‘পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি কমায় ব্যবসায়ীদেরও দায় আছে’

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন টিপু মুনশি, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন টিপু মুনশি, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

পোশাক খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমায় ব্যবসায়ীদেরও দায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বুধবার (০৬ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পোশাক শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।

পোশাক শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি কমার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের দায় আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের একটা সমস্যা আছে, তারা নিজেরা কাজ পেতে দাম কমিয়ে দেন। এর মাধ্যমে তারা পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে নিচ্ছেন যে সঠিক দামও পাচ্ছেন না। ফলে দামের ওপর প্রভাব পড়ছে। আমি নিজেও একজন ব্যবসায়ী, তাই বিষয়টি জানি। আর এর প্রভাব পড়ছে মোট রফতানি আয়ের ওপর। তবে তার চেয়েও বড় কথা, আমাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কিছু সুবিধা দরকার। যদি সাত থেকে ১০ দিন ক্লিয়ারেন্স পেতেই সময় লেগে যায়, বায়ার যদি দেখে, পণ্য ডেলিভারি নিতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ দিন বেশি লাগে, তাহলে সঠিক দাম দিতে চায় না।’

বিজ্ঞাপন

‘পোশাক শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এনবিআর চেয়ারম্যান ও অর্থসচিব সমস্যাগুলো শুনে সমাধানে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের রেডিমেট গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে যে কম প্রবৃদ্ধি, সেটা কীভাবে বাড়ানো যায়, সেজন্য নেতৃবৃন্দ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা কাজ করবেন। পোশাক শিল্পে কিছু সমস্যা হয়, যেমন পণ্য খালাসে বিলম্ব, জাহাজীকরণের জন্য অনেক সময় লাগে, আর বন্দরে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়, এছাড়া অনেক কারণ রয়েছে। এসব ব্যাপারে কথা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের পরামর্শগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব। তৈরি পোশাক খাতে গত তিন মাসে প্রবৃদ্ধি কমেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে,’ যোগ করেন মন্ত্রী।

ডলারের দাম নিয়ে সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ডলারের দাম নিয়ে সমস্যার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর ডলার কেনা এবং বিক্রির মধ্যে যে পার্থক্য আছে, সেটাও আমাদের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ তুলে ধরেছেন। ডলার পুনর্মূল্যায়নের কথা বলেছি। সেগুলো এনবিআর চেয়ারম্যান ও অর্থসচিব দেখবেন। আর ব্যাংক সুদ একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে গেছে, বিশেষ করে প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে। গতকাল একনেকের বৈঠকে এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কীভাবে সেটি কমানো যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। কারণ প্রাইভেট ব্যাংকগুলো ১২ থেকে ১৪ শতাংশ ইন্টারেস্ট নেয়। আরেকটি বিষয় আলোচনা হয়েছে, দেশকে এগিয়ে নিতে রাজস্ব আয় সংগ্রহ দরকার। আমাদের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ট্যাক্সের পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। যাদের আয়কর দেয়ার সক্ষমতা আছে, কিন্তু দিচ্ছেন না, তারা ট্যাক্স দিলে নিয়মিত যারা আয়কর দেন, তাদের ওপর চাপ কমবে।’

‘অর্থসচিব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে কিছু বিষয় দেখবেন। এনবিআরের চেয়ারম্যান পরামর্শ দিয়েছেন যে ছোটখাটো কোনো সমস্যা যখনই আসবে, তখনই তার কাছে গেলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করবেন,’ যোগ করেন মন্ত্রী।

পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি কমার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগিতা, বায়ারদের ইচ্ছা এবং আমরা নিজেরা কম দাম চাওয়ায় প্রবৃদ্ধি হারাচ্ছি। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সব দিক থেকেই চেষ্টা করতে হবে। ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে যে সাহায্য চেয়েছেন, সেগুলো বিবেচনায় নিলেই আমাদের প্রতিযোগিতা বাড়বে বলে আশা করি। ক্লিয়ারেন্সের জন্য অনেক ফ্যাক্টরিকে প্লেনে পণ্য পাঠাতে হয়। প্লেনে একবার পণ্য পাঠালে সেই কোম্পানির সারা বছরের সব প্রফিট চলে যাবে। তবে সরকার অবশ্যই এটি বিবেচনায় নেবে। নিজেরা আন্ডার কাট না করে, আমাদের ব্র্যান্ড ভালো করা দরকার। বাজারে গ্লোবাল পরিচিতি বাড়ানো দরকার। কোয়ালিটির ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। সবাই চেষ্টা করলে আগামীতে হয়ত ইমপ্রুভ করবে। কিন্তু কবে নাগাদ, সেটা বলা মুশকিল।

পেঁয়াজের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রসিকতা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টসের মধ্যে পেঁয়াজ ঢুকিয়েন না। এমনিতেই ঝাঁজে বাঁচছি না। পেঁয়াজ পরিস্থিতি ইমপ্রুভ করছে আশা করি।

এ সময় অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হকসহ পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী নেতা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং এনবিআরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।