‘ন্যাচারাল অভিনয়ের স্কুল যদি থাকে, সেই স্কুলের একজন তিনি'
গতকাল বিকেলে রাজধানীর নিজ বাসাতেই মৃত্যু বরণ করেছেন দেশের প্রতিথযশা অভিনেতা মাসুদ আলী খান। মৃত্যুর আগে তিনিই ছিলেন দেশের সবচেয়ে প্রবীণ অভিনেতা। শেষ বিদায়ে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন দেশের আরও দুই বর্ষীয়ান অভিনেতা আবুল হায়াত এবং তারিক আনাম খান
একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, ‘মাসুদ আলী খান আমাদের নাটকের পথপ্রদর্শক। একজন সুশীল, সজ্জন ভদ্রলোক ছিলেন। ভালো মানুষ তো বটেই। ন্যাচারাল অভিনয়ের স্কুল যদি থাকে, সেই স্কুলের একজন তিনি। খবরটি শোনার পর খারাপ লাগছে। এক এক করে আমাদের সিনিয়ররা চলে যাচ্ছেন। কষ্ট লাগছে। আমরাও থাকব না। আমাদেরও চলে যেতে হবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। মাসুদ আলী খানের সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক অনেক বছর আগে। দেখা হলেই বলতেন, হায়াত কেমন আছ? এখন আর কেউ বলবেন না। তার মুখ থেকে এই ডাকটি মিস করব। আমার বইয়ে তার কথা লেখা আছে। বইটি আগামী সপ্তাহে প্রকাশ হবে। কিন্তু তিনি দেখে যেতে পারলেন না। তার প্রতি শ্রদ্ধা।’
গুণী অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, ‘অসম্ভব গুণী একজন অভিনেতাকে হারালাম। তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সম্মান। খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তার কাছ থেকে সারাজীবন শিখেছি। মানুষকে সম্মান করতেন। অভিনয় ভালোবাসতেন। সারাজীবন অভিনয় করে গেছেন। সবাইকে আপন করে নেওয়ার মতো বড় মন ছিল তার। আজ তিনি চলে গেলেন। অভিনয়ে তার অবদান আমরা ভুলব না। অনেক সাড়া জাগানো নাটকের শিল্পী ছিলেন। সৃষ্টিকর্তা তাকে জান্নাত নসিব করুন। যেখানে আছেন শান্তিতে থাকুন।’
দেশের প্রথম মঞ্চ নাটকের দল ‘ড্রামা সার্কেল’-এর সদস্য ছিলেন সদ্য প্রয়াত অভিনেতা মাসুদ আলী খান। একাধারে থিয়েটার, টেলিভিশন নাটক, চলচ্চিত্র ও বেতার নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। অনেক কালজয়ী নাটকে অভিনয় করে পেয়েছেন দর্শকদের ভালোবাসা।
স্কুলজীবনে মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন। নাটকটির নাম ছিল ‘রানা প্রতাপ সিংহ’। তরুণ বয়সে যোগ দেন দেশের প্রথম মঞ্চ নাটকের দল ‘ড্রামা সার্কেল’-এ। এই দলের হয়ে অনেকগুলো নাটকে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে রক্ত করবী, রাজা-রানি, বহিপীর, ইডিপাস ইত্যাদি।
মাসুদ আলী খান অভিনীত বিটিভির ‘কূল নাই কিনার নাই’ আলোচিত একটি নাটক। এই নাটকে তার সহশিল্পী ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর, আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফা। তিনি প্রথম অভিনয় করেন ‘নদী ও নারী’ সিনেমায়। এই সিনেমায় অভিনয় করে সেই সময়ে বেশ পরিচিতি পান। ‘আসগর’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সিনেমাটির পরিচালক সাদেক খান।
এ ছাড়া, জোনাকীর আলো, দীপু নম্বর টু, মাটির ময়না, দুই দুয়ারি, মোল্লাবাড়ির বউ, শঙ্খনীল কারাগার সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দীপু নম্বর টু সিনেমায় শিক্ষকের চরিত্রে অভিনয় করে শিশু-কিশোরদের মাঝে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
কালজয়ী ধারাবাহিক নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘এইসব দিনরাত্রি’তে অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন মাসুদ আলী খান। তা ছাড়া, একান্নবর্তী, ৬৯, পৌষ ফাগুনের পালা’র মতো সাড়া জাগানো ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন।