কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের ঘটনায় নিন্দা জানালেন মমতা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার (২২ মার্চ) সকালে তিনি এক্স-এ পোস্ট করে গ্রেফতারির নিন্দা করেছেন।

এনডিটিভি জানিয়েছে, কেজরির গ্রেফতারের পর তার স্ত্রী সুনীতাকেও ফোন করেন মমতা। ওই ফোন কলে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

সেই সঙ্গে মমতা জানিয়েছেন, শুক্রবার এই সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে নির্বাচন কমিশনে যাবে ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধি দল, যে প্রতিনিধি দলে তৃণমূলের দুই সদস্যও থাকবেন।

এক্স-এ মমতা লিখেছেন, ‘জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি সুনীতা কেজরিওয়ালের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছি এবং পাশে থাকার বার্তা দিয়েছি। বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদের বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিন্তু, বিজেপির সঙ্গে জোটে থাকলে ইডি, সিবিআইয়ের তদন্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন, দুর্নীতি চালিয়ে যেতে পারছেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা গণতন্ত্রের উপর নির্মম আঘাত।’

মমতা আরও লিখেছেন, ‘‘আমাদের ‘ইন্ডিয়া’র সদস্যেরা শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করবেন এবং আদর্শ আচরণবিধি জারি থাকার সময়ে বিরোধী নেতাদের এভাবে টার্গেট করার বিরোধিতা করবেন। কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধি দলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে থাকবেন ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং নাদিমুল হক।’’

উল্লেখ্য, দিল্লির আবগারি মামলায় আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান কেজরিওয়ালকে মোট ৯ বার সমন পাঠিয়েছিল ইডি। কিন্তু, ৮ বারই হাজিরা এড়িয়ে যান তিনি। শেষ পাঠানো সমনে বৃহস্পতিবারই ইডি দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু হাজিরা না দিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কেজরিওয়াল।

এর পর কেজরিওয়ালের বাড়িতে হানা দেয় ইডির কর্মকর্তরা। এনডিটিভি জানিয়েছে, গ্রেফতারের আগে কেজরিওয়ালের নিজ বাড়িতেই তাকে আবগারি নীতি সংক্রান্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি।

দিল্লি হাইকোর্ট আবগারি মামলায় কেজরিওয়ালকে রক্ষার বিষয়টি প্রত্যাহার করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইডির একটি দল তার বাড়িতে পৌঁছায় বলে জানা গেছে।

সূত্রের খবর, ১২ জনের ইডি কর্মকর্তাদের একটি দল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যান। তল্লাশি অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় নথি দেখিয়েই কেজরিওয়ালের বাড়িতে প্রবেশ করে তারা। এ সময় তার বাড়ির সামনে মোতায়েন করা হয় দিল্লি পুলিশ। নিরাপত্তাও আঁটসাঁট করা হয়। তল্লাশি অভিযানের সময় কাউকেই বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

আপের অভিযোগ হলো, ইডির লক্ষ্য জিজ্ঞাসাবাদ নয়। এতদিন ধরেও তারা এই মামলায় কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে কোনও তথ্য-প্রমাণ পায়নি। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে সমন পাঠিয়ে তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি সুরেশকুমার কাইথ এবং বিচারপতি মনোজ জৈনের ডিভিশন বেঞ্চে কেজরিওয়ালের আবেদন সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল।

শুনানি শেষে ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। তবে আমরা এই পর্যায়ে মামলাকারীকে কোনও সুরক্ষা দেওয়ার কথা দিচ্ছি না।’

এই রায়ের পরেই তৎপর হয় ইডি। যদিও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তল্লাশি অভিযান নিয়ে আপের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

আবগারি নীতি মামলায় বিআরএস নেত্রী কে কবিতাকে কয়েক দিন আগেই গ্রেফতার করেছে ইডি। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে ইডি হেফাজতে রয়েছেন তিনি। কবিতা ছাড়াও এই মামলায় এখনও পর্যন্ত আপের দুই প্রবীণ নেতা সিসৌদিয়া এবং আপের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং গ্রেফতার হয়েছেন।

এর আগে অভিযোগ ওঠে যে, দিল্লি সরকারের ২০২১-২২ সালের আবগারি নীতি বেশ কিছু মদ ব্যবসায়ীকে সুবিধা করে দিয়েছিল। এই নীতি প্রণয়নের জন্য যারা ঘুষ দিয়েছিলেন, তাদের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। আপ সরকার সেই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে।

কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের পর আম আদমি পার্টির (আপ) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন না কেজরিওয়াল। প্রয়োজনে জেলে বসেই সরকার চালাবেন।

উল্লেখ্য, কেজরিই ভারতের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যাকে ক্ষমতায় থাকাকালীন গ্রেফতার করা হলো। কিছু দিন আগে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও জমি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করে ইডি। তবে গ্রেফতার হওয়ার আগে রাজভবনে গিয়ে ইস্তফা জমা দিয়েছিলেন হেমন্ত। তার জায়গায় নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন চম্পই সোরেন।