স্পেনে ‘স্মৃতিতে অম্লান জনতার কামরান’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা
-
-
|
স্পেনে ‘স্মৃতিতে অম্লান জনতার কামরান’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনাছবি: সংগৃহীত
শহর থেকে নগর হিসেবে সিলেটের যখন জন্ম হয়, তখন থেকেই নগরপিতা পরিচয়টি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সাথে সম্পৃক্ত। নগরবাসী এবং কামরান এখনও একটি অবিচ্ছেদ্য নাম। নামটির সাথে এখনো বিশেষণ হিসেবে যুক্ত হয় ‘সিলেটের মেয়র সাব’ ‘জনতার কামরান’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
গেল ১৫ জুন নগরবাসীর প্রিয় এ অভিভাবক করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সেই শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি সিলেটের মানুষ। জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য। প্রিয় নেতার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যম জুড়ে প্রকাশিত হয় শোক।
মিডিয়াগুলোতে স্মৃতিচারণ মূলক লেখাসহ প্রয়াতের বর্ণাঢ্য জীবনের কাহিনী নিয়েও প্রকাশিত হয় অনেক তথ্যবহুল লেখা। ভার্চুয়াল মাধ্যমেও হচ্ছে আলোচনা ও শোক সভা। তেমনি একটি ভার্চুয়াল স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা শনিবার (২০ জুন) লন্ডন ভিত্তিক অনলাইন টিভি চ্যনেল জালালাবাদ টিভির নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন গুড ইভনিং স্পেনে ‘স্মৃতিতে অম্লান, জনতার কামরান’ অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়াল লাইভের কমেন্টে বাংলাদেশ, লন্ডন, কানাডা, আমেরিকা, ইতালি, ফ্রান্স এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা যুক্ত হন।
জালালাবাদ টিভির সিও লেখক আনোয়ার শাহাজানের সম্পাদনায় ও সাংবাদিক কবির আল মাহমুদের সঞ্চালনায় জালালাবাদ টিভির ভার্চুয়াল স্টুডিওতে আলোচনায় অংশ নেন সিলেট মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের রাজনৈতিক স্বজন মুশফিক জায়গীরদার, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সহকারী প্রক্টর ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্বাছ উদ্দিন, বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পারিবারিক স্বজন সিলেট জেলা প্রেস মালিক সমিতির সভাপতি ও সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মেহেদী কাবুল এবং সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক, লেখক ও সংগঠক প্রণবকান্তি দেব।
সিলেট মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার বলেন, প্রথমে কমিশনার, এরপর পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হন। সবার কাছে তিনি ‘মেয়র কামরান’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। ১/১১ থেকে শুরু করে এমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই, যেখানে মেয়র কামরানের সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বারবার নির্যাতিত ও গ্রেনেড হামলারও শিকার হয়েছেন। মেয়র কামরান সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে এমন কোনো অনুষ্ঠান নেই, যেখানে তিনি ছিলেন না। তিনি গরিবের কামরান হিসেবেও পরিচিত। সুখে দুঃখে সবসময় নগরবাসীর সাথেই তিনি ছিলেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি নগরবাসীকে অনেক কিছু দিয়েছেন। নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে মেয়র কামরানের উন্নয়নের ছোঁয়া রয়েছে।
সিলেটে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি সহকারী প্রক্টর ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্বাছ উদ্দিন বলেন, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সিলেট মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে কামরান দলীয় প্রার্থীদের জন্য চষে বেড়িয়েছেন গোটা সিলেট বিভাগ। সর্বশেষ ২০১৮ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) চতুর্থ নির্বাচনে কামরান পরাজয় বরণ করেন। তবে তিনি দল কিংবা নেতাকর্মীদের জন্য আগের অবস্থান থেকে সরে যাননি। পরাজয় তার জন্য বেদনার হলেও তিনি দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন। দলীয় কর্মসূচি ও নেতাকর্মীদের আগের মতোই সময় দিচ্ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সিলেটবাসীর কাছে মেয়র সাব হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
সিলেট নামের পৌর শহরের ছায়াবৃক্ষ হয়েও ছিলেন কামরান। সব মিলিয়ে নগর সিলেটের সমার্থক হয়ে ওঠেন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ১/১১ পরবর্তী দুঃসময়েও নানা ষড়যন্ত্র তাকে সিলেটের মানুষের কাছ ছাড়া করতে পারেনি। অসুস্থ হওয়ার আগে করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান কামরান। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যান অসহায় মানুষদের সহায়তায়। মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছোটবেলা থেকেই, মা সব সময়ই সাহস যুগিয়েছেন তাকে। সে সাহসের ওপর ভর করে কামরান আজীবন মানুষের সেবা করে গেছেন। দলের প্রতিটি দুঃসময়ে তিনি হাল ধরেছেন শক্ত হাতে। তাকে বলা হতো আওয়ামী লীগের মেসি।
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক এবং লেখক ও সংগঠক প্রণবকান্তি দেব বলেন, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান অত্যন্ত সুদক্ষ রাজনৈতিক নেতা হওয়ার পাশাপাশি মানুষ হিসেবেও খুবই মহৎ মনের এবং সাবলীল চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। শহরের একজন দিনমজুরের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে জাতীয় কোনো রাজনৈতিক নেতার সিলেট আগমন, খেলাধুলা কিংবা ধর্মীয় বিশেষ কোনো আয়োজন, সব সময় সবখানে কামরানের উপস্থিতি ছিল সিলেটের মানুষের কাছে খুব নিয়মিত বিষয়। রাজনীতিতে একটি নির্দিষ্ট দলের অন্তর্ভুক্ত হলেও তিনি সব সময় ছিলেন সহিংসতার ঊর্ধ্বে, তার বিপক্ষীয় দলের নেতাকর্মীদের প্রতি তার মাঝে সব সময় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেখা যেত। তার মৃত্যুতে সিলেটের মানুষ কেবল একজন নেতাই হারায়নি, সিলেট নগরী হারিয়েছে একজন অভিভাবককে। তার এ শূন্যস্থান পূরণ করার মতো নয়।
জালালাবাদ টিভি করোনাকালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য তথ্য, কমিউনিটি, বিনোদন, স্বাস্থ্য, প্রবাসীদের জীবন, ব্যবসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাঙালিদের নিয়ে ভার্চুয়াল লাইভের আয়োজন করে আসছে।
