ফেনী-২ আসনে নৌকার পালে হ্যাটট্রিকের হাওয়া

  ভোট এলো, এলো ভোট
  • মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফেনী-২ আসনে নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

এ আসনে এবার নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে পারলে এই বিজয় অভূতপূর্ব হবে। কারণ, ফেনী-২ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে এবারই নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরপর তিনবার বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে নৌকার পালে লেগেছে হ্যাটট্রিকের হাওয়া। যদিও এই আসনে তিনবার নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম জয়নাল আবেদীন হাজারী। তবে, তিনি তৃতীয়, পঞ্চম এবং সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফেনীর তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে সদর আসন নির্বাচনী ফলাফল বিবেচনায় ব্যতিক্রম। গত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৬ বার জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ আসনে বরাবরই স্বস্তিতে ছিল আওয়ামী লীগ।

ফলাফল পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এ আসনে ১৯৭৯, ২০০১ ও ২০০৮ সাল ছাড়া ভোটের মাঠে সফল ছিল আওয়ামী লীগ। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে বিজয়ী করতে মরিয়া নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ থেকে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন ফেনীর মুকুটহীন রাজা খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা খাজা আহমদ। এরপর ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন হাজারী। ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নিজাম উদ্দিন হাজারী। ৭ জানুয়ারি ভোটে ফের জয়ী হতে পারলে এই আসনে তিনি হবেন উজ্জ্বলতম ব্যতিক্রম।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেনী-২ আসন প্রগতিশীল রাজনীতির চারণভূমি। ফেনী সরকারি কলেজকে ঘিরে এ জনপদে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা ও প্রয়োগ শুরু হয়েছিল শত বছর জুড়ে। চট্টগ্রাম কলেজ এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এ কলেজটি ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথের নিকটবর্তী। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ নানা প্রেক্ষাপটে ফেনী কলেজ হয়ে উঠেছিল প্রগতিশীল রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দু।

পাকিস্তান আন্দোলনের প্রভাব ১৯৪৫-৪৬ সাল থেকে এখানে ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। তবে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখছেন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। দলীয় নেতাদের ভাষ্যমতে, দীর্ঘসময় ধরে ফেনী-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ঘিরেই এ জনপদের আওয়ামী রাজনীতি পরিচালিত হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় নিজাম উদ্দিন হাজারীর নেতৃত্বের কোন আপোষ নেই নেতাকর্মীদের। এবারও নৌকা প্রতীকের এ প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জিতিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে আটঘাঁট বেঁধে নেমেছেন তারা।

ফেনী পৌর ও সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে নিজাম হাজারীর সমর্থনে জনসভা, পথসভা, প্রচারণার মাধ্যমে নৌকার অবস্থান দৃঢ় করতে কাজ করে চলেছেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১১টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছিলেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। এছাড়া বাকি নির্বাচনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিদের সাথে ভোটের মাঠে লড়াই করে জিততে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। এবারের নির্বাচনের মাঠে একক আধিপত্য রয়েছে আওয়ামী লীগের।

এবারের নির্বাচনে ফেনী-২ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তাদের বেশিরভাগই অপরিচিত। নিজাম হাজারী ছাড়া এ আসনটিতে যারা লড়ছেন তাদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম নাম লিখিয়েছেন। ফলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নিজাম হাজারী রয়েছেন শীর্ষ অবস্থানে।

এ আসনে তুলনামূলক আওয়ামী লীগের কাছাকাছি প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) প্রার্থী খোন্দকার নজরুল ইসলাম। বিএনপি না থাকায় দেশের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ট্যাগ পাওয়া এ দল থেকে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাম লিখিয়েছেন। আসনটির অন্য প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজনের দুই-এক সারি পোস্টার ঝুলানো থাকলেও নেই প্রচারণা ও নির্বাচনী কার্যক্রম।


এ আসনে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা হচ্ছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আমজাদ হোসেন ভূঞা সোনালী আঁশ, জাতীয় পার্টির খোন্দকার নজরুল ইসলাম লাঙ্গল প্রতীক, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা নুরুল ইসলাম মোমবাতি প্রতীক, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের নুরুল আমিন ভূঞা ছড়ি প্রতীক, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ হোসেন ডাব প্রতীক, খেলাফত আন্দোলনের আবুল হোসেন বটগাছ প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এএসএম আনোয়ারুল করিম ঈগল প্রতীক নিয়ে ভোটে থাকলেও মাঠে নেই। লাঙ্গলের প্রার্থী ছাড়া এখন পর্যন্ত অন্যদের কোথাও তেমন প্রচারণা দেখা যায়নি। দেখা যায়নি নির্বাচনী ক্যাম্পও। এমনটিই জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নৌকার টিকিট পেয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া নৌকার প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট ও নির্বাচনী ক্যাম্পে সরব রয়েছে আসনটি। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নৌকার বিজয় এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল বলেন, নিজাম হাজারী বিগত বছরগুলোতে যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছে সে ধারাবাহিকতায় হাজার হাজার মানুষ নৌকা প্রতীকের পথসভায় যোগ দিয়ে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করছে। তিনি দায়িত্ব নিয়ে সকল ইউনিয়নে উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন। ফেনী সদরবাসী নিজাম হাজারীর কাছে ঋণী। এ ঋণ শোধ করার সময় এসেছে।

পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোঃ নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, ফেনী পৌরসভায় নিজাম হাজারীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান। পৌর এলাকার এমন কোন ওয়ার্ড নেই যেখানে উন্নয়ন কাজ হয়নি। তিনি উন্নয়নের পাশাপাশি দলের সুসংগঠিত করেছেন। তাকে ফের বিজয়ী করতে ফেনীর আওয়ামী লীগ প্রস্তুত।

স্থানীয় ভোটার ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় শেষ পর্যায়ে থাকলেও এ আসনে নৌকার প্রার্থী ছাড়া অন্যদের ভোটের মাঠে তেমন দেখা যায় নি। এখানে নিজাম হাজারী অপ্রতিদ্বন্দ্বি।

এ ব্যাপারে ফেনী-২ আসনের নৌকার প্রার্থী নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, নির্বাচিত হলে আমি শুধু আওয়ামী লীগের না, সকল দলের এমপি হতে চাই। বিগত ১৫ বছরে ফেনী সদরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। ফেনীতে দেশের প্রথম সিক্স লেইন ফ্লাইওভার হয়েছে। এটি শুধু আওয়ামী লীগের না, সকল দলের মানুষের উপকারে এসেছে। আমি দলমতের উর্ধ্বে থেকে দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে চাই।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেনী-২ আসনে মোট ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার ৭২১ জন। এদের মাঝে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৮৫০ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৭০ জন। অপরদিকে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১ জন।