সহিংসতা: চট্টগ্রামের ৫ আসন নিয়ে ‘মাথাব্যথা’

  ভোট এলো, এলো ভোট
  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সহিংসতা: চট্টগ্রামের ৫ আসন নিয়ে ‘মাথাব্যথা’

সহিংসতা: চট্টগ্রামের ৫ আসন নিয়ে ‘মাথাব্যথা’

যতই নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে ততই যেন চট্টগ্রামের পাঁচ আসনের নৌকার প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার মাত্রা বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে তিন আসন পড়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামে। বাকি দুই আসনের অবস্থান উত্তর চট্টগ্রামে। সহিংসতা বাড়তে থাকলে এসব আসনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের চিন্তা আছে প্রশাসনের। 

এই পাঁচ আসন হলো, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম ১৫-(সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)। এই আসনগুলোতে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো না কোনো ঝামেলা লেগেই আছে প্রতিদিন।

বিজ্ঞাপন

পাঁচ আসনের মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পটিয়া। এই আসনে নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর অনুসারীদের সঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য ও হুইপ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর অনুসারীদের নিয়মিত মারামারির ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি দুই প্রার্থীই প্রায় প্রতিদিনই একে অপরের বিপক্ষে সংবাদ সম্মেলন করছেন, অভিযোগ দিচ্ছেন রিটার্নিং অফিসারের কাছে।

পটিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে চট্টগ্রাম-১২ আসন। এবারের নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন। তবে এই আসনের নির্বাচনে তিনবারের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। গত ১৮ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে প্রচারণা ঘিরে দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে অন্তত ২০ বার হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর হয়েছে মাইক ও যানবাহন। এমনকি হুইপের বড় ভাইকে কান ধরে উঠবস করানো ও বোনের ওপর হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারণার শুরু থেকেই চট্টগ্রামের যে কয়েকটি আসনে সংঘাত থামছে না, তার মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনটি। এখানে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকের আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেবের সমর্থকদের মধ্যে এ নিয়ে অন্তত ১০টি হামলা, ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। সংঘাতের জন্য দুই পক্ষই পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি তিনটি মামলাও হয়েছে। এসব মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও সবাই এখন জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। এই আসনেও নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিন সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আগের দুই নির্বাচনে ভালো ভালোই পার হয়ে গেলেও এবার বাঁশখালী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।  কেননা এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপির পক্ষে এক প্রকার গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলাসহ নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত মোস্তাফিজুরের পক্ষ ত্যাগ করেছেন তার এক সময়ের অনেক ঘনিষ্ট নেতাকর্মীও। এই আসনে মোস্তাফিজুরের সঙ্গে তাই মুজিবুরের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর রেশ দেখা যাচ্ছে মাঠের রাজনীতিতেও। দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গত ১৫ দিনে বেশ কয়েকবার সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ফলে এই আসন নিয়ে আলাদা নজর আছে প্রশাসনের।

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়র মোশারফ হোসেনের ছেলে মাহবুব উর রহমানকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহম্মদ গিয়াস উদ্দিন। দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যেও সংঘাত লেগে আছে।এ নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগও জমা হচ্ছে।

একইভাবে চট্টগ্রাম—৩ (সন্দ্বীপ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরীর ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।

চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১০টি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। নগরকেন্দ্রীক ছয়টি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম। সংঘাতময় আসনগুলো পড়েছে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের অধীনে।

সহিংসতা বাড়তে থাকে এই আসনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের পটিয়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া মিরসরাই ও সন্দ্বীপেও কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমরা জড়িতদের গ্রেফতার করেছি। তবে নির্বাচন পর্যন্ত যদি এ ধরনের ঘটনা চলতে থাকে, তাহলে এসব আসনে অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। সন্দ্বীপের জন্য নৌবাহিনী মোতায়েন করা হবে। কোনোভাবেই কেউ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারবে না এবং সে ধরনের কিছু করতে দেওয়া হবে না।’