সমুদ্রে কয়েকশ’ রোহিঙ্গাকে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি পাচারকারীদের

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সমুদ্রে কয়েক শতাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে জিম্মি করে তাদের পরিবারের কাছে পাচারকারীরা মুক্তিপণ দাবি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীদের আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। তাদের অভিযোগ, মুক্তিপণ দিলেই কেবল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলে নৌকায় জিম্মি থাকা রোহিঙ্গাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

করোনার বিস্তার রোধে বিভিন্ন দেশের সীমানা বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালানো কয়েকশ’ রোহিঙ্গা কয়েক মাস ধরে সমুদ্রে আটকা পড়েছেন। তারা উন্নত জীবনের আশায়  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া দেশে যেতে মানব পাচারকারীদের ফাঁদে পা দিয়েছেন। ছোট ছোটে নৌকায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সমুদ্রে যাত্রা করেন তারা। খবর রায়টার্সের।

বিজ্ঞাপন

তিনজন রায়টার্সকে জানান, নামার জায়গার সন্ধানের জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলে নৌকাগুলো অবস্থান করছে। এখন সেখান থেকে স্বজনদের মুক্তি দিতে পরিবারের কাছে টাকা চাচ্ছেন মানব পাচারকারীরা।

মোহাম্মদ আইয়াস নামে এক যুবক বলেন, এর আগে চুক্তি ছিল যে তারা (মালয়েশিয়াগামীরা) মালয়েশিয়ার তীরে পৌঁছাতে পারলে পাচারকারীরা টাকা নেবেন, কিন্তু তারা এখনই টাকা চাচ্ছেন।

তিনি জানান, তার ১৬ বছর বয়সী ভাই মালয়েশিয়ার উদ্দেশে বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ছেড়ে গেছে ফেব্রুয়ারিতে। এরপর আর তার কোনো খোঁজ পাননি তারা। কিন্তু সে বেঁচে আছে কিনা তাও তারা জানেন না।মুসা নামে আরেকজন জানান, তার দুই কিশোরী বোনও ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের শিবির ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে সমুদ্রে নৌকায় আটকে রয়েছেন। পাচারকারীদের পক্ষে কাজ করা দালালরা তাদের পরিবারের কাছে তাদের (পাচারকারীদের) একটি মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় ১২,০০০ রিঙ্গিত (২,৮০০ ডলার) দিতে বলেছিলেন। পরিবারটি এর মধ্যে কিছু টাকা দিলেও দুই বোনের ভাগ্যে কি হয়েছে তা জানে না।

কয়েক বছর ধরে নভেম্বর ও এপ্রিলের মধ্যে যখন সমুদ্র শান্ত থাকে, তখন নৌকায় করে সীমান্ত পার হয়ে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর যান রোহিঙ্গারা। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউন থাকায় নৌকাগুলো কোনো সীমান্তে ভিড়তে পারছে না। ফলে তারা সমুদ্রেই আটকা পড়েছেন।

খাদ্য ও পানির অভাবে এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে ফিরে আসা একটি নৌকায় কয়েক ডজন মানুষ মারা গেছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন জীবন নিয়ে ফেরা ব্যক্তিরা।

গত সপ্তাহে একটি ক্ষতিগ্রস্ত নৌকায় করে তীরে আসা ২৬৯ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে যে ওই ২৬৯ রোহিঙ্গার মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগই এতো দুর্বল যে ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারছেন না।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুসারে, কমপক্ষে একটি নৌকা সমুদ্রে ভাসছে, যাতে প্রায় ৩০০ জন যাত্রী রয়েছেন। যাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নৌকাটির অবস্থান জানা যায়নি।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার গোষ্ঠী আরাকান প্রজেক্টের পরিচালক ক্রিস লেওয়া জানান, এ নৌকাটি সমুদ্রের বুকে পাচারকারীদের শিবিরে পরিণত হয়েছে। মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রত্যেক জিম্মির কাছে ৫০০০ মালয়েশীয় রিঙ্গিত (১৭৭০ ডলার) দাবি করেছেন পাচারকারীরা।

মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের জলসীমায় কোনো নৌকা আছে কি না সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে একটি মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, গত সপ্তাহে প্রায় ৩০০ রোহিঙ্গা বহনকারী একটি নৌকাকে ফিরিয়ে দিয়েছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ।

এদিকে থাইল্যান্ডের সামুদ্রিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নৌকাটি থাই জলসীমায় ছিল না। তবে ওই নৌকা থেকে মাছ ধরার নৌকাগুলোর কাছে রসদ চাওয়া হয়েছিল। অন্য দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন থাই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কয়েকশ’ রোহিঙ্গা বহনকারী তিনটি নৌকা মালয়েশিয়ার কাছাকাছি থাই দ্বীপ কোহ আদাঙ্গে ছিল।

২০১৫ সালে মানব পাচারকারী নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হয়। পাচারকারীরা সে সময় সমুদ্রে ভাসমান নৌকার যাত্রীদের এতো সামান্য খাবার ও পানি দিত যে অনেকে নৌকায়ই মারা যান।