১ মিনিটও অপচয় নয়, ভ্যাকসিনের ব্যাপক উৎপাদনে প্রস্তুত চীন
করোনা ভাইরাসকরোনাভাইরাসের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন ‘করোনাভ্যাক’-এর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেছে বেইজিং ভিত্তিক কোম্পানি সিনোভ্যাক বায়োটেক।
বানরের শরীরে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনটির প্রয়োগে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া গেছে বলেও দাবি করেছে কোম্পানিটি।
যে চারটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে চীন, তার একটি পরিচালনা করছে সিনোভ্যাক বায়োটেক। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস রোধে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনটির ব্যাপক উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন।
যদিও ভ্যাকসিনটি সদ্যই মানব শরীরে পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, করোনা প্রতিরোধের জন্য প্রতি বছরে ১০ কোটি ডোজ উৎপাদন করতে তারা প্রস্তুত।
একটি নিষ্ক্রিয় প্যাথোজেনের ওপর ভিত্তি করে এই ভ্যাকসিনের হাজারো শট সাদা-কমলা রঙের একটি প্যাকেজে সজ্জিত করা হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে করোনাভ্যাক।
যদিও ভ্যাকসিনটিকে অনুমোদন পেতে আরও দীর্ঘ পথ পারি দিতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুমোদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানিটিকে এটাও দেখাতে হবে যে, তারা বৃহৎ পরিসরে ভ্যাকসিনটি উৎপাদন করতে সক্ষম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, একটি টিকা তৈরি করতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে এবং সিনোভ্যাক এখনো জানে না তাদের অর্ধ-মিলিলিটারের ইঞ্জেকশনটি কবে নাগাদ বাজারের জন্য প্রস্তুত হবে।
‘প্রত্যেকে একই প্রশ্ন তুলছেন’ বলে সংবাদ সংস্থা এএফপির কাছে মন্তব্য করেছেন সিনোভ্যাকের ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্টের পরিচালক লিউ পেইচেং।
তবে বিশ্বব্যাপী ভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধ উৎপাদন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সিনোভ্যাকের। ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লুর টিকা বাজারজাতকারী প্রথম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি হলো সিনোভ্যাক বায়োটেক।
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের মতে, বিশ্বের প্রায় একশোটিরও বেশি পরীক্ষাগারে ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা চলছে। এর মধ্যে সিনোভ্যাকসহ মাত্র সাতটি বর্তমানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে।
চীনের পূর্ব জিয়াংসু প্রদেশে এপ্রিল মাসে ১৪৪ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর ভ্যাকসিনটি পরীক্ষা চালিয়েছে সিনোভ্যাক। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলির প্রথম দুটি পর্যায়ের পরে জুনের শেষ নাগাদ ভ্যাকসিনটির আশাব্যাঞ্জক ফল পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী কোম্পানিটি।
পরীক্ষার তৃতীয় ধাপ সম্পন্ন হলেই নির্ধারণ করা যাবে ভাইরাসের বাহকের মধ্যে ভ্যাকসিনটি কার্যকর কিনা।
তবে সিনোভাক তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ, চীনে ভাইরাসটির সংক্রমণ কমে যাওয়ায় ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক তারা পাচ্ছে না।
ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর উহান শহর সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করায় করোনাভাইরাস সারা দেশব্যাপী নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ৬শ’ জন আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং প্রতিদিন মাত্র কয়েকটি করে নতুন কেস পাওয়া যাচ্ছে।
এ কারণে সিনোভ্যাককে ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য বিদেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবী পেতে হবে।
এ ব্যাপারে সিনোভ্যাকের আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিচালক মেং উইং বলেন, বর্তমানে আমরা ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে কথা বলছি। তৃতীয় ধাপের জন্য কয়েক হাজার লোকের প্রয়োজন হবে। তবে ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য কোন দেশ থেকে এই পরিমাণ স্বেচ্ছাসেবী পাওয়া সহজ নয়।
পরবর্তী ধাপে সাফল্য পেলেও সিনোভ্যাক পুরো বিশ্বের জনগণের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত টিকা তৈরি করতে সক্ষম হবে না বলে জানান তিনি।
মেং উইং বলেন, ব্যাপক হারে ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে সংস্থাটি বিদেশি অংশীদারদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। গবেষণা কাজের পাশাপাশি সিনোভ্যাক ব্যাপক উৎপাদনের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা দিনরাত কাজ করছি। আমাদের কর্মীরা তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। ভ্যাকসিনটি তৈরির জন্য আমরা এক মিনিটও অপচয় করি না।