মেলায় ব্যস্ততা বেড়েছে বিক্রেতাদের
মাসব্যাপী শুরু হওয়া ২৫ তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এখন প্রায় শেষের দিকে। মেলার জন্য বরাদ্দ সময় অনুযায়ী শেষ হলে কেনাকাটার জন্য দর্শনার্থীদের হাতে সময় আছে আর মাত্র ১০ দিন। তাই মেলা প্রাঙ্গণ খোলার পর থেকেই চলে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। বেচাকেনায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ২০তম দিনে দুপুরের পর থেকেই মেলায় দর্শনার্থীদেরও ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায় শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীরা মেলায় আসছে। কেনাকাটাতেও কার্পণ্য করছে না তারা।
বিরামহীন ব্যস্ততা বেড়েছে বিক্রেতাদের। দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছে না তারা। শুরুর দিকে যেসব স্টলে বিক্রি একেবারেই ছিল না সেসব স্টলেও এখন বিক্রি চলছে পুরোদমে।
কিছু কিছু স্টলে মেলা শুরুর কয়েকদিন পর থেকেই পণ্য সামগ্রীর ভালো বিক্রি চলছে। এরমধ্যে বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্য যেমন- অ্যালুমিনিয়ামের ক্রোকারিজ পণ্য, প্লাস্টিক-মেলামাইন পণ্য এবং ফুড আইটেমের প্রতি ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগ্রহ শুরু থেকেই বেশি। মেলার এই শেষ অংশেও ক্রেতারা বেশি কিনছেন নন স্টিক ফ্রাইপ্যান, প্রেশার কুকার, ভেজিটেবল কাটার, জুস মেকার, প্লাস্টিকের বক্স-বালতিসহ গৃহস্থালির দেশ-বিদেশি নানান সামগ্রী। এছাড়াও তরুণীদের আকর্ষণে রয়েছে প্রসাধনী পণ্য, ইন্ডিয়ান জুতা, অর্নামেন্টস সহ বিভিন্ন পণ্য।
সোমবার বিকেলে বাণিজ্য মেলা ঘুরে দেখা যায়, সবার হাতে হাতে ব্যাগ। কিছু না কিছু কিনছেনই দর্শনার্থীরা। এদিকে ক্রোকারিজ পণ্যের দোকানগুলোতে বাহারি সব তৈজসপত্রের পসরা। নিত্য নতুন ডিজাইনের এসব পণ্য আকর্ষণ করছে ক্রেতা- দর্শনার্থীদের। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্যাভিলিয়নগুলোতে একবার হলেও ঘুরে দেখছেন নারী দর্শনার্থীরা। সংসারের কাজে দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্যের পসরা থাকায় আনাগোনা বেশি নারীদেরই। এদিকে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও দেখছে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্য।
এদিকে বিভিন্ন ফুড আইটেমের স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোতে বিভিন্ন ছাড় এবং বান্ডেল অফারে পণ্য কিনছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। এরমধ্যে বিস্কুট, নুডুলস, চকলেট, জুস, সুপ, চিপস এবং আচারের দোকানে তাদের আগ্রহ বেশি।
দর্শনার্থীদেরকে পণ্য আকর্ষণে ত্রুটি রাখছেন না বিক্রয়কর্মীরা। কোন পণ্যে কি ছাড়, কি কিনলে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে এমন বিভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছেন তারা।
বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, সহজলভ্য এবং অনেক ছাড়ে পণ্য বিক্রি হচ্ছে বলে দর্শনার্থীরা মেলায় কেনাকাটা করছেন। তবে সন্ধ্যার পর থেকে ভিড় আরো বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
ক্রেতা-দর্শনার্থীরা জানান, দাম একটু বেশি হলেও বিভিন্ন বাহারি ডিজাইনের দেশি-বিদেশি জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে বলে মেলা থেকে কেনার আগ্রহ বেশি। তবে অনেকের অভিযোগ আন্তর্জাতিক নাম হলেও পণ্যের মানের ব্যাপারে তা লক্ষ্য করা হচ্ছে না। বিভিন্ন স্টলেই বিক্রি হচ্ছে নিম্নমানের পণ্যসামগ্রী। যা গাউছিয়া নিউমার্কেটের ফুটপাতেও পাওয়া যায়।
মিনারা হক নামের মিরপুর থেকে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, আসলে জব করি বলে সময় পাওয়া যায় না। তবে আজ অফিসে একটা প্রোগ্রাম থাকার কারণে অর্ধবেলা অফিস ছিল। তাই মেলায় চলে এলাম। এর আগে একদিন এসেছিলাম কিন্তু কিছুই কেনা হয়নি শুধু ঘুরে দেখে গিয়েছি। আজ কিছু কেনাকাটার ইচ্ছে আছে। তবে সেটা সংসারের টুকিটাকি জিনিস।
রাবেয়া বেগম নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, সংসারের জিনিসপত্র যা কেনার গত সপ্তাহেই আমার হাজবেন্ডের সাথে এসে কিনে নিয়ে গিয়েছি। ঐদিন বাচ্চাদেরকে আনা হয়নি। আজকে ওদেরকে সাথে এনেছি ওদের জন্য খাবার দাবার কিছু কিনব।
ডিজনি ইতালির প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মী দিল মোহাম্মদ জানান, এই স্টল থেকে অ্যাপলের একটি চুলা কিনলে ফ্রাইপ্যান, ওয়াশিং মেশিনসহ দেওয়া হচ্ছে দশটি উপহার। একটি চুলার সাথে এত দামী দামী উপহার দেয়ার কারণ জানতে চাইলে এ বিক্রয় কর্মী বলেন, মেলা উপলক্ষে কোম্পানি এই সুযোগ দিয়েছেন। ক্রেতারা যেন কোনোভাবেই খালি হাতে না যায় আমরা সেই চেষ্টাই করছি।
কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস স্টলের বিক্রয়কর্মী শান্ত জানান, তাদের স্টলের প্রায় সব পণ্যের সাথেই কিছু না কিছু ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। অনেক ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে সন্ধ্যার দিক থেকে কোনো দিকে তাকানোর সময় পান না তারা।
প্রাণের ৫১ নাম্বার প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নের সামনে এক বিক্রয়কর্মী সামনে কিছু পানির বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সবাইকে বলছেন এসএমএস করলেই পানি ফ্রি।
জানতে চাইলে ফয়সাল নামের বিক্রয়কর্মী বলেন, প্রচার এর জন্য আমরা পানি ফ্রি দিচ্ছি। পিডিডব্লিউ লিখে স্পেস দিয়ে নাম লিখে ২৮৫৮৫ নাম্বারে মেসেজ পাঠালেই পানি ফ্রি দেওয়া হচ্ছে।