বইয়ের মলাটে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ঐতিহাসিক অর্জন
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হল চলচ্চিত্র বিষয়ক নতুন বই- কান ডায়েরি, ওহ্ বাংলাদেশ! টেলিভিশন সাংবাদিক পার্থ সনজয়ের কান চলচ্চিত্র উৎসব ভ্রমণ ও এর অভিজ্ঞতা মলাবন্দী হয়েছে বইটিতে।
কেমন বই কান ডায়েরি, ওহ্ বাংলাদেশ! লেখকের মতে, বইটি না ভ্রমণকাহিনী, না ঘটনাবলীর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা, না স্মৃতিজারণ, না বহু প্রতিবেদনের সংকলন। বরং বলা যায়, বিশ্ব চলচ্চিত্রের স্বপ্নের ঠিকানা কান চলচ্চিত্র উৎসবে ২০২১ এ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অবিস্মরণীয় অর্জনের উপাখ্যান।
গল্পের ঢংয়ে, প্রাঞ্জল ভাষায় লেখার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ছবি বইটিকে এক ঝলকেই দিয়েছে একটা সজীব আবহ। পার্থ সনজয় কান চলচ্চিত্র উৎসব প্রথম কাভার করেন ২০১৭ সালে। উৎসবের ৭০-তম আসরে। বলা যায়, দেশের টেলিভিশন মিডিয়াতে সেই প্রথম প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকের প্রথম প্রতিবেদন। এরপর থেকেই তিনি নিয়মিত এই রূপালি ফিতার উৎসবে। কান ডায়েরি, ওহ্ বাংলাদেশ!- তার খেরোখাতায় টুকে রাখা ছোট বড় সব ঘটনা আর আনন্দ বেদনার ছবি।
দিনে দিনে তিনি লিখেছেন, বর্ণিল রঙচটা নানা অভিজ্ঞতা আর প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির কথা। বাদ দেননি কাজের আগে পরে ইতিউতি ঐতিহাসিক নিদর্শন ঘুরে দেখার গল্পগুলোও। সব সার্থক অনুষঙ্গ নিয়ে লেখার গাঁথুনি পাঠককে নির্ঘাত এক নিঃশ্বাসেই বইটি পড়ে শেষ করার তাগাদা দেবে। কিন্ত দীর্ঘ সময় রয়ে যাবে অর্জনের উপলব্ধি আর ফরাসি ঘ্রাণ।
কিন্তু কেন লিখলেন এ বইটি জানালেন বার্তা ২৪.কমকে।
“এর আগেও কানের ‘সালে দেবুসি’ থিয়েটারে ছবির প্রিমিয়ারে দর্শক থেকেছি। তবে সাক্ষী হইনি এমন অপার্থিব আলো’র। এর আগেও এই বিশ্ব চলচ্চিত্রের আসরে ভিনদেশী সাংবাদিকের সাথে পরিচিত হয়েছি। তবে কখনোই অবাক চোখে কাউকে বলতে শুনিনি, ‘ও বাংলাদেশ…রেহানা!’ এর আগে যে কখনোই অফিসিয়াল ছবির ঘোষণায় উৎসব পরিচালক ঘোষণা করেননি ‘বাংলাদেশ’ নামটি!
৭ জুলাই’২০২১। কান সময় সকাল ১১ টায় সালে দেবুসি’র নিভে যাওয়া আর আবারো জ্বলে ওঠা আলো'র মাঝে সময়ের ব্যবধানটা ১ঘন্টা ৪৭ মিনিট। তবে অনুভবের পার্থক্যটা যেন আলোকবর্ষ। জ্বলে ওঠা এমন আলোতেই বুঝি লুকিয়ে থাকে ‘অপার্থিব’ শব্দটি। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে 'সালে দেবুসি' মুখর হয়েছে দর্শকের মূর্হমূর্হ করতালিতে। দাঁড়িয়ে দর্শক অভিনন্দন জানিয়েছেন 'টিম রেহানা মরিয়ম নূর'কে। নতুন কিছু নয়।
যেমনটা অন্য দেশের অন্য কোন ছবির ক্ষেত্রে, ঠিক তেমনটাই। তবু এ যেন ছিল বিশেষ। তাই এই আলো ছিল 'অপার্থিব'। তাতে ম্লান হাজারো দর্শকের করতালি। তাতে স্নাত 'টিম রেহানা মরিয়ম নূর'। তাতে উজ্জ্বল 'বাংলাদেশ' নামখানি। এমন হাতছানিতেই তো করোনাক্রান্ত নতুন স্বাভাবিকে, ছুটে আসা বিশ্ব চলচ্চিত্রের সেরা আসরে। যখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ‘লাল তালিকায়’ বাংলাদেশ, তখন ঝুঁকি আর ঝক্কিকে সাথী করে ছুটে গেছি স্বপ্নের পানে!
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। ২০২১ সালে এ চলচ্চিত্রটি ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসব আসরের আঁ সেরতাঁ র্যগার বিভাগে নির্বাচিত হয়।এ বিভাগে স্থান পাওয়া প্রথম বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি কোন পুরস্কার জিততে না পারলেও বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ এ আসরে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে গৌরব বয়ে নিয়ে আসে দেশের জন্য। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ঐতিহাসিক সে সময়কে স্মৃতির অক্ষরে বেঁধে ফেলতেই তার এ গ্রন্থ রচনা।
তবে, শুধু ২০২১ এর কান ভ্রমণই নয়, তার আগের তিনবারের ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও যুক্ত হয়েছে এ গ্রন্থে।
স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি আরও বলেন, “ স্বপ্নই তো! এর আগে ক্যামেরায় ভিন দেশী ছবির খবর দিতে গিয়ে, কতবার হা পিত্যেশ করেছি, কবে আসবে বাংলাদেশ? সেই বাংলাদেশ যখন এলো, তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। দেশের চলচ্চিত্রের সেরা অর্জনটার সাক্ষী হয়েছি সাংবাদিক হিসেবে।
সাক্ষী হয়েছি নতুন স্বাভাবিক পৃথিবীর। এই সবটুকু ভ্রমণ, লিখতে চেয়েছি। চেয়েছি, পাঠক আমার সাথে ঘুরে আসুক ‘সুবর্ণ পঁচিশটি দিন’। শুধু কি তাই? সাথে এর আগের তিনবারের কান অভিজ্ঞতাও জুড়ে দিতে চেয়েছি। তাতে ‘আনকোড়া প্রথম’ যেমন আছে, তেমনি আছে পরের দুই। তাতে কোয়েন্তিন তারান্তিনো যেমন আছেন, তেমনি আছেন অপর্ণা সেন কিংবা সুভাষ ঘাই অথবা এক ঝলক ঐশ্বরিয়া!”
দেশের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য গণমাধ্যমে প্রায় দুই দশক ধরে সাংবাদিকতা করছেন পার্থ সঞ্জয়। বর্তমানে তিনি কর্মরত আছেন একাত্তর টেলিভিশনে। শিল্পী সব্যসাচী হাজরার প্রচ্ছদে পার্থ তানভীর নভেদ্ এর সম্পাদনায় অমর একুশে বইমেলায় তার বইটি প্রকাশ করেছে নিমফিয়া পাবলিকেশন।