ভাষাবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় ‘মিশ্র ভাষা’ বলে একটি ধারণার প্রচলিত আছে। যেখানে বহু জাতি, বহু সংস্কৃতির মেলবন্ধন থাকে, সেখানে মিশ্র ভাষা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে ‘মিশ্র ভাষা’ নামক পরিচিতি একেবারেই প্রযোজ্য না হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে দিনে দিনে বাংলা ভাষা নানা মিশ্রণে আকীর্ণ হচ্ছে। বিশ্বায়নের আন্তঃযোগাযোগ ও মিডিয়ার কারণে শুদ্ধ ও প্রমিত ভাষায় প্রতিনিয়ত মিশ্রন হচ্ছে, যা থেকে বাংলা ভাষাও রেহাই পাচ্ছে না।
এটাও ঠিক যে, ভাষাকে বয়ে চলতে হলে নানা ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে অনেক কিছুই আহরণ করতে হয়। খোদ বাংলা ভাষাতেই অজস্র বিদেশি শব্দ রয়েছে। কিন্তু সেগুলো বাংলা ভাষা কাঠামোতে আত্মস্থ হয়েই আছে। বিকৃত মিশ্রণে পরিণত হয়নি। ভাষায় বিভিন্ন নতুন ও বিদেশি শব্দের অন্তর্ভুক্তি গ্রহণযোগ্য হলেও ভাষার মধ্যে অপরিকল্পিত মিশ্রণ বিপজ্জনক।
বাংলা ভাষায় মিশ্রণ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারণ, বাংলা নামে মাঝে মাঝে যা কানে আসে, তাকে ভুল মিশ্রণই বলতে হয়। বিদেশি শব্দ নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করে ভাষাটি ব্যবহার করা হয় না। বরং কিছু বিদেশি শব্দের মতো করে বাংলাকে উচ্চারণ করার এবং ভুল পন্থায় বিভিন্ন বিদেশি শব্দকে জুড়ে দেওয়ার ফলেই এই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। ভাষা প্রবাহটিও এতে ক্ষুণ্ন হচ্ছে বা শুদ্ধতা হারাচ্ছে।
বিশেষ্য, বিশেষণ কিংবা কর্তা, কর্ম, ক্রিয়া, সর্বনাম ইত্যাদি বাংলা ভাষায় যেভাবে ব্যবহার করা নিয়মসিদ্ধ, সেটা না করা হলেই বাক্য গঠন ও ভাষা কাঠামোতে পতন আসে। এই বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করতে হয় ভাষা প্রয়োগ ও ব্যবহারের সময়। তাহলেও মিশ্রণ বা দোষণীয় ব্যবহারের হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। সতর্ক না হলে মিশ্রণ দোষ ঘটা স্বাভাবিক।
বাংলা ভাষাকে মিশ্রকরণের পেছনে দায়িত্ব একজনের নয়, অনেকের। যে স্কুলগুলো বাংলা বলতে চায় না, বাংলা পড়াতে চায় না এবং যে সমস্ত অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েদের শুদ্ধ বাংলা চর্চা থেকে শতহস্ত দূরে থাকতে চান, তাদেরকে মার্জনা করার সুযোগ থাকে না। আধুনিকতা বা স্টাইলের নাম করে মাতৃভাষাকে বিকৃত বা মিশ্রিত করার অধিকার কারোই থাকার কথা নয়। এমনি কর্ম (কুকর্ম) যারা করছেন, তাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে বৈকী!
ভাষা বিকৃতি ও মিশ্রকরণের কুপ্রভাব পথে-ঘাটে, পরিবারে, সমাজে পড়ছে। এর পেছনে আরেক অনুঘটক হলো মিডিয়া। বিশেষত এফএম রেডিও’র ব্যাপক প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে ভাষা রীতিতে একটি অমার্জনীয় অধঃপতন পরিলক্ষিত হচ্ছে। সরকারের উচ্চতর মহল থেকেও এ ব্যাপারে ক্ষোভের উচ্চারণ শুনতে পাওয়া গেছে। ছেলেমেয়েদের ভাষারীতিও বদলে যাচ্ছে এ সমস্যা কারণে।
কম্পিউটারের অবাধ প্রচলনের ফলেও ভাষাকে সংক্ষিপ্তকরণের নামে বিকৃত বা মিশ্রিত করার একটি প্রবণতা দৃশ্যমান হয়েছে। ফেসবুক ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের বহু স্ট্যাটাসে বা মেসেজে এমন ভাষা ব্যবহার বলা হচ্ছে, সাধারণের জন্যে যা ক্ষতিকর। অর্থের দিক থেকে এবং প্রয়োগের দিক থেকে এক্ষেত্রে চরমভাবে শুদ্ধতার হানি ঘটানো হচ্ছে।
বাংলা ভাষার ব্যবহার ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান মানদণ্ড অবশ্যই এটা যে, ভাষাটি বাংলাদেশের বাংলা ভাষীদের। বিশ্বের সকল বাংলা ভাষীই এই ভাষা পরিমণ্ডলের অংশ। ব্যকরণ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতায় পুষ্টি লাভ করেই এ ভাষা চর্চিত ও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পটভূমিটি সামনে না থাকলে বাংলা ভাষার উত্তরাধিকার বহন করার কাজটি যথাযথ হওয়াও অসম্ভব।
বাংলার মতো একটি ধ্রুপদী ভাষা, যা কোটি কোটি মানুষের ভাষা, তা শুধুমাত্র একটি শ্রেণির ভুল ব্যবহারজনিত উদাসীনতায় বিকৃত ও মিশ্রিত হয়ে শুদ্ধতা হারাবে, এমন অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। এই ভুল একই সঙ্গে ইচ্ছাকৃত এবং জ্ঞানের স্বল্পতা জাত। ফলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিহত করা আবশ্যক। শুদ্ধ ও বিকৃত বা মিশ্রণ সম্পর্কের সচেতন থাকা দরকার। তাহলেই ভাষার শুদ্ধ ও পরিশীলিত ব্যবহার অব্যাহত থাকা সম্ভব।
বিশ্বায়ন ও আন্তঃসংযোগের ধাবমান যুগে বিকৃতি বা মিশ্রণ ঠেকানো না হলে ভাষার আদি ও অকৃত্রিম রূপ-চরিত্র হারিয়ে যেতে পারে। আমাদের অসতর্কতায় এমন বিপদ যেন না হয়, তা অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
শারদীয় দুর্গা উৎসবে মেতেছে দেশ। তিথি অনুযায়ী আশ্বিন মাসের দেবীপক্ষ অর্থাৎ, শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী সনাতন ধর্মীরা দুর্গাপূজা উদযাপন করে। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এটিই সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। নানা আয়োজনে সারাদেশে পূজা উদযাপন করা হয়।
আজ শুক্রবার (১১ অক্টোবর) পুজোর ৩য় দিন। দেখতে দেখতে মহাষ্টমী তিথি শেষ হয়ে সন্ধিক্ষণে সন্ধিপূজার মাধ্যমে নবমী তিথির সূচনা হয়েছে। নবমী বলতেই মনে আসে ধুনুচি নাচের কথা। সাধারণত মহানবমী তিথিতে পূজার পরে এই ধুনুচি নাচ নাচা হয়। দেবী দুর্গাকে ধুনুচি নাচ উৎসর্গ করা হয়। অনেক স্থানে দশমীতে প্রতিমা ভাসানের আগেও ধুনুচি নাচ করা হয়।
ঢাকের তালে দেবীর সামনে ধুনুচি হাতে নিয়ে সুশৃঙ্খলে করা হয় এই ধুনুচি নাচ। ধুনুচিতে নারকেলের খোসা জ্বালিয়ে তাতে ধুপ ছিটিয়ে তৈরি করা হয় ধোঁয়া। এক বা একাধিক ধুনুচি হাতে নিয়ে ঢাকের আওয়াজের আন্দোলনে নাচে মেতে ওঠে লাল-সাদা সাজে বাঙালি নারী-পুরুষ।
