পুঁজিবাজার গতিশীল করতে আইপিও’র সংস্কার জরুরি

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিএমবিএ নেতাদের সঙ্গে সিএমজেএফ কার্যনির্বাহী কমিটির মতবিনিময় সভা/ছবি: বার্তা২৪.কম

বিএমবিএ নেতাদের সঙ্গে সিএমজেএফ কার্যনির্বাহী কমিটির মতবিনিময় সভা/ছবি: বার্তা২৪.কম

অস্থিরতা কাটিয়ে দেশের পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে গতিশীল করতে আইপিও (প্রাথমিক শেয়ার) প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা জরুরি। এক্ষেত্রে বিদ্যমান সময় সীমা কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে কোম্পানির অডিট রিপোর্ট (নিরীক্ষা প্রতিবেদন) হতে হবে স্বচ্ছ।

সোমবার (৩ ফেব্রয়ারি) বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নেতাদের সঙ্গে পুঁজিবাজারের রিপোর্টারদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট’স ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যনির্বাহী কমিটির মতবিনিময় সভায় এসব বিষয়ে উঠে আসে।

বিজ্ঞাপন

বিএমবিএ’র কার্যালয়ে এ সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান, সিএমজেএফের সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল, বিএমবিএ’র সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ মতিন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনিরুজ্জামান, অর্থ সম্পাদক এয়ার কমোডর (অব.) আবু বকর, কার্যনির্বাহী সদস্য মাহবুব হোসেন মজুমদার এবং মো. ওবায়েদুর রহমান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশে সেকেন্ডারি মার্কেট বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু ভাল কোম্পানি না এলে বাজারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। ফলে আইপিওতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে অস্থিরতা চলছে। এজন্য আইপিও প্রক্রিয়া দায়ী। এ কারণে আইপিওতে নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, বাজার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক কথা বলা হয়। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল।যেমন- ২০১০ সালের পর বাজারে ফোর্সড সেল (বাধ্যতামূলক শেয়ার বিক্রি) বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। যে কারণে ১৫ হাজার কোটি টাকার নেতিবাচক ইক্যুইটি তৈরি হয়েছে। তারমতে, কোয়ালিটি সম্পূর্ণ কোম্পানির কথা আসছে। এই ধরনের কোম্পানির একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করা দরকার।

তিনি আরও বলেন, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাজার এক ধরনের অবস্থার মধ্যদিয়ে চলেছে। তখন এতবেশি অস্থির ছিল না। কিন্তু ২০১৮-২০১৯ সালে এসে বেশি অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম হল ২ বছরে অনেকগুলো অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (লিজিং কোম্পানি) বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। এছাড়াও গ্রামীণফোনের সঙ্গে জটিলতায় বাজারে প্রভাব পড়েছে। তারমতে, গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম ১ টাকা কমলে সূচক আড়াই থেকে ৩ পয়েন্ট কমে। এছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১ হাজার থেকে ১২শ’ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।

হাসান ইমাম রুবেল বলেন, বাজারে ভাল আইপিও আনার ক্ষেত্রে মার্চেন্ট ব্যাংকের ভুমিকা রয়েছে। তাদেরকে সঠিকভাবে এই দায়িত্ব পালন করা উচিত। তারমতে, দেশের নীতি নির্ধারকদের বাজার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এক ধরনের সমস্যা রয়েছে। কারণ তারা বাজার বলতে সেকেন্ডারি মার্কেট বুঝে। এমনকি অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও কেউ কেউ আইপিও বন্ধ করে দিতে বলেছে।

রিয়াদ মতিন বলেন, আগের চেয়ে বর্তমানে কোম্পানিতে স্বচ্ছতা এসেছে। ১৯৯৬ সালের পর কোম্পানি হলেও তালিকাভুক্তি সম্ভব ছিল। ২০০০ সাল পর্যন্ত এ অবস্থা ছিল। এরপর পরিবর্তন আসে। বর্তমানে আইপিওর ক্ষেত্রে আরও কঠোরতা এসেছে। অনেকগুলো দিক পরিপূর্ণ করতে হয়। এরপরও আমরা সব ভাল কোম্পানি আনতে পেরেছি, এমনটা বলা যাবে না।

তিনি বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কর্পোরেট অ্যাডভাইজারিও করতে হয়। এছাড়াও কোম্পানির অডিট রিপোর্টের ক্ষেত্রে ফাইন্যান্সিয়াল রির্পোটিং কাউন্সিলকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

মনিরুজ্জামান বলেন, আইপিও আনার পদ্ধতিতে সংস্কার আনতে হবে। কারণ বর্তমানে কোনো কোনো আইপিওতে দুই থেকে তিন বছর সময় লেগে যায়। সামগ্রিকভাবেই সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও কোম্পানির বোর্ডে বিভিন্ন গ্রুপের আধিপত্য থাকে। অনেক শেয়ার নিয়েও বাহির থেকে কাউকে বোর্ডে ঢুকতে দেয়া হয় না।

মাহবুব মজুমদার বলেন, সুশাসনে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। কারণ ভারতে ২২টি স্টক এক্সচেঞ্জ সেখানে কোনো কোম্পানি তিন বছর লভ্যাংশ না দিলে, ওই কোম্পানিকে তালিকাচ্যুৎ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ এই নিয়ম নেই।

তিনি আরও বলেন, দেশে আইপিও প্রক্রিয়া অনেক জটিল। প্রতিটি আইপিওর ক্ষেত্রে ২৯৬টি তথ্য দিতে হয়। তারমতে, কিছু গ্রুপ রয়েছে, যাদের অন্যান্য কোম্পানি ভাল, কিন্তু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি খারাপ। এটি যৌক্তিক নয়। এ সময়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বাজারের উন্নয়নে মার্চেন্ট ব্যাংকারদের ভূমিকা ও করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়।