থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের স্বনামধন্য হাসপাতাল বামরুনগ্রাড ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে এক ক্যান্সারের রোগীর শরীরে এইচআইভি আক্রান্ত ব্লাড ট্রান্সফিউশন (রক্ত পরিবহন) করার কথা স্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অসাবধানতাবশত এই ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছে তারা।
একজন রোগী তার ক্যান্সারের কেমোথেরাপির জন্য হাসপাতালে ৭০ লাখ বাথ বা ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা প্রদান করে। এ সময় তার শরীরে অসাবধানতাবসত এইচআইভি পজিটিভ ব্লাড ট্রান্সফিউশন (রক্ত পরিবহন) করিয়ে দেয়া হয়। এরই মধ্যে বামরুনগ্রাড হাসপাতাল নিজেদের ভুল স্বীকার করেছে এবং জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছে।
এক বিবৃতিতে হাসপাতালটি জানিয়েছে, রোগীর সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটায় বারমুনগ্রাড ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল সত্যিকারভাবেই দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমাপ্রার্থী। ওই রোগীর সঙ্গে যেটা ঘটেছে তার জন্যে আমরা আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং রোগীর পরিবার যে ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করছি।
এই হাসপাতালে স্থানীয়দের চেয়ে বিদেশি রোগীর সংখ্যাই বেশি থাকে। যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশের উচ্চবিত্তের মানুষ। থাইল্যান্ডের সেরা এবং সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই হাসপাতালটি জানিয়েছে, এই রক্ত রেডক্রসের থেকে নেয়া হয়েছিল। তবে যেই সময় রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল, সেই সময় রক্তে এইচআইভি ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রক্ত পরীক্ষার সময় ভাইরাসে বহনকারী ব্যক্তি উইনডো পিরিয়ড রিস্কে ছিলেন। এই সময়টা হচ্ছে, ওই রক্ত প্রদানকারী ব্যক্তির রক্তে এইচআইভি ভাইরাস প্রাথমিক অবস্থায় ছিল যেটা পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। এই রক্ত কাউকে প্রদান করলে সেখানে ধরা পড়া এবং আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে খুবই কম।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এর ফলে হাসপাতাল সব ধরনের কার্যকরী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই ওই রোগীকে রক্ত প্রদান করেছে। যেখানে রোগীকে আগে থেকেই জানানো হয়েছে ব্লাড ট্রান্সফিউশনের কারনে এইচআইভি'র মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং সেই সময় তার জন্যে ব্লাড ট্রান্সফিউশনও ছিল অবধারিত।
২০১৭ সালে রেড ক্রসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার এক বা দুই সপ্তাহ পরই জানা যাবে ভাইরাসের উপস্থিতি।
এই বিষয়টি প্রথম নজরে আসে যখন লিউকেমিয়া রোগী হিসেবে ২৪ বছর বয়সী তাকেরু নোপ্পাসিন জিন জানান তিনি বামরুনগ্রাড হাসপাতালে চিকিৎসাকালীন সময়ে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়।
স্থানীয় একটি গণমাধ্যমে দেয়া স্বাক্ষাৎকারে ওই জাপানিজ বংশোদ্ভুত ব্যক্তি জানিয়েছেন, ২০০৪ সালে ৯ বছর বয়সে তিনি ওই হাসপাতালে কেমোথেরাপি নেয়া শুরু করেন। হাসপাতাল থেকে বলা হয় তার ১৪ ডোজেজ ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন। তিনি ভালভাবেই ডোজগুলো ফলো করছিলেন। তবে ১২ তম ভিজিটে ব্লাড ট্রান্সফিউশনের পর তার শরীরে যক্ষ্মা এবং বিভিন্ন রোগের উপসর্গ ধরা পড়ে।
পরবর্তীতে চিকিৎসক তাকেরুকে জানান, তিনি এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন। রক্তদাতা একজন পুলিশ ছিলেন যিনি কয়েক বছর আগে মৃত্যুবরণ করেছেন।'
তাকেরুর পরিবার জানান, প্রাথমিকভাবে তারা বামরুনগ্রাডের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছিলেন। তবে পরে হাসপাতাল বিনামূল্যে চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দিলে আর মামলা করেননি।
তবে পরিবারটি জানিয়েছে, তাকেরু সাপ্লিমেন্টারি হারবাল মেডিসিন চাইলে হাসপাতাল তার চিকিৎসা প্রদান বন্ধ করে দেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিবৃতিতে হাসপাতালটি জানিয়েছে, এই রোগীকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়া হবে এবং সকল ধরনের নীতি মেনে চলে এবং সুযোগ সুবিধা প্রদান করেই তাকেরুর পাশে থাকবে হাসপাতাল।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী থাইল্যান্ডের এই বামরুনগ্রাড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান।