রাশিয়ার সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি জরুরি: বাণিজ্যমন্ত্রী

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সেমিনারে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

সেমিনারে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে রাশিয়ার সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) বা মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি বলেছেন, ‘এফটিএ করার ব্যাপারে আমরা খুবই সিরিয়াস। এটি করতে পারলে আমরা চোখ বুঝে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় করতে পারব। রাশিয়া খুব ভালো বাজার, তাদের ফ্যাশনেবল জিনিস কেনার মতো অর্থ রয়েছে। তাই যেভাবেই হোক আমাদের এফটিএ করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত ‘ফস্টারিং গ্লোবাল ফ্রি ট্রেড রিলেশন্স’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্যিক জোট মার্কোসার (ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ের সমন্বয়ে গঠিত বাণিজ্যিক জোট)। এটা ৫০ কোটি মানুষের বাজার। এই বাজার আমাদের ধরতেই হবে। এখানে কতগুলো সমস্যা রয়েছে সেগুলো কীভাবে মেটানো যায়, এ জন্য আমি বিশেষজ্ঞদের কাছে মতামত আহ্বান করছি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে এফটিএ করার ব্যাপারে।’

তিনি বলেন, ‘মার্কোসার বাজারে যদি তৈরি পোশাকের মার্কেট ধরতে পারি, তাহলে আমরা চোখ বন্ধ করে ৪-৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় করতে পারব। যেখানে আমেরিকার বাজারে অনেক কষ্টে ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় করি।’

সেমিনারে বক্তব্য দেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম

টিপু মুনশি বলেন, ‘আমি মার্কোসার সম্মেলনে ব্রাজিলের সঙ্গে তাদের দেশে তৈরি পোশাক রফতানির বিষয়ে কথা বলেছিলাম। কিন্তু তারা বলেছিল, আমাদের দেশে তারা গরুর মাংস রফতানি করবে। পরে দেশে এসে মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। তাই বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তারা মাংস রফতানি করলে আমাদের কতটুকু লাভ, আর আমরা পোশাক রফতানি করতে পারলে আমাদের কতটুকু লাভ। সব কিছু বিবেচনা করে আমাদের এফটিএ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকার বাজারে যে প্যান্ট ১৮-১৯ ডলার, সেখানে রাশিয়া ও ব্রাজিলে ৩৫-৪০ ডলার। প্রায় দ্বিগুণ। শুধু আমাদের মার্কেটে ঢোকার সমস্যা। ট্রানজিট, ট্যাক্সসহ নানা সমস্যা সমাধানে পথ বের করতে হবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টাকা বাড়ানো দরকার, সব ঠিক আছে। কিন্তু পদ্ধতিটা আরও গভীরে যাওয়া দরকার। জমিদারি আমলের মতো লাঠিয়াল বাহিনী পাঠিয়ে দিয়ে টাকা নিয়ে আসো, খাজনা আদায় কর- প্রক্রিয়াটা মনে হয় ঠিক না। ব্যবসায়ীদের প্রবৃদ্ধিটা চিন্তা করতে হবে। এজন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এই মুহূর্তে করেসপন্ডিং ব্যাংক সিস্টেমে যেতে হবে। এজন্য একটা সমন্বয় সেল করা দরকার। আমাদের রফতানি বাড়াতে হলে রাশিয়ার বাজার ধরতে হবে। এজন্য এফটিএ করা জরুরি।’

বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মেয়র বলেছেন, `গুজরাটে তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের ১১ মাস পর ছাঁটাই করা হয়। তাদের দেশে কোনো শ্রমিক ১২ মাস কাজ করতে পারে না। তারা ১১ মাস পর ছাঁটাই করে আবার নিয়োগ দেয়। তারা শ্রমিকদের ঠকিয়ে কম দামে মার্কেট ধরে। তাহলে তাদের বেলায় অ্যাকর্ড অ্যান্ড অ্যালায়েন্স নেই, আমাদের বেলায় কেন? এটা কি সমতার বাজার হলো? এজন্য আমাদের এখনই সোচ্চার হতে হবে, বলতে হবে এসব বিষয়।’

কমনওয়েলথ ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটস অ্যান্ড বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো. হাবীব উল্লাগ ডনের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন- প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার প্রমুখ।