অভাব মোচন ও যাবতীয় ক্ষতি থেকে বাঁচতে কোরআন

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কোরআন মানবজাতির জন্য হেদায়েত, ছবি: সংগৃহীত

কোরআন মানবজাতির জন্য হেদায়েত, ছবি: সংগৃহীত

মহাগ্রন্থ আল কোরআন, আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নাজিলকৃত সর্বশেষ কিতাব। ‘কোরআন’ শব্দের অর্থ হলো- যা পড়া উচিত, যা পড়তে হবে, যা পড়ার মতো, যা বারবার পড়তে হয়, যা পড়তে থাকতে হয়, যা পড়ার শেষ নেই। এই বিশ্বজগতের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ২৩ বছরব্যাপী তা নাজিল করেছেন।

কোরআনে কারিমে যা আলোচনা করা হয়েছে তা, সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের কল্যাণের জন্য। এ প্রসঙ্গে কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘এই কিতাবে বা বইয়ে সব মানুষের জন্য ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। আর পথনির্দেশ ও নসিহত রয়েছে মুত্তাকিদের জন্য।’ -সূরা আলে ইমরান: ২

বিজ্ঞাপন

কোরআন থেকে আমরা বিশ্ব জগতের পরিচালক আল্লাহর পরিচয়, তার রাসূলের পরিচয়, অন্যান্য নবীর পরিচয়, ফেরেশতাকুলের পরিচয়, তাকদিরের পরিচয়, ভালো-মন্দের পরিণাম, আখেরাতের পরিচয়, হালাল-হারামের পরিচয়, অভিশপ্ত শয়তানের পরিচয়, মানুষের সফলতা ও ব্যর্থতার কারণ, সমগ্র সৃষ্টিজগত এবং এমনকি অশরীরী জীব জিন জাতির অস্তিত্ব জানতে পারি। আমাদের মৌলিক ইবাদতসমূহ যেমন- নামাজ, জাকাত, রোজা, হজ সম্পর্কিত নির্দেশ সরাসরি লাভ করি।

জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে হলে কোরআনে কারিম সবাইকে তেলাওয়াত করতে করতে হবে। কোরআনের তেলাওয়াত প্রাত্যহিক জীবনে সবার পাঠ্য হিসেবে নেওয়াটা খুবই জরুরি। কারণ, কোরআনে কারিম পুরোটাই বরকতপূর্ণ ও ফজিলতময়।

তারপরও বিশেষ কিছু সূরা বা আয়াত রয়েছে, যেগুলোর কথা বিশেষভাবে নবী করিম (সা.) বলে গেছেন। তন্মধ্যে সূরা ফাতেহা, সূরা মূলক, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, আয়াতুল কুরসি, সূরা আল কাহাফ, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস। এই সূরাগুলো অত্যন্ত ফজিলতময় বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখিত সূরা এবং আয়াতের সংক্ষিপ্ত ফজিলত হলো-

এক. সূরা ফাতিহা সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সূরা ফাতেহা’কে আল্লাহতাআলা তার ও বান্দার মাঝে ভাগ করে নিয়েছেন। বান্দা যখন নামাজে সূরা ফাতেহা পাঠ করে প্রতিটি আয়াতের জবাব আল্লাহতায়ালা নিজে দেন। -সহিহ মুসলিম: ৯০৪

দুই. সূরা মূলক সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সূরা মূলক’ তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষ অবধি এর পাঠককে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। -সুনানে আবু দাউদ: ১৪০০

তিন. সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রাতে ‘সূরা বাকারা’র শেষ ২টি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য ওই রাতে অশুভকর সব কিছুর মোকাবেলায় ওই দুইটি আয়াতই যথেষ্ট হবে বা তাহাজ্জুদের নামাজের সওয়াব হবে। -সুনানে আবু দাউদ: ১৪০০

চার. আয়াতুল কুরসি সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত ‘আয়াতুল কুরসি’। যে ব্যক্তি ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত করা হবে এবং সকাল পর্যন্ত তার কাছে শয়তান আসতে পারবে না। যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না। -সহিহ বোখারি: ৪০০৮

পাঁচ. সূরা আল কাহাফ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ‘সূরা আল কাহাফ’র প্রথম ১০ আয়াত মুখস্ত করে নেয় সে দাজ্জালের ফিৎনা হতে নিরাপদ থাকবে, শেষ ১০ আয়াতের ব্যাপারেও উল্লিখিত ফজিলতের বর্ণনা রয়েছে। যে ব্যক্তি জুমার দিনে ‘সূরা আল কাহাফ’ তেলাওয়াত করবে, তার জন্য মহান আল্লাহ দুই জুমার মাঝে নূর প্রজ্জ্বলিত করবেন। -সহিহ বোখারি: ২৩১১

ছয়. পবিত্র কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে সূরা ইয়াসিন বিশেষ তাৎপর্য ও গুরুত্ব বহন করে। সূরা ইয়াসিনকে কোরআনের রূহ বা প্রাণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ফজিলতের দিক থেকে এ সূরা যেমন অদ্বিতীয় তেমনি মানুষের জীবনসংশ্লিষ্ট বিষয় আলোচনায় এ সূরা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক বস্তুর একটি হৃদয় আছে। কোরআনের হৃদয় হলো- সূরা ইয়াসিন। যে ব্যক্তি একবার সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, আল্লাহতায়ালা ১০ বার কোরআন খতমের সওয়াব দেবেন।’ -সুনানে তিরমিজি: ২৮৯১

সূরা ইয়াসিন গোনাহ মাফের মাধ্যম, হাজত (প্রয়োজন) পূরণের মাধ্যম ও মৃত্যুকষ্ট লাঘবের মাধ্যম। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আতা বিন আবি রাবাহ (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, তার সব হাজত পূর্ণ করা হবে।’ -সুনানে দারেমি: ৩৪৬১

সাত. সূরা ওয়াকিয়া। এই সূরা সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, যে ব্যক্তি রাতের অংশে ‘সূরা ওয়াকিয়া’ তেলাওয়াত করবে, অভাব তাকে কোনোদিন স্পর্শ করবে না। বিশিষ্ট এক সাহাবির মৃত্যুর পর তার কন্যাদের খলিফা সাহায্য করতে চাইলে, তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদেরকে তাদের পিতা সূরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করার আমল শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। অতএব তারা কখনও দারিদ্র্য বা অভাবের শিকার হবে না। তাদেরকে সাহায্য দেওয়ার দরকার হবে না। -সহিহ মুসলিম

আট. সূরা ইখলাস সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সূরা ইখলাস’ কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য। ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’-এর প্রতি ভালোবাসা এর তেলাওয়াতকারীকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। সূরা ইখলাস সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় ‘সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস’ তিনবার করে পড়লো ওই ব্যক্তিকে যেকোনো (ক্ষতিকর) জিনিস থেকে নিরাপদ রাখার জন্য এটা যথেষ্ট হবে। -সুনানে তিরমিজি

প্রবন্ধে আলোচ্য আয়াত ও সূরাসমূহের সংক্ষিপ্ত ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও এ সমস্ত আয়াত ও সূরার অনেক ফজিলত রয়েছে। যা এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় করা সম্ভব নয়। তাই আসুন, আমরা আল্লাহর রাসূল (সা.) কর্তৃক বর্ণিত উপরোক্ত আমলগুলো আমৃত্যু প্রতিনিয়ত করার চেষ্টা করি। আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ এবং পরকালে মুক্তির জন্য এসব বড় সহায়ক হিসেবে আল্লাহ কবুল করবেন।