আলী যাকেরের স্মৃতি সংগ্রহালয় ‘বাতিঘর’
কিংবদন্তি অভিনেতা আলী যাকেরের স্মৃতিতে নির্মিত হয়েছে সংগ্রহালয় ‘বাতিঘর’। মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে রাজধানীর বনানীস্থ এশিয়াটিক সেন্টারে স্থাপিত হয়েছে এটি। তথ্যটি বার্তা ২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির গণমাধ্যম মুখপাত্র শেখ নাসির হোসেন। আগামী ৬ নভেম্বর আলী যাকের-এর ৭৭তম জন্মদিনে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করা হবে এ সংগ্রহশালা। এ উপলক্ষ্যে একটি ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজিত হয়েছে।
জানা যায়, সংগ্রহশালায় আলী যাকেরের ব্যাবহার্য জিনিসপত্র, তার গ্রন্থ ও চিত্রকর্মের নানা অনুষঙ্গ সজ্জিত অবস্থায় থাকবে। একই দিন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে প্রয়াত এ কিংবদন্তির ওয়েবসাইটও। মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন সৃষ্টিশীল কর্মের জন্য দেবে অনুদান। এসব বিষয় বিস্তারিত জানা যাবে আলী যাকেরের জন্মদিনেই।
গত বছর ২৭ নভেম্বর ৭৬বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন আলী যাকের। মৃত্যুর পর তাঁর প্রথম জন্মদিন পালিত হবে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের দায়বদ্ধতা থেকে।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন আলী যাকের। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই জড়িয়ে পড়েন নাট্যচর্চায়, সেই সঙ্গে ছাত্ররাজনীতিতে। আলী যাকের তখন ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ছাত্র ইউনিয়ন মস্কোপন্থি ও পিকিংপন্থি দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেলে তিনি মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে মস্কোপন্থি ছাত্র ইউনিয়নে থাকেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে করাচিতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা ডব্লিউ এস ক্রফোর্ডাসে ট্রেইনি এক্সিকিউটিভ হিসেবে আলী যাকেরের কর্মজীবন শুরু করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি এশিয়াটিকের দায়িত্ব নেন, মৃত্যুর সময় তিনি কোম্পানির গ্রুপ চেয়ারম্যান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আলী যাকের প্রথমে ভারতে গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। চলচ্চিত্র পরিচালক ও সাংবাদিক আলমগীর কবির তাকে উদ্বুদ্ধ করেন প্রচারযুদ্ধে অংশ নিতে। আলী যাকের যুক্ত হন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে।
সেই সূত্র ধরেই ১৯৭২ সালে আরণ্যকের ‘কবর’ নাটকে অভিনয় করেন আলী যাকের, শুরু হয় মঞ্চে তার পথচলার। সে নাটক দেখে পরে জিয়া হায়দার ও আতাউর রহমান তাকে নিয়ে যান তাদের দল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে। মৃত্যু পর্যন্ত আলী যাকের এই নাট্যদলের সভাপতি ছিলেন। মঞ্চে নূরলদীন, গ্যালিলিও ও দেওয়ান গাজীর চরিত্রে আলী যাকেরের অভিনয় এখনও দর্শক মনে রেখেছে। ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি পাথর’, ‘আজ রবিবার’এর টিভি নাটকে অভিনয় করেও তিনি প্রশংসা পেয়েছেন।
‘অচলায়তন’, ‘বাকী ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘তৈল সংকট’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লীতে’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’সহ বেশ কয়েকটি মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন আলী যাকের। বেতারে অর্ধশতাধিক শ্রুতি নাটকেও কাজ করেছেন। অভিনয়, নির্দেশনার বাইরে তিনি ছিলেন একজন নাট্যসংগঠক; পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন লেখালেখির সঙ্গে। নাটকে অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
এছাড়া দীর্ঘ কর্মজীবনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন আলী যাকের। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি আলী যাকের যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটিরও সদস্য ছিলেন।
আলী যাকেরের স্ত্রী সারা যাকেরও মঞ্চ আর টেলিভিশনের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৭ সালে। তাদের দুই ছেলেমেয়ে ইরেশ যাকের ও শ্রিয়া সর্বজয়াও অভিনয়শিল্পী।