পেঁয়াজ আমদানির আড়ালে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

খালাস করা হচ্ছে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ, ছবি: বার্তা২৪.কম

খালাস করা হচ্ছে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ, ছবি: বার্তা২৪.কম

মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির নামে অর্থ পাচার করেছে ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, বৈধ প্রক্রিয়ার চেয়ে অবৈধভাবে সর্বশেষ তিন মাসে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছে তারা। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে বেশি দামে আমদানিকৃত পেঁয়াজের ক্রয়মূল্য কম দেখিয়ে বা আন্ডারইনভয়েসিং এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদন অনুসারে, গত নভেম্বরে মিয়ানমারের বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ১৩৪ টাকা। অথচ আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য দেখানো হয়েছে ৪৩ টাকা। অর্থাৎ কেজি প্রতি ৯১ টাকা কম আমদানি মূল্য দেখানো হয়েছে। একইভাবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরেও ২৫ থেকে ৪০ টাকা কম মূল্য দেখানো হয়েছে।

আরও বলা হয়, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যবসায়ীরা সেপ্টেম্বর থেকে আন্ডারইনভয়েসিং করেছেন, কেননা সেসময় মিয়ানমারের বাজারের পেঁয়াজের কেজি ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের কেজি ৪৩ টাকা ঘোষণা দেয়, যা প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ আমদানিকারক এক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং করেছেন।

শুধু তাই নয়, মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ প্রতি মেট্রিক টন ৫০০ মার্কিন ডলার ঘোষণায় আমদানি হয়েছে। প্রকৃত অর্থে মেট্রিক টন প্রতি ১২০০ মার্কিন ডলার ক্রয় করেন আমদানিকারকরা। অর্থাৎ মেট্রিক টন প্রতি প্রায় ৭০০ ডলার আন্ডারইনভয়েসিং হয়েছে। এই আন্ডারইনভয়েসিং এর টাকা আমদানিকারকরা ব্যাংকিং চ্যানেল কিংবা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন। অর্থাৎ মিয়ানমার হতে পেঁয়াজ আমদানির আড়ালে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়েছে।

সম্প্রতি অনিয়ম বা মজুদ খতিয়ে দেখতে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ১০০০ মেট্রিকটন আমদানি করেছে এমন ৪৩ জন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চিত্র পেয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে-মেসার্স দিপা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আরএম এগ্রো, মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স বিএইচ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, জগদিশ চন্দ্র রায়, মেসার্স সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ, একতা শস্যভাণ্ডার, মেসার্স ফুল মোহাম্মদ ট্রেডার্স, মেসার্স ফারাহ ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ, হামিদ এন্টারপ্রাইজ, আলি রাইস মিল, নাচোল, খান টেডার্স, এসএম কর্পোরেশন,মেসার্স গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রায়হান এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সোহা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মরিয়াম এন্টারপ্রাইজ, নুর এন্টারপ্রাইজ, শামিম এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স খান ট্রেডার্স, মেসার্স এমআর ট্রেডার্স, ডিএ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স টাটা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স হুদা এন্টারপ্রাইজ, আরডি এন্টারপ্রাইজ, জনী এন্টারপ্রাইজ, মাহি অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স মুক্তা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রায়হান ট্রেডার্স, মেসার্স সাইফুল এন্টারপ্রাইজ, রিজু-রিতু এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স জাবেদ অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স আলম অ্যান্ড সন্স, নিউ বড়বাজার শপিং মল, মেসার্স রচনা ট্রেডার্স, এসএস ট্রেডিং ছোট হাজি মার্কেট, সুপ্তি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ব্রাদার্স ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, আল মদিনা স্টোর, লামাবাজার, বি কে ট্রেডার্স, ধ্রুব ফারিয়া ট্রেডার্স, মেসার্স সালাহ ট্রেডার্স, মেসার্স ফিরোজ এন্টারপ্রাইজ, সাদ ট্রেডার্স, আলিফ এন্টারপ্রাইজ প্রমুখ।

এনবিআর-এর তথ্য মতে, বছরে দেশের মানুষের ২৪ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। তার মধ্যে এ বছর ২৩ দশমিক ৩০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপণনের বিভিন্ন পর্যায়ে নষ্ট হয়।

ফলে কয়েক বছরের চাহিদা পূরণে আরও ৩ দশমিক ৬৪ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই তিন মাসে অন্তত ১৬৭ হাজার ৮০৬ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। ৩৪০ পেঁয়াজ ব্যবসায়ী দুই হাজার ৪০৯টি পণ্যচালানের মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করে। কিন্তু হঠাৎ করে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের সঙ্কট শুরু হয়।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, একটি প্রতিবেদন এসেছে। তবে তাতে কি আছে তা দেখা হয়নি।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক শহিদুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।