দুর্গাপূজা মানেই শিউলি ও কাশফুল, শরতের আকাশ, ঢাকের বাদ্য। তার সাথে উলুধ্বনি, ঘণ্টা ও শাঁখের আওয়াজ, আনন্দ উদযাপন এবং তার সাথে ধুনুচি নাচ। বাঙালির দুর্গাপূজার অতি প্রাচীন ঐতিহ্যসম্পন্ন ধুনুচি নাচ ছাড়া যেন পূজাই অসম্পন্ন। চণ্ডীপাঠ, দেবীর ব্র্রতকথা, অঞ্জলি প্রদান, আরতি, পূজা-অর্চনার মাধ্যমে দুর্গাপূজা করা হয়। তবে এসব তো পুজোর নিয়মের অংশ। পুজো মানেই আনন্দ উৎসব। তাই আনন্দ প্রকাশ করে দেবীর উদ্দেশ্যে সঙ্গীত আরাধনা, সিঁদুর খেলার পাশাপাশি ধুনুচি নাচ করারও প্রচলন রয়েছে।
এই ধুনুচি নাচের উল্লেখ পুরাণেও রয়েছে। ধারণা করা দেবী দুর্গা নিজেই ধুনুচি নাচ নেচেছিলেন। মহিষাসুরকে বধ করার আগে নিজের মধ্যে সর্বোচ্চ শক্তি সঞ্চার করার জন্য দেবী ধুনুচি নাচ করেন। দেবীর প্রতি সমগ্র একাগ্রতা নিবেদন করতে আজও ভক্তরা ধুনুচি নাচ করেন। বিভিন্ন জায়গায় একক বা দলীয়ভাবে ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়।
সময়ের সাথে ধুনুচি নাচের প্রচলন কমে আসছে। তবে এখনো দুর্গাপুজো এলেই ছোট-বড় সকলে মিলে ধুনুচি নাচ নাচা হয়। কালের গর্ভে এই ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায়, সেজন্য অবশ্যই ধুনুচি নাচের চর্চা বাড়ানো উচিত। এতে পুজোর আনন্দ দ্বিগুণ হয়। ধুনুচি নাচ ছাড়া দুর্গাপূজা যেন অসম্পূর্ণ।
আশ্বিনের মাসের দেবীপক্ষে সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। শারদীয় দুর্গাপূজার ৩য় দিন আজ শুক্রবার (১১ অক্টোবর)। দুর্গোৎসবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন মহাঅষ্টমী।
বসন্তে দেবী পূজার প্রচলিত নিয়ম ভেঙ্গেছিলেন মহাপুরুষ শ্রীরাম। রাবণকে বধ করার উদ্দেশ্যে শরতে দেবীর অকালবোধন করেন তিনি। সেই থেকে শরতেই দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়।
আশ্বিনের শুক্লাষ্টমীকে বিশেষ মাহেন্দ্রক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এইদিনে ১০৮টি পদ্মফুল উৎসর্গ করা হয় দেবীর পায়ে। জ্বালানো হয় ১০৮টি ঘিয়ের প্রদীপ। অষ্টমী আর নবমী তিথির শুভ সন্ধিক্ষণ অবধি দেবীর পুজো চলতে থাকে। এই ক্ষণকে বলে সন্ধিক্ষণ। কেননা, অষ্টমী তিথির অন্তিম এবং নবমী তিথির প্রারম্ভের সম্মলনের সন্ধিঘটে এই বিশেষ ক্ষণের। তাই এই সন্ধিক্ষণে বিশেষ সন্ধিপূজা হয়। চণ্ডীপাঠ, শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বাদ্যি, উলুধ্বনি, ঘণ্টা- সব মিলিয়ে চারদিক মুখোরিত হয় দুর্গা আরাধনায়।
সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী আজকের দিনেই দেবীদুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। অষ্টমী তিথিকে সকল দেবতাগণ অসুর বধে সাহায্য স্বরূপ দেবীকে নানাবিধ অস্ত্র উপহার দেন। দেবীর দশ হাত দেবতাদের বিশেষ শক্তিসম্পন্ন অস্ত্রে পরিপূর্ণ হয় ওঠে। অসুর বিনাশী দেবী দুর্গার মাহাত্ম্যকে স্মরণ করে আজ মহোৎসব পালন করে ভক্তরা।
এছাড়াও আরও কিছু কারণে অষ্টমী পুজোর দিন অন্যান্য দিনের চেয়ে বিশেষত্ব পায়। আজকে দিনে কুমারীপূজা করা হয়। অনূর্ধ্ব ১৬ বছর বয়সী কোনো বালিকা বা কিশোরীকে দেবী জ্ঞানে পূজা করার এই রীতিই মূলত কুমারী পূজা। প্রতিটি নারীই দেবীর অংশ, তাদের দেবীজ্ঞানে শ্রদ্ধাভক্তি প্রদান করা উচিত- সেই বার্তা প্রচার করা এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় কুমারী পুজার মাধ্যমে।
জীবনের "অর্থ "
জীবনের মানে ভিন্ন জনে ভিন্ন মত রয়েছে। কারো কাছে জীবন মানে যন্ত্রণা, কারো কাছে একটি সুখী সুন্দর পরিবার নির্মাণ, কারো কাছে জীবন মানে সম্পদশালী বা প্রাচুর্যবান হওয়া, কারো কাছে জীবন মানে একটা শিল্প, কারো কাছে জীবন মানে শুধুই ভালোবাসা, কারো কাছে জীবন মানে হাসি আনন্দের মাধ্যমে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করা।
" জীবন জিজ্ঞাসা?
