গ্রামীণ-রবি পাওনা: সমাধান কোন পথে

  • ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

গত কিছুদিন ধরে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু গ্রামীণফোন ও রবির কাছে সরকারের পাওনা। দেশের বৃহৎ এই দুটি মোবাইল অপারেটরকে ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা পাওনা পরিশোধ করতে হবে। এই টাকা আদায়ে গ্রামীণ-রবিকে নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আগামীকাল রোববারের (৬ অক্টোবর) মধ্যে এই নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে তাদের।

পাওনা নিয়ে প্রথমে দুই অপারেটরের ব্যান্ডইউথ কমানো হয়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার শুরু হয়। পরবর্তীতে সরকার গ্রামীণফোন ও রবির এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) বন্ধ করে দেয়। এটি বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ কোনো কোম্পানি আর কোনো যন্ত্রাংশ কিংবা নতুন প্যাকেজ চালু করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্তের ফলে অপারেটর দুটির ৪জি সম্প্রসারণের কাজ ব্যাহত হয় আর এতে সরাসরি ভোগান্তিতে পড়ছে গ্রাহকরা।

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি অনেক দিন ধরেই ঝুলে আছে। কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না। এই পাওনা নিয়ে টেলিযোগাযোগ খাতে যখন তোলপাড় চলছে ঠিক তখন সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিষয়টি নিয়ে তিনি অপারেটর দুটির প্রতিনিধি, বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তিনি সপ্তাহ তিনেকের মধ্যে তা সমাধানের আশ্বাস দেন। ওই সময় অর্থমন্ত্রী দুই অপারেটরকে তাদের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছিলেন। এরপর সবাই আশা করছিলেন সমস্যার সমাধান মিলছে।

অপারেটরদের সবার আগে দাবি ছিল কেন অপারেটর দুটির লাইসেন্স বাতিল হবে না - এ মর্মে দেওয়া নোটিশ প্রত্যাহার করা। এরপর তারা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে চিন্তা করবে। কিন্তু শুরুতেই সেই উদ্যোগ হোঁচট খায়।

এরপর গত বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা কমিশনে ইআরডি অফিসে অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠকে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক অংশ নেন। রাত পর্যন্ত চলা ওই বৈঠকেও এ বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি।

ইস্যুটি নিয়ে এ খাতের বাইরে সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট কৌতূহল ছিল। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১২ কোটি গ্রাহকের উদ্বেগ। বিটিআরসির দাবি অনুযায়ী গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আর রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে অপারেটররা বলছে, বিটিআরসি’র করা অডিটই ত্রুটিপূর্ণ। তাই তারা অডিট যাচাইয়ে কমিটি গঠনের আহ্বান জানায়। কিন্তু বিটিআরসি সেই দাবি মানতে রাজি নয়। অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, বিটিআরসি বিলম্ব ফি সুদ মওকুফের বিষয়ে ছাড় দিতে পারে। তবে অপারেটরদের কথা যেখানে অডিটই ত্রুটিপূর্ণ, সেখানে তার ওপর ভিত্তি করে যোগ হওয়া বিলম্ব ফির ছাড় দেওয়ার বিষয়ে তারা ইতিবাচক সাড়া দেয়নি।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে কোনো সমাধান না আসায় সম্প্রতি বিটিআরসির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম কমিশন বৈঠকে অপারেটর দুটির এনওসি’র বিষয়টি আলোচনা ও সিদ্ধান্ত আসার কথা ছিল। কিন্তু সেখানেও কোনো সমাধান আসেনি।

পাওনা নিয়ে বিটিআরসি ও অপারেটরদের দ্বন্দ্ব চলছিল অনেকদিন ধরে। তারা বিষয়টির সমাধানে না গিয়ে আরও জট পাকিয়েছে। শেষ পর্যন্ত গ্রামীণফোন ও রবি মামলা পর্যন্ত করেছে। এ অবস্থায় এই দ্বন্দ্ব মেটাতে মঞ্চে হাজির হন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তিনিও দুই দফা বৈঠক করলেন। বৈঠকগুলোতে কোনো সমাধান আসেনি।

এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের অন্যতম ক্ষমতাধর অর্থমন্ত্রীও যখন বিষয়টি সমাধানে হিমশিম খাচ্ছেন তাহলে এর সমাধান কোন পথে হবে? অচিরেই পাওনার বিষয়ে সমাধান না এলে এতে যেমন এ খাতের ক্ষতি হবে তেমনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছেও এ নিয়ে একটি নেতিবাচক ম্যাসেজ যাবে।