সুস্থ দেহ ও দীর্ঘ জীবন লাভে ধর্ম পালনের ভূমিকা

  • মো. আশরাফুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সুস্থ দেহ ও দীর্ঘ জীবন লাভে ধর্ম পালনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

সুস্থ দেহ ও দীর্ঘ জীবন লাভে ধর্ম পালনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিককালে চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা সুস্থতায় দীর্ঘজীবন লাভে ধর্মবিশ্বাস, ঈমান, ধর্মাচার, প্রার্থনা তথা ইবাদত-বন্দেগির গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। বিজ্ঞানের জগতে সমাদৃত ও জনপ্রিয় পত্রিকা নিউ সাইন্টিস্ট’র ‘পার্টিকেলস অব ফেইথ’ নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সৃষ্টিকর্তার প্রতি ঈমান ও ধর্মাচার পালনকারী মানুষ অতীতে দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন যাপন করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ঈমানের দাবি মোতাবেক জীবন যাপন করেন না, তাদের চেয়ে যারা ঈমানের আলোকে জীবন যাপন করেন ও সৃষ্টিকর্তার বিধান অনুসরন করেন, তারা অধিক সুখী এবং তারা বেশিদিন বাঁচেন। উপরন্তু তাদের দৈহিক ও মানসিক ব্যাধির পরিমাণ কম এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপারটি হলো, যেকোনো অপারেশনের পর ধর্মে অবিশ্বাসীদের তুলনায় তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু প্রশ্ন হলো, ঈমান রোগ নিরাময়ে কিভাবে কাজ করে? মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, চোয়াল ব্যথার ১৪ জন রোগীকে ব্যথা নিরাময়ের ওষুধ দেওয়ার পর তারা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন। কিন্তু তারা জানতো না যে, ওষুধটি আর কিছুই নয়; তা ছিলো স্যালাইনের পানি। অর্থাৎ শুধু স্যালাইনের পানি খেয়েই তাদের ব্যথা ভালো হয়ে গেলো। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল, নিরাময়ের জন্যে উপযুক্ত ওষুধটিই তারা পাচ্ছেন। আর এই ব্যথা নিরাময়ের ব্যাপারটি কিন্তু মোটেই কাল্পনিক ছিলো না।

পরবর্তীতে গবেষকরা প্লাসিবো চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া ওইসব রোগীদের মস্তিষ্কের পিইটি স্ক্যান করে দেখেছেন, তাদের মস্তিষ্কে অধিক পরিমাণ এন্ডোরফিন নিঃসরিত হয়েছে। আবার ওষুধের ক্রিয়ায় যারা বিশ্বাস করেছেন, আর যারা সন্দেহ পোষণ করেছেন- এই দু’য়ের মধ্যেও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বিষণ্ণতা বিরোধী ওষুধের শতরা ৮০ ভাগ সুফলই এ জন্যে পাওয়া যায় যে, রোগীরা বিশ্বাস করেন এতে কাজ হবে। বিকল্প ওষুধের ক্ষেত্রে এর প্রভাব অনেক বেশি। তাই বিষণ্ণ রোগী যদি মজবুত ঈমানের সঙ্গে ধর্মকর্ম পালন করে ও বিশ্বাস করে এতে কাজ হবে তবে খুব শীঘ্রই সুস্থতা লাভ করবে। দীর্ঘ গবেষণার উপসংহারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন, কোনো চিকিৎসা কাজ হবে কিনা তা নির্ভর করবে চিকিৎসা গ্রহণকারীর বিশ্বাস ও নিরাময় প্রত্যাশার ওপর। কারণ রোগী যে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন তাতে কাজ হবে এমন বিশ্বাস ও নিরাময় আকৃতি তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে নিরাময় প্রক্রিয়াকে বেগবান করে তোলে।

