লকডাউনে বেড়েছে পারিবারিক সহিংসতা

  করোনা ভাইরাস
  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউন ব্যবস্থায় চলে গেছে অনেক শহর ও দেশ। আর ব্যাপকভাবে জীবন বাঁচানোর এই প্রচেষ্টা দুর্বলদের আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

সঙ্গরোধে থাকা অবস্থায় শিশু ও নারীদের ওপর পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ান। শিশু ও নারী নির্যাতন নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো এবং সহিংসতার শিকার হওয়াদের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যমটি।

বিজ্ঞাপন

সংস্থাগুলো জানিয়েছে, সঙ্গরোধে থাকা অবস্থায় ব্রাজিল, জার্মানি, ইতালি, চীন, সাইপ্রাসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পারিবারিক সহিংসতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রথম পাওয়া যাওয়া চীনের হুবেই প্রদেশে লকডাউন চলা অবস্থায় ফেব্রুয়ারি মাসে পারিবারিক সহিংসতার মামলা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ বিষয়ে প্রদেশটির পুলিশের কাছে মামলা দায়ের হয়েছিল ৪৭টি। কিন্তু এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে ১৬২ এ দাঁড়িয়েছে।

হুবেইয়ের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ওয়ান ফি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সিক্সথ টোন ওয়েবসাইটকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মহামারিটি পারিবারিক সহিংসতার ওপর বিশাল প্রভাব ফেলেছে। আমাদের পরিসংখ্যান অনুসারে, সহিংসতার ৯০ শতাংশ মহামারি ভাইরাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

ব্রাজিলের স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল গ্লোবো তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ব্রাজিল সরকার পরিচালিত ড্রপ-ইন সেন্টার ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসে পারিবারিক সহিংসতার তীব্রতা বাড়তে দেখেছে।

পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে কাজ করা রিও শহরের বিচারক আড্রিয়ানা মেলো জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে পারিবারিক সহিংসতা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এখন যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি তা মোকাবিলার জন্য আমাদের শান্ত থাকা দরকার।

স্পেনের কাতালান আঞ্চলিক সরকার বলছে, লকডাউনের সময়কালে সরকারি হেল্পলাইনে পারিবারিক সহিংসতার ফোন ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ৯ মার্চের পর থেকে সাইপ্রাসের সরকারি হেল্পলাইনে ফোনকল ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোসিয়ায় অবস্থিত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ সংস্থার অন্নিতা ড্রাকা বলেন, নাটকীয়ভাবে ফোনকলের পরিমাণ বেড়ে চলছেই। দিনের ২৪ ঘণ্টায় কোনো কোনো স্থান থেকে ফোনকল আসছেই।

গার্ডিয়ান তাদের প্রতিবেদনে জানায়, এই উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান কেবলমাত্র সেই ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেখানে মহিলারা সহায়তা চাইতে সক্ষম হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুরা ফোনকল করতে সক্ষম হচ্ছে না।

এদিকে নারী ও শিশু নিয়ে কাজ করা ইতালির কর্মীরা বলছে, এ সমস্ত বিষয়ে ফোনকল হ্রাস পেয়েছে। তবে খুদে বার্তার পরিমাণ বেড়ে গেছে।

ইতালিয়ান নারীদের সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করা একটি সক্রিয় গ্রুপ থেকে জানানো হয়, আমাদের কাছে এক মহিলা একটি খুদে বার্তা পাঠিয়েছে যে সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে সে নিজেকে বাথরুমে বন্দি করে রেখেছে। আর সে সাহায্যের জন্য আমাদের কাছে খুদে বার্তাটি পাঠায়। তিনি আরও বলে, বর্তমানে কঠোর লকডাউন ও জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে। নারীরা বাইরে যেতে না পারায় তারা হতাশায় ভুগছে।

ফ্রান্সের রোমের কাসা লুকা ওয়াই সিয়েস্তার আশ্রয় কেন্দ্রের কর্মী বেভিলাকেয়া বলেন, তাদের সমস্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রয়েছে। সাহায্যের আবেদন চাওয়া নারীরা চাইলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।

এদিকে স্পেনে লকডাউন ব্যবস্থা রয়েছে। দেশটিতে কেউ বাইরে বের হলে তাকে জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো নারী নির্যাতনের খবর জানাতে বের হলে তাদের জরিমানা করা হবে না বলে জানিয়েছে স্পেন সরকার।

নারী নির্যাতন নিয়ে কাজ করা ইউমেন ডেলিভারি সংস্থার আইনজীবী মারসি হার্শ বলেন, সঙ্কটময় সময়ে এসব ঘটনা বেড়ে যায়। এ নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত। এর ফলে নারীদের ক্ষমতা কমে যায়। আর এটি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।

সঙ্গরোধে থাকা নারী ও শিশুদের পারিবারিক সহিংসতা থেকে রক্ষা করতে বহু দেশ তাদের আইনি পরিবর্তনের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের উইমেনস ইকুয়ালিটি পার্টির নেতা মান্ডু রেইড লকডাউনের সময় অপরাধীদের বাড়ি থেকে অপসারণ এবং সুরক্ষা আদেশের জন্য আদালতের ফি মওকুফ করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে ইতালির ট্রান্টোর এক বিচারক এ সম্পর্কিত বিষয়ে একটি রায় দিয়েছেন। রায়ে তিনি পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে নির্যাতনকারীকে অবশ্যই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে রুল জারি করেছেন। ইতালির ট্রেড ইউনিয়ন এই সিদ্ধান্তকে মৌলিক বলে সম্বোধন করেছে।

এক বিবৃতিতে ইউনিয়ন জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে বাড়িতে সীমাবদ্ধ থাকা সবার পক্ষে কঠিন। তবে এ সময়ে নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। তাদের জন্য এটি একটি বাস্তব দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সহিংসতা রোধে জার্মানিতে গ্রিন পার্টির সংসদীয় নেতা ক্যাটরিন গারিং সঙ্গরোধে থাকা নারীদের জীবন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া তিনি সহিংসতা হয় না এমন পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।