বিআরআই নিয়ে জাতীয় নীতিমালা প্রয়োজন

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সিপিডি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আগত অতিথিরা, ছবি: শাহরিয়ার তামিম

সিপিডি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আগত অতিথিরা, ছবি: শাহরিয়ার তামিম

উন্নয়নের জন্য চীনের বিআরআই প্রজেক্ট গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর সঙ্গে ভূ-রাজনীতিও জড়িত। কেননা অর্থনীতি শুধু অর্থনীতি না, এর সঙ্গে রাজনীতিও আছে।

ভারতবর্ষ এক দিকে, চীন আরেকদিকে আছে। এ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের মধ্যে বাংলাদেশ কী করে একটা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে পারে, এ দুই পরাশক্তিকে একই সঙ্গে কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত রাখা যায়, সেটি কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার জন্য খোলামেলা আলোচনা প্রয়োজন, যাতে সঠিক জাতীয় নীতিমালা নির্ধারণ করা যায়।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ পজিশনিং বাংলাদেশ উইথইন কম্পারেটিভ পার্সপেক্টিভস' শীর্ষক সম্মেলনটির আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।

সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বিআরআই প্রকল্পে যুক্ত হতে হলে চীনের অর্থনীতিটা বুঝে দর কষাকষি করতে হবে। কেননা যখন আমরা দর কষাকষি করব, তখন জাতীয় স্বার্থ সবার আগে বিবেচনা করতে হবে। আর সে জন্য গবেষণা প্রয়োজন। চীনের অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে কী হচ্ছে, তাদের থিংট্যাং কী ভাবছে, সেজন্য কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এর সঙ্গে পার্টনারশিপে যুক্ত করতে হবে। কেননা বিআরআই নিয়ে চীনে প্রচুর গবেষণা হয়েছে।’

সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ‘বিআরআই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমরা শুধু বিআরআইর দিকেই তাকাচ্ছি না। এর বাইরেও আমাদের দেখতে হবে। আমরা শুধু ব্যবসা বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও যোগাযোগ নিয়ে ভাবছি না, আমরা রাজনীতি নিয়েও ভাবছি। কেননা এটাও ভূ-রাজনীতি। ভূ-রাজনীতিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। ক্ষমতার পালাবদল হয়। ক্ষমতা যখন পরিবর্তিত হয়, তখন নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়।’

সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘চীনের উদ্যোগে বিআরআই একটি প্রতিশ্রুতিশীল উদ্যোগ। বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে তার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা রাখে। তবে যে সমস্ত প্রকল্প এসেছে, সে প্রকল্পগুলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ কীভাবে রক্ষিত হচ্ছে, সে প্রকল্পগুলোর যে অর্থায়ন হবে, সে অর্থায়নের ফলে বাংলাদেশ নতুন কোনো দায় দেনা হবে কি না এবং সে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময় পারিপার্শ্বিক আমাদের জলবায়ুর ওপর কী প্রভাব ফেলে, সর্বোপরি এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মহল কতখানি উপকৃত হবে, সে ব্যাপারে নজর দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘বিআরআই নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয় না। অথচ খোলামেলা আলোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় নীতিমালা নির্ধারণ করাটা এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

a

সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মঞ্জুর ইলাহীর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. ফাহমিদা খাতুন। আলোচনায় আরো বক্তব্য দেন অধ্যাপক চেং মিন, ড. শচীন চতুর্বেদী, চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ্জামানসহ অনেকে।

উল্লেখ্য, দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা, টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া, বাজার ভিত্তিক শিল্প রূপান্তর ও অর্থনীতিকে ছড়িয়ে দিতে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) চালু করেছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিন ২০১৩ সালে এ উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। অনেক দেশই চীনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেল্ট অ্যান্ড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ বিআরআইতে সরাসরি যুক্ত না হলেও বিআরআই অন্তর্ভুক্ত কিছু প্রকল্প দেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে।