ লাখ মানুষ উমরা পালন করেন। আর প্রতিবছর বিভিন্ন দেশের বিশ লাখের বেশি হজ করার সুযোগ পেলেও এবার সৌদি আরবে বসবাসরত মাত্র কয়েক হাজার মুসলমান সে সুযোগ পেয়েছেন।

কাবা তাওয়াফের দৃশ্য, ছবি: সংগৃহীত

আরব নিউজ লিখেছে, ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে উমরাযাত্রীদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে কঠোরভাবে। মসজিদে হারামের প্রবেশ পথে এবং ভেতরে বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে থার্মাল ক্যামেরা, যাতে নিয়মিত তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে জরুরি সতর্কতা জারি করা যায়।

সৌদি সরকার জানিয়েছে, তিনটি ধাপে উমরা কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। প্রথম ধাপে শুধু সৌদি আরবের অবস্থানরতরাই সুযোগ পাচ্ছেন। উমরার জন্য বানানো নির্দিষ্ট অ্যাপ ‘ইতামারনা’র মাধ্যমে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়েছে তাদের। এমনিতে আগে দৈনিক ২০ হাজার জনকে উমরা করার অনুমতি দেওয়া হলেও এখন এর ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ এক দিনে ছয় হাজার জন স্বাস্থ্যবিধি মেনে উমরা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয় ধাপে ১৮ অক্টোবর থেকে তা বাড়িয়ে একদিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার জনকে উমরার জন্য মসজিদে হারামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। তৃতীয় ধাপে ১ নভেম্বর থেকে সৌদি আরবে অবস্থান করা এবং বিদেশ থেকে আসা উমরাযাত্রীদের মক্কার মসজিদে হারামে ঢুকতে দেওয়া হবে। তখন প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষ উমরা করার সুযোগ পাবেন।

উমরাকারীরা সায়ী করছেন, ছবি: সংগৃহীত

সৌদি সরকার সম্প্রতি সীমিত পরিসরে উমরা শুরুর সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এরপর গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ‘ইতামারনা’র মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম। নিবন্ধন শুরুর প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রথম ১০ দিনের উমরা পালনের নির্ধারিত কোটা পূর্ণ হয়ে যায়। প্রথম ধাপে ৪২ হাজার ৮৭৩ জন সৌদি নাগরিক ও ৬৫ হাজার ১৬৮ জন প্রবাসীসহ মোট ১ লাখ ৮ হাজার ৪১ জনকে ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া উমরা পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সৌদি আরবে সোমবার (৫ অক্টোবর) পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৩৮৭ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৮৭৫ জনের।