আতঙ্কিত ক্রয় ও লকডাউন খাদ্যের দাম বাড়িয়ে তুলবে

  করোনা ভাইরাস
  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: রয়টার্স

ছবি: রয়টার্স

নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই বেশি করে খাবার কিনে মজুদ করে রাখছে। আর ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের দাম বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) প্রধান অর্থনীতিবিদ আব্দুলরেজা আব্বসিয়ান।

শনিবার (২১ মার্চ) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের কাছে এই শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

রোম থেকে ফোনে আব্দুলরেজা রয়টার্সকে জানান, মূল রফতানিকারক দেশগুলোতে খাদ্যশস্য এবং তেলবীজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেহ মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন এবং আতঙ্কিত হয়ে মানুষ অধিক খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করছে। এতে বৈশ্বিক খাদ্যের দাম বৃদ্ধি বেড়ে যাবে।

তিনি আরও জানান, আমাদের শুধু দরকার আতঙ্ক তৈরি করে বড় রফতানিকারক দেশগুলো থেকে আমদানি করা। যেরকমটা মিলার সরকার করেছিল। এটা সরবারহের কোনো সমস্যা নয়। খাদ্য সুরক্ষা করার জন্য এটি আমাদের আচরণগত পরিবর্তন। যদি মূল ক্রেতারা চিন্তা করেন তারা মে ও জুনে গম বা চালের সঠিক চালান পাবে না তাহলেই তাদের ধারণাই বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কটের দিকে ফেলে দিবে।

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আমেরিকা, ইউরোপ ও অন্যান্য ধনী রাষ্ট্রগুলো ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু কোভিড-১৯ ভাইরাসের ফলে ওই অঞ্চলের মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি বিপদের মধ্যে রয়েছে।

চীনের উহানে পাওয়া ছোঁয়াচে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী মারা গেছে ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি। এই মহামারিটি বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। এমনকি এটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু এর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।

বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে চাল, ডাল, টয়লেট পেপার, স্যানিটাইজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিপুল পরিমাণে ক্রয় করছেন।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, আমেরিকার শিকাগোতে গম জাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ। যা সর্বশেষ ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় চাল আমদানিকারক দেশ থাইল্যান্ডে চালের দাম বেড়েছে অধিক হারে। ২০১৩ সালের আগস্টের পর যা সর্বোচ্চ।

এদিকে ফ্রান্সে আতঙ্কিত হয়ে মানুষ পাস্তা ও ময়দা জাতীয় জিনিস বেশি পরিমাণে ক্রয় করছে। আর করোনার ফলে খাদ্য শস্যের কারখানা ও বন্দর থেকে পণ্য আনতে কর্মী ও যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া সীমান্ত বন্ধ থাকায় খাদ্যশস্য আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী গমের মজুদ হবে ২৮৭ দশমিক ১৪ মিলিয়ন টন। যা আগের বছরে ছিল ২৭৭ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন টন। অন্যদিকে চাল মজুদ হবে ১৮২ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন। যা আগের বছর ছিল ১৭৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মজুদের ফলে বৈশ্বিক একটি বড় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

এ বিষয়ে আইকন কমোডিটিসের পরিচালক ওলে হউই জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৪০ মিলিয়ন টন ভুট্টা মজুদ রয়েছে। যা খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মূলত উদ্বেগ হল সঠিক সময়ে খাবারটি পৌঁছানো যাবে কিনা।

চলতি সপ্তাহে বাজারের অনিশ্চয়তা দেখে এশিয়ার আমদানিকারকরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক ময়দা আমাদানিকারক এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা চাহিদা সম্পর্কে নিশ্চিত নয়। এমনকি জুন ও জুলাইতে কেমন হবে তাও আমরা জানি না। বর্তমানে রেস্তোরাঁ ব্যবসা হ্রাস পেয়েছে। তাই চাহিদা কিছুটা কম।

এদিকে অপরিশোধিত তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ তাদের অধিকাংশ খাদ্য আমদানি করতে হয়।

এ বিষয়ে এফএও'র আব্দুলরেজা বলেন, তেলের দাম ও মুদ্রা হ্রাসের কারণে তেল রফতানিকারক দেশগুলোর শস্য কেনার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।