বাংলাদেশের নির্বাচন ও তরুণদের ভাবনা-চিন্তা: আল জাজিরা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কয়েক দশক ধরে শক্তিশালী নারী নেতৃত্বে চলছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক লড়াই। ১৬৯ মিলিয়ন নাগরিকের এই দেশটিতে আরেকটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ।

রোববার (৭ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের চিন্তাভাবনা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে নানা তথ্য।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিনের মেরুকৃত রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ থেকে মুক্তি চায় বাংলাদেশের লাখ লাখ তরুণ ভোটার। দেশের জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ ১৫-২৯ বছর বয়সী। পাশাপাশি ১১৯ দশমিক ১ মিলিয়ন নিবন্ধিত ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

তরুণ ভোটারদের আশা প্রত্যাশার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আল জাজিরার এই প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি শিল্প, প্রাণবন্ত ই-কমার্স সাইট এবং একটি ক্রমবর্ধমান পাবলিক ডিজিটাল অবকাঠামো বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন এ নির্বাচনে। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে তরুণদের জন্য ১৫ মিলিয়ন নতুন চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। শনিবার নির্বাচনী সমাবেশে এক ভাষণে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে তরুণ ভোটারদের সমর্থন চান হাসিনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক  শাহরিমা তানজিন আর্নি হাসিনাকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ চিন্তাধারার রূপকার এবং একজন সাহসী নেত্রী বলে উল্লেখ করেছেন। শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তাভাবনার প্রশংসা করেন তিনি। শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এবং মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার পেছনে এই সরকারের অবদান অনেক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুর রহিম রনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, তাদের বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে এবং বিচারব্যবস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করবে। আমি চাই যেকোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ না করুক।’

গত বছরের অক্টোবরে ‘এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ নিয়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পরিচালিত একটি অনলাইন সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৬৯ শতাংশ মানুষ দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতিকে উন্নয়নের প্রধান বাধা হিসাবে বিবেচনা করেন। 

ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র ২০ বছর বয়সী রাউল তামজিদ রহমান বলেন, ‘আমরা রাজপথে কোনো বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা চাই না। পড়াশুনা শেষে আমি একটি চাকরি করতে চাই বা শান্তিপূর্ণভাবে নিজের ব্যবসা শুরু করতে চাই। তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে রাজনীতিবিদ এবং নীতিনির্ধারকদের প্রতি আমাদের এমনটাই আহ্বান। সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ যেন নাগরিকরা পায় তেন পরিবেশ নিশ্চিত হোক এমনটাই চাওয়া আমার।’

‘অত্যাধুনিকীকরণ’ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগের উত্থান বা ডিজিটাল বুম  শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। শেখ হাসিনা মোবাইল ফোন সেক্টর পরিচালনার জন্য তিনটি অপারেটরকে বিনামূল্যে লাইসেন্স প্রদান করলে এই উত্থান ঘটে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের মতে, দেশে এখন প্রায় ১২৭ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। এদের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে  ১১৪মিলিয়ন। ৮ হাজার ৫০০ গ্রামীণ পোস্ট অফিসের একটি নেটওয়ার্ককে ই-সেন্টারে পরিণত করতে মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে সরকার। তরুণদের নিয়ে সরকারের এমন অভিনব চিন্তাভাবনা এবং ডিজিটালাইজেশন কর্মসূচি শেখ হাসিনাকে তরুণদের মাঝে আস্থাভাজন করে তুলেছে।

কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি এবং ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জ করছে। দেশটি তার আর্থিক সুরক্ষার জন্য ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছিল। ২০১৮ সালের একটি বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ জন্মেছে তরুণদের মাঝেও। ভুল তথ্য, হ্যাকিং এবং জনগণের অধিকার রক্ষার নামে এসব আইন হলেও বাকস্বাধীনতা দমনেই এসবের অপব্যবহার হচ্ছে বলে মনে করে বাংলাদেশের অধিকাংশ তরুণরা।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির বলেন, চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের ডিজিটাল উন্নয়ন তরুণদের আকৃষ্ট করছে।

প্রযুক্তি উদ্যোক্তা আছিয়া নীলা বলেন, ‘প্রযুক্তি আমার দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সংযোগ স্থাপনে সহায়ক। তিনি বলেন, অনেক তরুণরা দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্রের কারণে হতাশবোধ করে। তাই রাজনীতিবিদদের উচিত তরুণদের ভাবনা মাথায় রেখে সুস্থ রাজনীতিতে মনোনিবেশ করা এবং তরুণদের উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করা।