পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রেখে এডিপি চূড়ান্ত

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, পুরনো ছবি

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, পুরনো ছবি

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত সভায় আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে বরাদ্দের দিক থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে পরিবহন খাত। বিদ্যুৎ, ভৌত অবকাঠামোর পরই সর্বোচ্চ বরাদ্দের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে শিক্ষা ও ধর্ম খাত।

বুধবার (৮ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে মন্ত্রী জানান, সভায় এডিপির এই আকার গ্রহণ করা হয়েছে। এটা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এডিপির পরিমাণ ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ছাড়া, সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বিদেশিদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

এডিপির অগ্রগতির চিত্র তুলে এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান এডিপির অগ্রগতি এপ্রিল পর্যন্ত ৫৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ, টাকায় যার পরিমাণ ৯৬ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। গত বছর এই সময়ে এডিপির অগ্রগতি ছিল ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশ, টাকায় যার পরিমাণ ৮২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন কোন খাতে কতো বরাদ্দ, সেই তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, পরিবহন খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৫২ হাজার ৮০৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ২৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১২ শতাংশ। শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ, টাকায় যার পরিমাণ ২১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১২ লাখ।

বরাদ্দে গুরুত্বের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সব খাতকেই সমান প্রাধান্য দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কৌশলে ২০০৯ সাল থেকে অসম্ভব রকমের উন্নয়ন করতে পেরেছেন, সেই কৌশল থেকে সরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ সেটা বাস্তবসম্মত হবে না।

তিনি বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা; এই চার-পাঁচটা ক্ষেত্রে আমরা ঘোরাফেরা করছি। কারণ এগুলো আমাদের ভালো ফল দিয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া উপরের চার খাতের পরই বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১৭ হাজার ৫৪১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট এডিপির ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৫ হাজার ১৫৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা এডিপির ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ১৩ হাজার ৫৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা এডিপির ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। কৃষি খাতে ৭ হাজার ৬১৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা এডিপির ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পানি সম্পদ খাতে ৫ হাজার ৬৫২ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা এডিপির ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জনপ্রশাসন খাতে ৫ হাজার ২৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা এডিপির ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা ভাঙার জন্য নতুন কোনো পদক্ষেপ থাকছে কি-না, জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, এই প্রবণতা ভাঙার জন্য আমরা চেষ্টা করেই যাচ্ছি। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি) আরও শক্তিশালী করা হবে। মাঠে যে প্রকল্প পরিচালকরা আছেন, তাদেরকে অনেক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয়, তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি গ্রামে থাকছেন। আশা করি, বড় ফল পাবেন। আপনারা বছর শেষে চমকপ্রদ সংবাদ পাবেন।

এডিপি বাস্তবায়নের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে এম এ মান্নান বলেন, আমাদের দৃশ্যমান অগ্রগতি অনেক বেশি। তবে টাকাই হলো রিয়েল রিফ্লেকশন অব এক্সপেনডিচার। আমরা ভীত নই। কারণ আগের বছরও আমরা একইভাবে এসেছি। এ বছর আমরা উন্নতি করেছি। মোটেও ভয় পাচ্ছি না। কারণ আমরা জানি, অনেক বিল পরিশোধ করা হয়নি। অ্যাকাউন্ট অফিসে ঝুলে আছে।