আপনার জন্ম হয়েছিল বস্ত্রহীনতার মধ্য দিয়ে এবং মৃত্য হবে বস্ত্রহীনতার মধ্য দিয়ে, সঙ্গী হবে শুধুমাত্র দুটুকরা সাদা কাপড়।
আপনি পৃথিবীতে এসেছিলেন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে এত দুর্বল ছিলেন যে, মায়ের সাহায্য ছাড়া খাবার টুকু মুখে নিতে পারতেন না। আপনি যখন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন তখনও অত্যন্ত দুর্বল ও অসহায় থাকবেন তখন আপনার কাফনের কাপড়টুকু আপনি নিজে পরতে পারবেন না আর একজন আপনাকে পরিয়ে দিবে।
আপনি যখন পৃথিবীতে এসেছিলেন তখন আপনার অর্থ সম্পদ কিছুই ছিল না। যখন আপনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন তখনও আপনার অর্থ সম্পদ কিছুই থাকবে না।
আপনাকে প্রথম গোসল যেমন অন্য কেউ করে দিয়েছিল তেমনি আপনার শেষ গোসলও অন্য কেউ করে দিবে।
আপনি যখন পৃথিবীতে একা এসেছিলেন ঠিক তেমনিভাবে আপনাকে পৃথিবী থেকে একাই চলে যেতে হবে। আপনার সাথে আপনার প্রিয়জন কেউ যাবে না।
জীবন নামের রেলগাড়িটা পায় না খুঁজে স্টেশন। চলন্ত ট্রেনের মতই গতিময় জীবন চলছে আপন মহিমায়। এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে। স্টেশনে যাত্রীরা যে যার মত করে ছুটে চলছে গন্তব্যে । মানুষের জীবনেও এক একটি স্টেশন থাকে। যেখানে রেখে যায় কিছু স্মৃতি যা পরবর্তীতে যুগ যুগ তাকে বাচিয়ে রাখে।
জীবনের এই ভ্রমণের দৈর্ঘ্য কেউ জানে না। এটি কখন থামবে তাও কেউ জানে না। আমাদের একসাথে ভ্রমণ খুব ছোট।
এটাই জীবন! তাহলে কেন এত হানাহানি, কেন এত মারামারি, কেন এত হিংসা, কেন এত বিদ্বেষ, কেন এত সংঘাত, কেন এত বেঈমানী।
তাই সকলের প্রতি দয়াশীল হন। সকলকে আপন করে নিন ক্ষণিকের এই যাত্রায়। জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। সুতরাং জীবনকে মহৎ কাজে উৎসর্গ করুন। সর্বদাই নিজের ও মানুষের কল্যান করুন। অনর্থক কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনও পরকালে আপনার কল্যাণ করবেন।
আমরা কেউই চিরস্থায়ী নই।
এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করলে প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। অল্প একটু সময়ের ব্যবধান। রাজা, বাদশা, ধনী, গরিব, যেই হউক তাকে এই পৃথিবীর মায়া মমতা ছেড়ে যেতেই হবেই ।
কোন তুচ্ছ ঘটনাকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করার দরকার নেই, কারণ আমাদের একসাথে যাত্রা খুবই ছোট এবং স্বল্প সময়ের।
আমাদের প্রত্যেককে বুঝতে হবে যে, এই পৃথিবীতে আমাদের সময় এতটাই স্বল্প যে, রেষারেষি, অনর্থক যুক্তি, তর্ক, হিংসা, অন্যকে ক্ষমা না করা, অসন্তুষ্টি এবং অন্যকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা মনোভাবটা স্বল্প সময়ের যাত্রায় শুধুই সময়ের অপচয় মাত্র।
কেউ আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, ভয় দেখিয়েছে, ঠকিয়েছে, বিনা কারনে আপনাকে অপমান করেছে। শান্ত থাকুন, উপেক্ষা করুন, ক্ষমা করে দিন, এড়িয়ে যান,প্রকৃতিই তার বিচার করবে । কারণ যাত্রাটি খুব ছোট এবং স্বল্প সময়ের।
কেউ আপনার কাছে যে সমস্যাই নিয়ে আসুক না কেন, সফল সমাধানের চেষ্টা করি। মনে রাখবেন যে একসাথে আমাদের যাত্রা খুব ছোট এবং কম সময়ের।
আসুন কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে সহযাত্রী ভেবে একে অন্যকে সহযোগিতা করি, কারণ যাত্রাটি খুবই ছোট্ট কিন্তু কাজ অনেক। এই অল্প সময়ে অনর্থক সময় নষ্ট না করে সততার সাথে নিজেকে সফল করতে চেষ্টা করি এবং সবাইকে অবিরাম
ভালোবাসি। মানুষের সাথে আপনি যত সহজ ভাষায় কথা বলবেন মানুষ আপনাকে ততবেশী ভালোবাসবে।
যে ব্যক্তি সৎকাজ করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, এবং সে মুমিন, আমি অবশ্যই তাদের উত্তম জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদের উত্তম কর্মের প্রতিদান দেব।
