মাংস আমদানিতে ধস নেমেছে গাবতলী পশুর হাটে

  • আকরাম হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গাবতলী হাটে গরু বেঁধে রাখা হয়েছে, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

গাবতলী হাটে গরু বেঁধে রাখা হয়েছে, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

গরু, মহিষ, ছাগলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গবাদি পশু বেচা-কেনার জন্য দেশের অন্যতম বড় হাট হচ্ছে রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট। অতীতে রাজধানীবাসীর মাংসের চাহিদার অধিকাংশ সরবরাহ হতো ঐতিহ্যবাহী এ হাট থেকে।

তবে সম্প্রতি নানা প্রতিবন্ধকতা পার করছে এ হাটের ব্যবসায়ী ও হাট ইজারাদার পক্ষ। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন রেকর্ড পরিমাণ কমেছে গবাদি পশু বিক্রি।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিনে মাত্র ৩০ থেকে ৪০টি গরু বিক্রি হয়। মহিষ বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০টির মতো। যা অতীতের চেয়ে কয়েক গুণ কম।

got
গাবতলী হাটে ছাগল বেঁধে রাখা হয়েছে, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ রয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশি গরুর বাজারে। ভারতের সঙ্গে সরাসরি ব্যবসা বন্ধ থাকায় দেশি গরুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকদিন ধরে মাংসের দাম নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তাই গরুর মাংস কেনা কমিয়েছেন তারা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদেশ থেকে মাংস আমদানি। দেশের বাইরে থেকে আমদানিকৃত মাংসের দামও বেশ কম। এসব আমদানিকৃত মাংস হোটেল ব্যবসায়ী এবং কাঁচা মাংসের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। মাংস আমদানির ফলে গরুসহ অন্যান্য গবাদি পশুর ব্যবসা ও খামারিদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে জানান তারা।

রাজধানীতে মাংসের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, তার বড় একটি অংশ পূরণ করছে দেশের বাইরে থেকে আমদানিকৃত মাংস। অভিযোগ রয়েছে, দেশি গরুর মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে আমদানিকৃত মাংস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। যার কারণে গাবতলী পশুর হাটসহ রাজধানীর আশপাশের হাটগুলোতে পশু বেচা-কেনা কমেছে।

cow
গাবতলী হাটে গরু বেঁধে রাখা হয়েছে, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

গরু ব্যবসায়ী আলম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ায় দেশি গরুর দাম অনেক বেড়েছে। এদিকে আবার দেশের বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে গরু পুষতে খামারিদের অনেক খরচ হয়। সে হিসেবে দেশি গরুর মাংসের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এখন দেশের বাইরে থেকে যে মাংস আসছে, তার দাম দেশি গরুর মাংসের থেকে কম। এসব কারণে বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। আগের তুলনায় বেচা-কেনা অনেক কমে গেছে।

রোববার (২৭ অক্টোবর) গাবতলী পশু হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটের বিভিন্ন স্থানে গরু, মহিষ, ছাগল বেঁধে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের কর্মচারীরা এসব পশুর পরিচর্যা করছেন। হাটে কোনো ক্রেতা নেই। এদিন সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মাত্র একটি গরু বিক্রি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

গাবতলী হাটের হাসিল ঘরের ক্যাশিয়ার মোহাম্মদ সোলাইমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আগে যেসব কসাই ও হোটেল ব্যবসায়ীরা এখান থেকে গরু নিতেন, তারা এখন আর গরু নিচ্ছেন না। নিলেও খুব কম। দেশি গরুর মাংসের চেয়ে আমদানিকৃত মাংসের দাম কম হওয়ায় তারা আমদানিকৃত মাংসই কিনছেন।

cow
গাবতলী হাটে গরু বেঁধে রাখা হয়েছে, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

গাবতলী হাট পরিচালক আনোয়ার হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, এখন গাবতলী হাটের অবস্থা ভালো না। আগের থেকে গরু বেচা-কেনাও কম। বর্তমানে বিদেশ থেকে প্যাকেটজাত মাংস আসছে। মানুষ সেগুলোই খাচ্ছেন। ফলে আমাদের গরুর চাহিদা কমে গেছে। সারা দিনে ৩০ থেকে ৪০টা গরু বিক্রি হয়। মহিষ বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০টা।

তিনি মনে করেন, বাইরে থেকে মাংস আমদানি বন্ধ হলে দেশের গরুর চাহিদা বাড়বে। আবার গাবতলী হাটও আগের মতো জমজমাট হবে।