যেমন ব্যথার রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যথা মুক্তির জন্যে রোগী যতটা উন্মুখ হয়েছেন, এন্ডোরফিন নিঃসরণও ততটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার ওষুধ ও ডাক্তারের পাশাপাশি নিরাময়ের জন্যে অনুভব করুন সৃষ্টিকর্তার অফুরন্ত নিয়ামত সুস্থতার গুরুত্ব। আর বিশ্বাস করুন নিরাময়ের অসীম ক্ষমতা দেওয়া আছে আপনার মধ্যেই যা সংরক্ষিত আছে আপনার জেনেটিক কোডের সুবিন্যস্ত তথ্যমালায়। এ বিশ্বাসই আপনার মধ্যে সৃষ্টি করবে প্লাসিবো নিরাময় তরঙ্গ, আপনি এগিয়ে যাবেন সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূর পথে।

গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, যারা কখনও ধর্মচর্চা করে না তাদের শ্বাসযন্ত্রের রোগ, বহুমূত্র অথবা সংক্রামক রোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা চার গুণ বেশি। যারা পুনঃপুনঃ ধর্মীয় অনুষ্ঠান, নামাজ, জিকির, প্রার্থনার কান্না, দ্বীনি দাওযাত ইত্যাদি করেন- তারা সহজেই স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে পারেন। সহজেই ধূমপান ত্যাগ করতে পারেন, ব্যায়াম বাড়াতে পারেন, সামাজিক কাজে বেশি অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সুন্দর-স্বাভাবিক চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে পারেন।

যারা ধর্মাচারের সঙ্গে সঙ্গে নিঃস্বার্থ সমাজসেবা, মানবসেবামূলক বিভিন্ন কাজ ও ধর্ম প্রচারের কাজে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজেকে জড়িত রেখেছেন তারাও অনেক বেশিদিন বাঁচেন। আরেক গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা ধার্মিক তাদের মৃত্যুর হার কম, বিষণ্ণতা কম, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা কম এবং অন্যান্য কারণে মৃত্যুর হার কম। এমনকি মূল স্বাস্থ্য এবং সামাজিক উপাদান বিবেচনা করেও দেখা যায়, প্রবীণ ঈমানদার ধার্মিক যারা কমপক্ষে সপ্তাহে একবার নামাজ কিংবা প্রার্থনা সভায় যোগ দিয়েছেন- তাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ ২৮% বেড়ে গেছে।

এ সংক্রান্ত এক স্টাডিতে বলা হয়, যারা বার বার নামাজ, প্রার্থনা ও দোয়া করেন তাদের মৃত্যু হার অন্যদের চেয়ে ৬৪% কম। এছাড়া ধার্মিকরা ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী। সামাজিক সমর্থন বেশি পান এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করেন। তারা বিষণ্ণতায় কম ভুগে থাকেন, দুশ্চিন্তা ও কষ্ট কম পান। রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি থাকে তাদের।

গবেষকরা বলেছেন, অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে কিছু হরমোন নিঃসরণ হয়। যেমন- কর্টিসোল। যদি ঈমান ও ঈমানের আলোকে জীবন যাপন এবং ধর্মীয় আচার-আচরণের সাহায্যে স্ট্রেস কমানো যায়; তবে কর্টিসোল এবং অন্যান্য সাবস্টেশন্সের নিঃসরণ কমে যায়। যা ইমিউন ফাংশনিংয়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এটা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।

এ সংক্রান্ত স্টাডিতে আরও বলা হয়েছে, অধার্মিকদের বেশি মাত্রায় কর্টিসোল নিঃসৃত হয়। যা অন্যকোনো কিছু দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। যেমন, করা যায় না তাদের মধ্যে বেশিমাত্রায় বিষণ্ণ এবং অন্যান্য নেগেটিভ জীবনযাত্রা। গবেষকরা এই বলে বিষয়টরি সমাপ্তি টেনেছেন যে, এই ফলাফল এটাই প্রমাণ করে, বৃদ্ধ ধার্মিক ঈমানদারদের ইমিউন সিস্টেম বেশ স্বাস্থ্যকর।

-অন ইসলাম অবলম্বনে