আসুন এই ক্ষণিকের যাত্রায় জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মহৎ কাজে উৎসর্গ করি। অনর্থক কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখি।
ধন্যবাদ; আজ এ পর্যন্ত অন্য কোন পর্বে আবার দেখা হবে।
লেখক: মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, জেনারেল ম্যানেজার, সোনালী ব্যাংক পিএলসি।
বর্ষার পর পর একটানা ঝুম বৃষ্টিতে নদী-নালা, খাল-বিলে পানির স্তর বেড়ে যায়। এই সময় বিভিন্নস্থানে দেখা যায় বর্ষাকালীন ফুলের সমারোহ। বিলে ফোটা জনপ্রিয় ফুলগুলোর একটি শাপলা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের নির্দশন হিসেবে অগণিত শাপলার সমারোহ দেখা যায়। প্রতিবছর কিছু নির্দিষ্ট জায়গা এই শাপলার বাহারে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। তখন প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের ভিড় জমে যায় এই সব দর্শনীয় স্থানে।
এরকমই শাপলাফুলের জন্য বহুল আলোচিত এক স্থান হলো বরিশালের সাতলা বিল। বিভাগীয় শহর বরিশালের সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরেরএই বিশাল বিলে শাপলার সমারোহ নজরে পড়ে। উজিরপুর উপজেলার উত্তর সাতলা গ্রাম এবং আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ও খাজুরিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে বিছিয়ে আছে শাপলার বিল। তবে সাতলার এই বিখ্যাত বিল স্থানীয়দের কাছে ‘লাল শাপলার বিল’ নামেই বেশি পরিচিত।
প্রতিবছরই নয়নাভিরাম এ বিলে ঘুরতে আসেন দর্শনার্থীরা। স্থানীয়দের আধিক্য থাকলেও, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও লাল-গোলাপি-মেরুন রঙের শাপলার গালিচার চাক্ষুষ উপলব্ধি করতে মানুষ আসেন। শুধু তাই নয়, প্রায় সময় দেশের বাইরের পর্যটকরাও আসছেন শাপলার বিল দেখতে।
গত শনিবার (০৫ অক্টোবর) বেশ কয়েকজন চীনা নাগরিক শাপলার বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছিলেন। তারা এখান থেকে সরাসরি ভিডিও কলে চীনে নিজ পরিবার পরিজনকে বরিশালের শাপলা বিলের দৃশ্য ধারণ করেছেন। দৃশ্য দেখে সুদূর চীন থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকদের পরিজনেরাও বরিশালের ‘শাপলা বিল’ দেখতে আসর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ।প্রাকৃতিকভাবেই সাতলার বিলটির জন্ম। পর্যটকদের কাছে অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিলটি। প্রতিবছর নয়নাভিরাম এই বিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে আসেন হাজার হাজার দর্শনার্থীরা।গোলাপি আর সবুজের মাখামাখি দূর থেকেই চোখে পড়বে। কাছে গেলে ধীরে ধীরে সবুজের পটভূমিতে গাঢ় গোলাপির অস্তিত্ব চোখ জুড়িয়ে দেবে। বিস্তৃত বিলের জলে ফুটে থাকে কোটি কোটি শাপলার । জাতীয় ফুল শাপলার গাঢ় গোলাপি রং বলে স্থানীয়ভাবে এটিকে লাল শাপলা হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়।
প্রাকৃতিক আপন নিয়মে সৃষ্ট সাতলা-বাগদা এলাকা নিকট অতীতেও ছিল চরম অভাবী এলাকা। শাপলা-সালুক খেয়েই বছরের বেশিরভাগ সময় এ প্লাবন ভূমিতে বসবাসকারী মানুষ ক্ষুন্নিবৃত্তি করত।পানি উন্নয়ন বোর্ড এখানে তিনটি পোল্ডারে ‘সাতলা-বাগদা সেচ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরে এখানে বোরো ধান সহ অন্যান্য ফসলের মুখ দেখেছে এলাকাবাসী। ফলে চীর অভাবী এলাকার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে। সাথে মাছের উৎপাদনও বাড়ছে। এখানে মাছ রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চালান যাচ্ছে। সাথে বিশাল শাপলা বিলের শাপলা বিক্রি করেও এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর সংসার চলছে।