শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে সর্বস্বান্ত শিক্ষকরা
এক চেয়ারেই ৭ বছর পার করে দিয়েছেন নীলফামারীর জলঢাকার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চঞ্চল কুমার ভৌমিক। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার ফলে তার বেপরোয়া আচরণে অতিষ্ট উপজেলার শিক্ষকরা। এই উপজেলার শিক্ষকদের অভিযোগ, নিয়োগ ও এমপিওসহ তার দপ্তরে থাকা যেকোনো কাজের জন্য গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। দাবি করা টাকা না পেলে আটকে দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট ফাইল। ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। কিন্তু শেষ পর্যায়ে বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা টাকা দিয়ে কাজ আদায় করলেও নিজেরা হয়ে যান সর্বস্বান্ত।
এমন পরিস্থিতিতে এই কর্মকর্তার হাত থেকে রক্ষা পেতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলাটির চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান। মাউশির মহাপরিচালকের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে দ্রুত এই কর্মকর্তার অন্যত্র বদলির দাবি জানিয়েছেন তারা।
অভিযোগকারী শিক্ষকরা হলেন, গোলনা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হোসাইন আহমাদ, উত্তর দেশীবাই ফয়জুল উলুম দাখিল মাদরাসার সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, রশিদপুর বালিকা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহিদুল ইসলাম ও বালাপাড়া দারুস সুন্নাত দাখিল মাদরাসার সুপার মো. সাইদুল ইসলাম।
অভিযোগে বলা হয়েছে, চঞ্চল কুমার ভৌমিক ২০১৭ সালের ২৫ মে জলঢাকা উপজেলায় যোগদান করেন। দীর্ঘদিন একই উপজেলায় কর্মরত থাকায় সর্বত্র তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের হুমকি, সামান্য কাজের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। বিশেষ করে নতুন শিক্ষকদের এমপিও ফাইল পাঠানোর জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মোটা অংকের টাকা দিতে বাধ্য করেন। সাধারণ শিক্ষকরা নিরুপায় হয়ে এই টাকা দিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, কর্মকর্তার অফিসে গেলে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন ও বিভিন্ন রকমের ধমক দেন। দীর্ঘ ৭ বছর একই কর্মস্থলে থাকার ফলে তার বেপরোয়া আচরণে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা ভুগছেন। তাই এই কর্মকর্তাকে অন্যত্র দ্রুত বদলির ব্যবস্থা করে জলঢাকা উপজেলার শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।
শিক্ষা কর্মকর্তা চঞ্চল কুমার ভৌমিক বলেন, আমার বিষয়ে এরকম অভিযোগ করার কথা না। এই উপজেলায় তো ১০২টা স্কুল রয়েছে তারা তো করলো না। এই চারটা প্রতিষ্টান কেন এরকম অভিযোগ করলো আমার বুঝে আসে না। আমার তো অবসরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে আর ৪ মাস আছে। শেষ সময়ে তারা এমনটা না করলেও পারতো। এই স্টেশনে আরও কেউ কেউ আসার চেষ্টা করছেন। আর যারা অভিযোগ করেছেন তারা তাকে আনতেই এ কাজ করেছেন। আমি যাওয়ার পর তাকে আনলেই পারে। পাশাপাশি কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেখানকার শিক্ষকরা ভুয়া, পেছনের তারিখে নিয়োগ দেখিয়ে এমপিও করার আবেদন নিয়ে আসেন সেগুলো নিয়মবহির্ভূত বলে না করায় তারা এসব অভিযোগ দিতে পারেন। কাজের বিনিময়ে টাকা নেওয়ার বিষয় আমার সঙ্গে নেই।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। এখন পর্যন্ত মাউশি থেকেও কোনো নির্দেশনা পাইনি।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সাংবাদিকেদের বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। সত্যতা পেলে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’