বাংলাদেশি পণ্যের ৯৭ শতাংশে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিল চীন

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ ও চীনের পতাকা, ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও চীনের পতাকা, ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের শুল্ক পণ্যের ৯৭ শতাংশে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিল চীন সরকার। এ বছরের ১ জুলাই থেকে এ সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সরকারের অর্থনৈতিক কূটনীতির অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ করে চীন সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়। এ অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের স্টেট কাউন্সিলের ট্যারিফ কমিশন সম্প্রতি এ সুবিধা দিয়ে নোটিশ জারি করে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বাংলদেশি ৫১৬১টি পণ্য এ শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় থাকবে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চীন থেকে ‍এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের আওতায় ৩০৯৫ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে। সেই সুবিধার বাইরে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ৯৭ শতাংশই এ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। ফলে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় বাংলাদেশকে চীনের পক্ষ থেকে ৮২৫৬ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হলো।

বিবৃতিতে বলা হয়, চীন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার। গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার বিপরীতে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নীচে।
বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধির মাধ্যমে চীনের সাথে বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সার্বিক দিক-নির্দেশনায় এবং বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীনের নেতৃত্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে চীনের সাথে বিনিময় পত্রে স্বাক্ষর করে। এ ছাড়াও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও অগ্রধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে ভুটান, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার সাথে পিটিএ চূড়ান্ত করা শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার জোটের দেশগুলো, পূর্ব ইউরোপের বাণিজ্য জোটের সাথে এফটিএ স্বাক্ষরের ব্যাপারে আলোচনা চলছে।

চীন ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে (এলডিসি) শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার সুবিধা দিচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এ সুবিধার আওতায় বাংলাদেশসহ ৩৩টি স্বল্পোন্নত দেশ, যাদের সাথে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, তাদের চীনের ৬০ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু চীন প্রদত্ত এ সুবিধা বাংলাদেশের রফতানি সক্ষমতার অনুকূল কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় যে বাংলাদেশের রফতানি সক্ষমতা আছে এমন অনেক পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের জন্য রফতানি সম্ভাবনাময় পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিতে চীনকে অনুরোধ করে। যদিও চীন ২০১৩ সালে শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৪০টিতে উন্নীত করে। এর মধ্যে ২৪টি স্বল্পোন্নত দেশ, যারা ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারির পূর্বে চীনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তারা ৯৭ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে, ১২টি স্বল্পোন্নত দেশ যারা ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারির পরে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তারা ৯৫ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে এবং বাংলাদেশ ও মৌরিতানিয়া মাত্র ৬০ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে এ সুবিধা পেয়ে আসছিল। বাংলাদেশের অনুরোধে এবার বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ রফতানি পণ্যে ট্যারিফ লাইনে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে চীন। তবে শর্তারোপ করে যে স্বল্পোন্নত দেশকে প্রদত্ত সুবিধা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের আওতায় স্বল্পোন্নত দেশের জন্য বিদ্যমান সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না।

উল্লখ্য, চীনের আরোপিত শর্ত মেনে স্বল্পোন্নত দেশের জন্য প্রদত্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণ করবে কিনা সে বিষয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনের মতামত গ্রহণ ও তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের জন্য প্রদত্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা নিতে চীনের সাথে আলোচনা শুরু করে। দীর্ঘ আলোচনার পর গত মঙ্গলবার (১৬ জুন) চীন বাংলাদেশকে শর্তহীন ভাবে ৯৭ শতাংশ পণ্যে (অর্থাৎ সর্বমোট ৮,২৫৬টি পণ্য) শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিতে আদেশ জারি করে।

চীন ১৪০ কোটি জনসংখ্যার একটি বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে এ দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, একই উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনের বাজারে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পেলে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের রফতানি সক্ষমতা সম্পন্ন প্রায় সব পণ্য চীনে শুল্কমুক্ত কোটামুক্তভাবে প্রবেশের সুবিধা পাবে। ফলে, চীনে উল্লেখযোগ্য ভাবে রফতানি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়, যা বাংলাদেশের বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।